ঢাকা বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে বালুদস্যুতা

প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে বালুদস্যুতা

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

দেশের নদনদী ও বিভিন্ন জলাশয় হইতে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয় প্রায়শ সংবাদ শিরোনামে আসে। একই সঙ্গে এই অপকর্মের হোতাদের প্রতি রাজনৈতিক আশীর্বাদের বিষয়ও আলোচিত হয়। অভিযোগ আছে, প্রভাবশালী রাজনীতিকগণের সহিত বালুখেকোদের বিশেষ সম্পর্ক থাকায় অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অবৈধ বালু উত্তোলন প্রতিরোধ করা যাইতেছে না। কিন্তু সেই প্রভাবশালী রাজনীতিক যদি একজন মন্ত্রী হন, তাহা হইলে সত্যই আমাদের হতাশার পরিসীমা থাকে না। এই কারণেই সোমবার সমকালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, রোববার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রীর কারণে জেলার মেঘনা নদীর বালুখেকোদের প্রতিরোধ করা যাইতেছে না বলিয়া যেই অভিযোগ করিয়াছেন, উহা খুবই গুরুতর বলিয়া আমরা মনে করি। মনে রাখিতে হইবে, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন দেশের নদনদীর অভিভাবক। তদনুযায়ী অত্যন্ত দায়িত্বশীল একটা পদে থাকিয়া তিনি অভিযোগটি আনিয়াছেন।

অন্যদিকে সহযোগী একটি দৈনিকের মতে, নদী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রকৃতপক্ষে শিক্ষামন্ত্রীর কথাই বলিয়াছেন, যাঁহার দায়িত্বশীলতা লইয়াও প্রশ্ন তুলিবার অবকাশ কম। সকল কিছু মিলাইয়া তাই শিক্ষামন্ত্রীর নিজে তো বটেই সরকারেরও উক্ত অভিযোগ সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান জরুরি হইয়া পড়িয়াছে। একই সঙ্গে বালুখেকোদের প্রতি সকল প্রকার রাজনৈতিক আশীর্বাদ অবিলম্বে বন্ধ হওয়াও জরুরি, যাহাতে এই অপকর্মে লাগাম পরানো যায়।

উল্লেখ্য, জেলার বালুখেকোদের শিরোমণি বলিয়া পরিচিত এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শিক্ষামন্ত্রীর আশীর্বাদধন্য– এমন অভিযোগ পূর্বেও উঠিয়াছে। এমনও অভিযোগ আছে, ওই চেয়ারম্যান অবৈধভাবে মেঘনার বিভিন্ন অংশ হইতে দেদার বালু উত্তোলন করিতেছেন; মামলা-মোকদ্দমা করিয়াও স্থানীয় প্রশাসন তাঁহাকে এহেন দুষ্কর্ম হইতে নিরস্ত করিতে পারিতেছে না।

এমনকি তাঁহার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করিবার কারণে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের পর্যন্ত বদলির মুখোমুখি হইতে হইয়াছে। নদী কমিশন চেয়ারম্যানও রোববারের অনুষ্ঠানে একই প্রকার অভিযোগ উত্থাপন করিয়াছেন।

 নদী কমিশন চেয়ারম্যান আরও অভিযোগ করিয়াছেন, সম্ভবত একই প্রভাবের কারণে চাঁদপুরের মেঘনায় নূতন করিয়া আরেকটা বালুমহাল ঘোষণা করা হইয়াছে, যাহা শুধু নদী নহে; উক্ত অঞ্চলের পরিবেশ-প্রতিবেশের উপরেও ভয়াবহ প্রভাব ফেলিবে। একদিকে শত শত ড্রেজারের শব্দ, অন্যদিকে ড্রেজারে ব্যবহৃত তৈলের অবশিষ্টাংশ মৎস্য প্রজননে ব্যাপক ব্যাঘাত সৃষ্টি করিবে। মৎস্য গবেষকরা দীর্ঘদিন যাবৎ একসময় ইলিশের জন্য বিখ্যাত মেঘনা নদীতে ইলিশ বিরল হইবার কারণস্বরূপ দখল-দূষণ, তৎসহিত বেপরোয়া বালু সন্ত্রাসের কথা উল্লেখ করেন।

নিঃসন্দেহে নূতন ঐ বালুমহাল চালু হইলে নদীটি অচিরেই ইলিশশূন্য হইয়া পড়িবে। যাহা শুধু পুষ্টি নহে, জাতির গর্বের প্রশ্নেও এক বিরাট ক্ষতি। ইহাও গুরুত্বপূর্ণ যে, চাঁদপুরে মেঘনা নদী বরাবরই ভাঙনপ্রবণ। নির্বিচার বালু উত্তোলন নদীটির সেই ভাঙনপ্রবণতার অগ্নিতে অবশ্যই ঘি ঢালিবে।

আরও পড়ুন