নদী গণনায় ভুলের সুযোগ নাই

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের দিক হইতে বাংলাদেশকে ‘নদীমাতৃক’ আখ্যা দেওয়া হইলেও এই দেশে নদীর সংখ্যা লইয়া বিভ্রান্তি অনেক পুরাতন। খোদ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি স্ব স্ব বিবেচনায় সংখ্যা নির্ধারণ করিতে গিয়া সেই বিভ্রান্তি বাড়াইয়াছে বৈ কমায় নাই। সর্বশেষ দেশের সকল নদী ও জলাশয়ের ‘অভিভাবক’ বিবেচিত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন চলতি বৎসরে ৯০৭টি নদীর তালিকা প্রকাশ করিয়া সংখ্যাসংক্রান্ত বিতর্কে যেন নূতন মাত্রা যুক্ত করিয়াছে। ঐ তালিকায় নদীর সংখ্যা পূর্ববর্তী সংস্থাগুলির তুলনায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অধিক হইলেও উহা যে সঠিক কিংবা চূড়ান্ত নহে, নদী সংরক্ষণসংক্রান্ত নাগরিক সংগঠন ও সংস্থাগুলির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হইয়াছে।
দেখা যাইতেছে, অনেক উল্লেখযোগ্য নদী যেইরূপ তালিকা হইতে বাদ পড়িয়াছে, সেইরূপ এমন কিছু প্রবাহ তালিকাভুক্ত হইয়াছে, যেইগুলিকে ‘নদী’ হিসাবে চিহ্নিত করা কঠিন। নদীর নাম, উৎপত্তি ও পতনস্থল লইয়াও রহিয়াছে বিতর্ক ও বিভ্রান্তি। এই প্রেক্ষাপটে একাধিক বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনের পর্যালোচনা ও প্রতিবেদন উদ্ধৃত করিয়া শনিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ‘ভুলে ভরা নদীর তালিকা’ শিরোনাম অত্যুক্তি হইতে পারে না।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন যদিও ‘কর্মানুগ’ সংজ্ঞা নির্ধারণ করিয়াছে, উহাও সর্বব্যাপ্ত নহে। একই সঙ্গে ইহাও স্মরণে রাখিতে হইবে যে, বাংলা ভাষা এবং বাংলাদেশে প্রচলিত উপ বা আঞ্চলিক ভাষার বিপুল বৈচিত্র্যের কারণে ‘নদী’ আরও যেইসকল নামে পরিচিত, সেইগুলিকেও আমলে লইতে হইবে। সবচাইতে জরুরি তথ্য-উপাত্তের সঠিকতার প্রশ্নে শূন্যসহিষ্ণুতা। নদী রক্ষা কমিশন যেইভাবে, মাঠ প্রশাসনপ্রদত্ত তালিকা সংকলন করিয়া সংখ্যা নির্ধারণ করিয়াছে, বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি তথ্যের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় উহা দুঃসাহসী বটে।
বাংলা প্রবাদে বলা হইয়াছে– ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। আমরা নদী রক্ষা কমিশনকে ঐ আপ্তবাক্য অনুসরণ করিতে বলিব। নদী গণনা করিবার ক্ষেত্রে যেইরূপ সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা নির্ধারণ করিতে হইবে, সেইরূপ সামাজিক গবেষণার নিয়ম ও পদ্ধতিও অনুসরণ করিতে হইবে। আর প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নিরীক্ষণ ও পুনর্নিরীক্ষণ ব্যতীত আনুষ্ঠানিক প্রকাশও উচিত হইবে না।
আমরা দেখিতে চাহিব– নদী রক্ষা কমিশন দেশের নদী গবেষক, নদী সংরক্ষণকর্মী ও নদীসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সহিত আলোচনাসাপেক্ষে নদীর সংখ্যা নির্ধারণে উদ্যোগী হইয়াছে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ গ্রহণ করায় নদী কমিশনকে আমরা নিশ্চয়ই সাধুবাদ জানাই; কিন্তু নিছক দক্ষতা ও আন্তরিকতার অভাবে উহা যাহাতে আরেকটি বিভ্রান্তির উৎস হইয়া না থাকে।