ঢাকা সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩

অন্যদৃষ্টি

বিলাসবহুল প্রকল্পই উন্নয়ন নয়

বিলাসবহুল প্রকল্পই উন্নয়ন নয়

মো. হাছান

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

উন্নয়ন বলতে সাধারণত বোঝানো হয় নাগরিক ও দেশের সার্বিক অগ্রগতি। তা এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন বা ভৌত অবকাঠামো, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত, সামাজিক ও জনসংখ্যার উপাদানগুলোর সংযোগ ঘটে। উন্নয়নের উদ্দেশ্য হলো জনগণের জীবনযাত্রার স্তর ও মানের উন্নয়ন এবং পরিবেশের কোনোরূপ ক্ষতিসাধন না করে স্থানীয়, আঞ্চলিক আয় বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সম্প্রসারণ। কিন্তু এমন উন্নয়ন কি দেশে চলছে?

বর্তমানে সময়ে উন্নয়ন বলতে আমাদের বোঝানো হচ্ছে, কিছু মেগা প্রকল্প এবং সর্ববৃহত্তম বাজেট। আমাদের তোতা পাখির মতো শেখানো হচ্ছে, উন্নয়ন হচ্ছে বলেই দেশে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও কর্ণফুলী টানেলের মতো বৃহৎ প্রকল্পগুলো হচ্ছে। আর এগুলো পেতে নাগরিকদের নানা কষ্ট স্বীকার করতে হচ্ছে। বর্তমানে জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় তেমনই একটি কষ্ট।

এটা ঠিক, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় উন্নত দেশের তুলনায় কম; ফলে সঞ্চয় ক্ষমতা কম। মূলধনের স্বল্পতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে একটি অন্তরায়। স্বল্প আয়, জীবনযাত্রার নিম্নমান এবং দেশে কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্রের অভাবে বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষ কারিগরি শিক্ষা লাভে সমর্থ হয় না। ফলে প্রযুক্তিবিদ্যার অভাবে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর পূর্ণ ব্যবহার হয় না। বাংলাদেশে শিল্পোন্নয়নের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির জন্য বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হয়। এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হলে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন। অন্যদিকে, বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ কম। ফলে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন সম্ভব হয় না। এতে উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়। বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব রয়েছে। এ কারণেও সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বিদেশ থেকে এত এত ঋণ করে এই যে অতি উচ্চমূল্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে; জনজীবনে তার কী প্রভাব? সবাই জানেন, সেই ঋণ শোধ করতে গিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়ছে। এর অনিবার্য পরিণামে দেশে ডলার সংকট হচ্ছে, যা নিত্যপণ্যের আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং মানুষকে অতি উচ্চমূল্যে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সে পণ্য কিনতে হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বিবিসি বাংলার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে বলেছিলেন, অর্থনীতি ঠিকমতো চলছে কিনা– তিনটি পক্ষ তা ভালোমতো বুঝতে পারছে। ‘তারা হলো জনগণ, কারণ তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের খাওয়া কমাতে হচ্ছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। আরেক পক্ষ ব্যবসায়ীরা, যারা ডলারের অভাবে এলসি খুলতে পারছেন না, আমদানি হচ্ছে না, ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। আর সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারেন সরকারি কর্মকর্তারাই। কারণ রিজার্ভ কমা, দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়া, মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকা– এসব তো সরকারি পরিসংখ্যানেই দেখা যাচ্ছে।’

কিন্তু সেটা সমাধান, দ্রুত অবসানের তো কোনো লক্ষণ কোথাও দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া দক্ষ উদ্যোক্তার অভাব, সংকীর্ণ বাজার, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রথা, কৃষি ও শিল্প খাতের অনগ্রসরতা, অনুন্নত আর্থসামাজিক কাঠামো, প্রাকৃতিক সম্পদের অসম্পূর্ণ ব্যবহার, জনসংখ্যার চাপ ইত্যাদি কারণেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বহুলাংশে প্রত্যাশিত গতি পাচ্ছে না।

সবশেষে বলা যায়, অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে সরকারকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে, দেশের মেগা প্রকল্প ও বৃহৎ বাজেট মানেই উন্নয়ন নয়। দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জীবনযাত্রা এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন উন্নয়নের অংশ। নাগরিকদের নৈতিকতার উন্নয়ন ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ব্যতীত উন্নয়ন অর্থহীন।

মো. হাছান: শিক্ষার্থী, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া hassan633186@gmail.com 

আরও পড়ুন