বর্ণচোরা ‘র্যাব-ডিবি’র রহস্য কী

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, উত্তরা, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে র্যাব বা ডিবির ‘জ্যাকেট’ পরিধান করিয়া ব্যস্ত সড়ক হইতে মোটা অঙ্কের অর্থ ও স্বর্ণালংকার ছিনতাইয়ের সংবাদটি উদ্বেজনক হইলেও বিস্ময়কর নহে।
সোমবারের পূর্বেও সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে র্যাব, পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য পরিচয়ে ছিনতাইসহ নানা অপকর্মের খবর প্রকাশ পাইয়াছে। এই আশঙ্কা অমূলক হইতে পারে না, এইরূপ সংবাদ নিমজ্জিত হিমশৈলের দৃশ্যমান চূড়া মাত্র। কারণ অনেক অঘটনই সংবাদমাধ্যমে উঠিয়া আসে না। ছিনতাইয়ের সময় প্রাণে মারিয়া ফেলিবার হুমকিতে ভীত হইয়া কিংবা পুলিশে অভিযোগ করিতে গিয়া বাড়তি ভোগান্তি পরিহারে অনেকে অর্থ ও সম্পদ খোয়াইয়াও নীরবতাকে শ্রেয়তর মনে করেন।
আমরা মনে করি, এইরূপ ছিনতাই চতুর্গুণ অপরাধ। কারণ, ইহাতে একদিকে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিতেছে; অপরদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হইতেছে। আবার অপরাধের শিকার হইবার পর জনসাধারণের মধ্যে উহার প্রতিকার পাইবার উদ্যোগ ও উদ্যমও হ্রাস পাইতেছে। র্যাব কিংবা পুলিশ পরিচয়ে অপরাধ করিয়া নির্বিঘ্নে পার পাওয়া সম্ভব দেখিয়া অপরাধীদের আশকারা বিলক্ষণ বৃদ্ধি পাইতেছে।
স্মরণে রাখিতে হইবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও যে ছিনতাই করিতে পারে– এইরূপ ধারণা জনমানসে একদিনে প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। প্রায়শ দেখা যায়, প্রকৃত র্যাব, পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থার কতিপয় অসাধু সদস্য ছিনতাইসহ নানা অপরাধ সংঘটনে সংশ্লিষ্ট থাকে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারও রাজধানীতে ব্যাংক হইতে এক ব্যক্তিকে ‘ধরিয়া’ লইয়া ২১ লক্ষাধিক টাকা ছিনতাই করিয়াছিল উর্দি পরিহিত দুই পুলিশ সদস্য।
আমরা মনে করি, র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলি আন্তরিক হইলে সকল ছিনতাইকারীকে শনাক্ত ও আটক কঠিন হইতে পারে না। আটককৃতরা লঘু দণ্ড কিংবা জামিনে ছাড়া পাইয়া পুনরায় যাহাতে অপরাধে জড়াইয়া না পড়ে, উহাও নিশ্চিত করিতে হইবে। খোদ র্যাবও সমকালকে জানাইয়াছে, র্যাব-পুলিশ পরিচয়ে অপরাধে জড়িত ১২ শতাধিক ব্যক্তি এ পর্যন্ত আটক হইয়াছে।
তাহাদের সকলের শাস্তি নিশ্চিত করিতে হইলে আটক ও অভিযোগপত্রের পরও সংশ্লিষ্টদের সক্রিয় থাকিতে হইবে। তবে সর্বাগ্রে তাড়াইতে হইবে সরিষার ভূত। অন্যথায় নাগরিকের মধ্যে উদ্ভূত এই ধারণা উৎপাটন করা যাইবে না– রক্ষকও ভক্ষক হইতে পারে।
- বিষয় :
- সম্পাদকীয়
- র্যাব-ডিবি