ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধি

অস্বাভাবিক সময়ে অবিবেচক সিদ্ধান্ত

অস্বাভাবিক সময়ে অবিবেচক সিদ্ধান্ত

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ২৯ জুন ২০২০ | ১৫:৩৭

সোমবার সমকালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- খোঁড়া যুক্তিতে পানির দাম বাড়াচ্ছে ওয়াসা। করোনা-দুর্যোগে সমাজে বিড়ম্বনা-দুর্ভোগের ছায়া যখন প্রলম্বিত, তখন এমন চিন্তা কোনোভাবেই সুবিবেচনাপ্রসূত নয়। পানির দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে ওয়াসা যেসব যুক্তি দাঁড় করিয়েছে তা আমাদের বাস্তবতায় কতটা যুক্তিযুক্ত এই প্রশ্ন থেকেই যায়। উৎপাদন খরচ বাড়তেই পারে এবং এই প্রেক্ষাপটে দামও বাড়তে পারে। কিন্তু এর আগে অন্য অনুষঙ্গগুলোও তো আলোচনার দাবি রাখে। দাম বৃদ্ধি স্বাভাবিক; কিন্তু অস্বাভাবিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক হতে পারে না। অস্বাভাবিক সময়ে অবিবেচকের মতো সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পানি জীবনের জন্য অপরিহার্য তা আমরা জানি। পানির মতো একটি সংবেদনশীল সেবা খাতে এই মুহূর্তে দাম বৃদ্ধির বিষয়টি কার্যকর হলে সাধারণ মানুষের বিড়ম্বনা যে বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। করোনাভাইরাসের কারণে যে বহুমুখী বিরূপ প্রভাব পড়েছে পানির দাম বাড়ানো হলে তা যে আরও প্রকট হবে তাতেও সন্দেহ নেই।

আমরা জানি, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে সর্বশেষ পানির বর্ধিত দাম আদায় বন্ধ রয়েছে। আজ এ ব্যাপারে আদালতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। বিগত এক যুগে পানির দাম ওয়াসা শতভাগ বাড়িয়েছে। পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রেক্ষাপটে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বিশ্বের উন্নত শহরের সঙ্গে ঢাকার যে তুলনা করেছে তাও বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। সেসব শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমাদের ওয়াসার কার্যক্রমের ব্যবধান বিস্তর। তা ছাড়া ভূপ্রকৃতিগত নানা বিষয়ও রয়েছে। ওয়াসার সেবা নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে, তেমনি পানির গুণগত মান নিয়েও প্রশ্নের অন্ত নেই। অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ রয়েছে ব্যবহারের চেয়ে বেশি বিল আদায়েরও। পানির অপচয় যে শুধু কোনো কোনো গ্রাহকের অসচেতনতার কারণেই হচ্ছে তাই নয়, এক্ষেত্রে সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীল অসাধুদের নেতিবাচক ভূমিকাও কম নয়।

বিস্ময়কর হলো- পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব ওয়াসার বোর্ডের মাধ্যমে যায়নি। অথচ এটাই সঙ্গত কিংবা উচিত। একজন বোর্ড সদস্য সমকালের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন- বিদ্যমান বাস্তবতায় পানির দাম বৃদ্ধির কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি এও জানিয়েছেন, এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরাও তার সঙ্গে সহমত পোষণ করি। আলোচ্য প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত এক যুগে অন্তত ১৪ বার পানির দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াসা। প্রতি বছরই ওয়াসা পানির দাম বাড়িয়ে চললেও সেবা ও পানির গুণগত মান উন্নত করতে পারেনি। পদ্মা ও ভাকুর্তা প্রকল্পের ব্যর্থতার মূল্য দিতে হচ্ছে গ্রাহককে। বিপুল পরিমাণ অর্থে নির্মিত সরকারের এত বড় বড় প্রকল্পের ব্যর্থতার দায় কেন গ্রাহকদের ঘাড়ে চাপবে? বিদেশি ঋণে বাস্তবায়িত এসব প্রকল্প কেন লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলো তা খতিয়ে দেখে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। ঋণের কিস্তি পরিশোধ তো থেমে নেই। এসব ক্ষেত্রে অদূরদর্শিতা-অদক্ষতা রয়েছে বলে আমরা মনে করি। এসব ব্যাধি উপশমে মনোযোগ না বাড়িয়ে ওয়াসার দফায় দফায় পানির দাম বাড়ানোর এ প্রক্রিয়া অপপ্রক্রিয়া বলেই আমরা মনে করি।

বিনিয়োগ অনুপাতে উৎপাদন আয় কতটা বেড়েছে আমরা এই প্রশ্নও রাখতে চাই। অন্য উপসর্গের চিকিৎসা না করে পানির দাম দফায় দফায় বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার এমন উদ্যোগ সমালোচনারই খোরাক জোগায়। ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির পাশাপাশি বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ কম পানি পাওয়ায় চলছে গোঁজামিলের হিসাব। এভাবে তো এত বড় একটি সেবামূলক সংস্থা চলতে পারে না। পানির সঙ্গে স্যুয়ারেজ বিলও বাড়ার কথা, যেহেতু একই ব্যবস্থাপনায় তা যুক্ত। কিন্তু ওয়াসা কখনও স্যুয়ারেজ বিল বাড়ানোর কথা বলে না। আরও বিস্ময়কর হলো- রাজধানীর সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ এলাকায় স্যুয়ারেজ লাইন থাকলেও প্রায় সব এলাকা থেকেই বিল আদায় করে ওয়াসা। রোগ চিহ্নিত না করে খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করিয়ে দফায় দফায় দাম বৃদ্ধি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দুষ্টচক্র থেকে বের হয়ে আসতে হবে ওয়াসাকে। একই সঙ্গে সেবার মান উন্নতকরণে মনোযোগ বাড়াতে হবে। ওয়াসাকে জনবান্ধব, সেবামনস্ক, দক্ষ ও উন্নত করে তুলতে যা যা সংস্কার প্রয়োজন, তাতে ছাড় দেওয়া যাবে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা আধুনিক নগর ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু ওয়াসার মতো জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সংস্কার না করে তা কীভাবে সম্ভব?

আরও পড়ুন

×