ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে জটিলতা

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে জটিলতা

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ– উহাতে কোনো সন্দেহ নাই। কিডনি, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, লিভারের জটিলতা লইয়া আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হইবার পর ৭৮ বৎসর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে একাধিকবার করোনারি কেয়ার ইউনিটেও (সিসিইউ) যাইতে হইয়াছে। সোমবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও চিকিৎসকের বরাতে জানানো হইয়াছে, ডায়াবেটিসের উচ্চ মাত্রাজনিত শারীরিক দুর্বলতার পাশাপাশি তাঁহার ‘লিভার সিরোসিস’ গুরুতর হইয়া উঠিয়াছে। এই বিষয়ে দেশে উন্নত চিকিৎসা না থাকায় তাঁহাকে বিদেশের হাসপাতালে লইবার পরামর্শও চিকিৎসকগণ বারংবার দিয়া আসিতেছেন। এমতাবস্থায় তাঁহাকে বিদেশে লইয়া চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ হইতে সর্বশেষ দফার আবেদনটিও আইন মন্ত্রণালয়ে নাকচ হইবার পর বয়োবৃদ্ধ এই রাজনীতিকের স্বাস্থ্যঝুঁকি লইয়া গুরুতর শঙ্কা জাগা স্বাভাবিক। একাধিকবারের প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যতম রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার এইভাবে রোগাক্রান্ত পড়িয়া থাকিবার বিষয়টি বেদনাদায়ক বটে।

স্বীকার্য, খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় উচ্চ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হইয়া ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি হইতে কার্যত কারাবন্দি। ২০২০ সালের মার্চ মাসে সরকারের নির্বাহী আদেশে তাঁহার সাজা স্থগিত হইবার পর শর্তসাপেক্ষে ছয় মাস করিয়া মেয়াদ বৃদ্ধি ঘটিতেছে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসেও উহা অষ্টমবারের ন্যায় বৃদ্ধি পাইয়াছে। সরকারের তরফে ইহাকেই ‘বিশেষ সুবিধা’রূপে বর্ণনা করা হইয়াছে। অপরদিকে, দেশের জনসাধারণের উল্লেখযোগ্য অংশ মনে করে, খালেদা জিয়া বঞ্চনার শিকার। আইনের বিচারে অনেকের কাছে সুবিচার হইয়াছে বলিয়া প্রতীয়মান হয় নাই। কিন্তু বিতর্ক তাহা লইয়া নয়। আইনের অধীনে এবং অতীতে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বারংবার সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ এমনকি ক্ষমা করিবার দৃষ্টান্ত আমলে লইয়া এই ক্ষেত্রে উদার হইলে কোনো ক্ষতি নাই। ইহা বরং সরকারের তরফে রাজনৈতিক বিজয় বলিয়াই গণ্য হইবে। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে আইনি জটিলতার কথা বলা হইলেও উহার নেপথ্যে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবই প্রধান ও প্রকট বলিয়া অনেকে মনে করেন। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে এইরূপ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমালোচনা কম নাই।

আমরা মনে করি, পাল্টাপাল্টি যুক্তি যাহাই থাকুক– খালেদা জিয়ার বয়স, শারীরিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান এবং অবদান বিবেচনাপূর্বক তাঁহাকে বিদেশে লইয়া চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া যাইতে পারে। ইহাতে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের নীতিনির্ধারকগণের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল বৈ অনুজ্জ্বল হইবে না। অধিকাংশ দেশবাসীও বিলক্ষণ উহাই চাহে। ইহা সত্য, খালেদা জিয়ার সরকারের শাসনামলে তৎকালীন বিরোধী দল অর্থাৎ বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন চলিয়াছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উপর ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার বীভৎস স্মৃতিও বর্তমান ক্ষমতাসীনদের পক্ষে ভুলিয়া যাওয়া কঠিন। কিন্তু রাজনীতিতে ঔদার্যই কাম্য; জনসাধারণ ক্ষমাশীল শাসকদেরই পছন্দ করে। ক্ষমতাসীন দল কথাসাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেই প্রবাদপ্রতিম বাক্যটিও স্মরণ করিতে পারে: ‘তুমি অধম– তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?’

আরও পড়ুন