ঢাকা শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

কক্সবাজারে মা-মেয়ে নির্যাতন

এখনও গেল না বর্বরতা

এখনও গেল না বর্বরতা

ডা. মাহাথির মোহাম্মদ- সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২০ | ১৪:৩৯

কক্সবাজারে মা-মেয়েকে রশিতে বেঁধে বর্বরতার যে চিত্র দেখেছি, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন হলেও বিস্মিত নই। বস্তুত নারী নির্যাতন দিবসের প্রাক্কালে ঘটনাটিই প্রমাণ করছে, সমাজে নারী কতটা অসহায়। ঘটনাটি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলেও নির্যাতিতরা বিচার পাবে কিনা- সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সোমবারের সমকালেও এসেছে 'বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিচার পাচ্ছেন না নারী'। কক্সবাজারের ঘটনায় আমরা হতবাক হয়েছি, ইউনিয়ন পরিষদের একজন চেয়ারম্যান কীভাবে এমন অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটাতে পারেন? আর অপরাধ যত গুরুতরই হোক না কেন, সে জন্য কোনোভাবেই নারীর কোমরে রশি বাঁধার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। সমকালের প্রতিবেদনে আমরা দেখেছি, গরু চুরির অপরাধে মা-মেয়ের ওপর দফায় দফায় নির্যাতন চালানো হয়। এ ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে গরু চোরের অপবাদ দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নির্যাতনের যে অভিযোগ উঠেছে, সেটি খতিয়ে দেখা জরুরি। এমনকি তদন্ত না করেই ওই চেয়ারম্যানের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ যেভাবে নির্যাতিতদের গ্রেপ্তার করেছে, সেটিও স্পষ্টত আইনের লঙ্ঘন। পুলিশ কিংবা অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা যখন এ ধরনের অপরাধ করেন, তখন তার আইনি প্রতিকার দুরূহ হয়ে ওঠে। অপরাধকর্মে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাবানদের যোগসাজশ কতটা ভয়াবহ হতে পারে- এ ঘটনা তারই এক দৃষ্টান্ত। তবে এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত যেভাবে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করার আদেশ দিয়েছেন, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। সোমবার আদালত তাদের জামিনের যে আদেশ দিয়েছেন, সেটিও সাধুবাদযোগ্য। মা-মেয়েকে নির্যাতনকারীদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তারের খবরও আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক। আমরা চাই, এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও আদালতের তরফ থেকে গঠন করা দুটি তদন্ত কমিটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থেকে তদন্তকাজ সম্পন্ন করুক। আমরা জানি, সমাজে এমনিতেই নারীরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার। চলমান করোনা-দুর্যোগের মধ্যেও নারী নির্যাতনের হার বেড়ে যাওয়ার খবর আমাদের হতাশ করেছে। মা-মেয়েকে একসঙ্গে রশিতে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনাটি তারই ধারাবাহিকতা। প্রকাশ্যে এ নির্যাতনের ঘটনায় মা ও মেয়ের মানসিক অবস্থা উপলব্ধির ভাষা আমাদের নেই। এমন বর্বরোচিত ঘটনা যখন ক্ষমতাবানদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে হয়ে থাকে, সেখানে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এর আগে আমরা দেখেছি, শিশুরা নানাভাবে বর্বরতার শিকার হয়েছে। কোনো ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসার পরই দেখা যাচ্ছে প্রশাসনের টনক নড়ে, দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।

আমরা মনে করি, প্রশাসনের আরও সজাগ ও সতর্ক থাকা উচিত, যাতে এমন কোনো ঘটনা না ঘটে। ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণই কাম্য। অপরাধ সংঘটনের পর তার ক্ষত উপশম করা কঠিন। এমনিতেই নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার অন্ত নেই। আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, যেসব ঘটনা আলোচনায় আসে, সেগুলোই আদালতে দ্রুত সম্পন্ন হয়। অন্যথায় বিচারের ধীরগতির কারণে মামলাজট বাড়ে এবং এ সুযোগে আপরাধী উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে নেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিচার যখন অধরা থেকে যায়, তখন অপরাধী সুযোগ পায়, নতুন অপরাধের জন্ম হয়। অপরাধীর সাজা না হওয়ায় সমাজে মানুষ আইন নিজ হাতে নেওয়ার সুযোগ পায়। আমরা দেখেছি, সরকার কীভাবে দ্রুত নোয়াখালীর নুসরাত হত্যা মামলার কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। এমন দৃষ্টান্ত আমরা সব মামলার ক্ষেত্রেই দেখতে চাই। কক্সবাজারে মা-মেয়ে নির্যাতনের ঘটনা ভয়াবহ নারী ও শিশু নির্যাতনের সাম্প্রতিকতম সংযোজন। এ ঘটনায় অপরাধীরা কোনোভাবেই ছাড় পেতে পারে না। আমাদের নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে এসে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখছে। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে তারা এভাবে অবদান রাখতে সক্ষম হবে না। আমরা চাই, এ ঘটনার বিচার নারীর অধিকার রক্ষায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক। কক্সবাজারের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই যেভাবে অসহায়ের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, বাস্তবেও এভাবে নির্যাতিতের পাশে দাঁড়ালে একটি সুন্দর সমাজ গড়া সম্ভব।

আরও পড়ুন

×