খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে জটিলতা

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ– উহাতে কোনো সন্দেহ নাই। কিডনি, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, লিভারের জটিলতা লইয়া আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হইবার পর ৭৮ বৎসর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে একাধিকবার করোনারি কেয়ার ইউনিটেও (সিসিইউ) যাইতে হইয়াছে। সোমবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও চিকিৎসকের বরাতে জানানো হইয়াছে, ডায়াবেটিসের উচ্চ মাত্রাজনিত শারীরিক দুর্বলতার পাশাপাশি তাঁহার ‘লিভার সিরোসিস’ গুরুতর হইয়া উঠিয়াছে। এই বিষয়ে দেশে উন্নত চিকিৎসা না থাকায় তাঁহাকে বিদেশের হাসপাতালে লইবার পরামর্শও চিকিৎসকগণ বারংবার দিয়া আসিতেছেন। এমতাবস্থায় তাঁহাকে বিদেশে লইয়া চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ হইতে সর্বশেষ দফার আবেদনটিও আইন মন্ত্রণালয়ে নাকচ হইবার পর বয়োবৃদ্ধ এই রাজনীতিকের স্বাস্থ্যঝুঁকি লইয়া গুরুতর শঙ্কা জাগা স্বাভাবিক। একাধিকবারের প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যতম রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার এইভাবে রোগাক্রান্ত পড়িয়া থাকিবার বিষয়টি বেদনাদায়ক বটে।
আমরা মনে করি, পাল্টাপাল্টি যুক্তি যাহাই থাকুক– খালেদা জিয়ার বয়স, শারীরিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান এবং অবদান বিবেচনাপূর্বক তাঁহাকে বিদেশে লইয়া চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া যাইতে পারে। ইহাতে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের নীতিনির্ধারকগণের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল বৈ অনুজ্জ্বল হইবে না। অধিকাংশ দেশবাসীও বিলক্ষণ উহাই চাহে। ইহা সত্য, খালেদা জিয়ার সরকারের শাসনামলে তৎকালীন বিরোধী দল অর্থাৎ বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন চলিয়াছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উপর ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার বীভৎস স্মৃতিও বর্তমান ক্ষমতাসীনদের পক্ষে ভুলিয়া যাওয়া কঠিন। কিন্তু রাজনীতিতে ঔদার্যই কাম্য; জনসাধারণ ক্ষমাশীল শাসকদেরই পছন্দ করে। ক্ষমতাসীন দল কথাসাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেই প্রবাদপ্রতিম বাক্যটিও স্মরণ করিতে পারে: ‘তুমি অধম– তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?’