ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

চারদিক

বেসরকারি গ্রন্থাগারের এমপিওভুক্তি

বেসরকারি গ্রন্থাগারের এমপিওভুক্তি

এমদাদ হোসেন ভুঁইয়া

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২০ | ১২:০০

দেশে সরকারি গণগ্রন্থাগার ৭১, আর নিবন্ধিত বেসরকারি গ্রন্থাগার এক হাজার ৩৭৯টি। গ্রাম, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের একটি গণগ্রন্থাগার পরিচালনায় অন্তত তিনজন স্টাফ বা কর্মী দরকার। কমিটির সদস্যদের চাঁদা বা সংগৃহীত অনুদানে গ্রন্থাগারগুলো পরিচালিত হয়। এসব গ্রন্থাগার টিকিয়ে রাখতে হলে স্কুল-কলেজের মতো টেকসই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় নেওয়া দরকার। প্রতিটি নিবন্ধিত বেসরকারি সাধারণ গণগ্রন্থাগারে এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক স্কুলের মতো সরকারি স্কেলে একজন সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার, একজন অফিস সহায়ক কাম কম্পিউটার অপারেটর ও একজন পিয়ন (এমএলএসএস) নিয়োগ দেওয়া আবশ্যক। তা হলে গ্রন্থাগারগুলো টিকে থাকতে পারবে। মানুষ গ্রন্থাগারমুখী হবে। তরুণ ও যুবসমাজকে মাদক ও খারাপ নেশা থেকে ফেরানোর কাজ সহজ হবে। গণগ্রন্থাগার হবে দিন বদলের হাতিয়ার।
শিক্ষা, সংস্কৃতি ও গ্রন্থাগারবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব্বাধীন সরকার মাধ্যমিক স্কুলে (হাইস্কুল) সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদ সৃষ্টি করে জনগণের দীর্ঘদিনের একটি প্রত্যাশা পূরণ করেছে। সহকারী গ্রন্থাগারিক-কাম-ক্যাটালগারের মাসিক বেতন, বেসিক ১৬ হাজার ৮০০, ইনক্রিমেন্ট ৮৪০ (৫ শতাংশ), বাড়িভাড়া এক হাজার ও চিকিৎসা ভাতা ৫০০ সর্বমোট ১৭ হাজার ৩৭৬ টাকা। অফিস সহায়ক-কাম-কম্পিউটার অপারেটরের বেসিক ১০ হাজার ১৯১, ইনক্রিমেন্ট ৫০৯ টাকা, বাড়িভাড়া এক হাজার ও চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা, সর্বমোট ১১ হাজার ১৩০ টাকা। পিয়ন (এমএলএসএস) বেসিক আট হাজার ৬৭৭, ইনক্রিমেন্ট ৪৩৩, বাড়িভাড়া এক হাজার ও চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা, সর্বমোট ৯ হাজার ৬৯৯ টাকা। বাংলাদেশে বেসরকারি গ্রন্থাগারের ইতিহাস বেশ পুরোনো। এখানে দেড় শতাধিক বছরের পুরোনো গ্রন্থাগারও আছে। সেই তুলনায় গ্রন্থাগারের প্রসার বা বিকাশ ঘটেনি। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অনেক গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে গেছে, অনেকগুলো বন্ধের উপক্রম। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, সিনাগগ, প্যাগোডায় মানুষ বয়স, শ্রেণি, পেশা, জাতি, বর্ণ, ধর্মভেদে প্রবেশাধিকার পায়। কিন্তু গণগ্রন্থাগার বা সাধারণ গ্রন্থাগারে সবাই যেতে পারে উন্মুক্ত। এজন্যই গণগ্রন্থাগারকে 'পিপলস ইউনিভার্সিটি' বা 'গণবিশ্ববিদ্যালয়' বলা যায়। দুঃখের বিষয়, দেশে এই খাত সবচেয়ে উপেক্ষিত, অবহেলিত। পরিবার, সমাজ, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র সবই ঠিকঠাক চলছে। কিন্তু সমাজ উন্নয়ন কিংবা সুন্দর সমাজ গড়ার স্বার্থে যে অপরিসীম-এ ষিয়ে দৃশ্যমান তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না। কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় গণগ্রন্থাগারের প্রসার, উন্নয়ন হচ্ছে না। যুগ যুগ ধরে তা চোখের আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। ভাবখানা এমন যে, বই পড়ে কী হবে? ওটা আবার কী জিনিস? বই পড়ে কে ধনী হয়েছে? অর্থাৎ ধনই মুখ্য, জ্ঞানার্জন নয়। এজন্যই সমাজে পচন ধরেছে। পাবলিক লাইব্রেরি (গণগ্রন্থাগার), জাদুঘর, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন। বলা বাহুল্য, এই নিবন্ধের আলোচ্য বিষয় গণগ্রন্থাগার। সুলতানি, মোগল, ব্রিটিশ শাসন পার হয়ে ভারতবর্ষ এখন কয়েকটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রে বিভক্ত।
মানচিত্রের পাশাপাশি এই উপমহাদেশে ব্যাপক রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটেছে, ঘটছে। গড়ে উঠেছে হাজার হাজার শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সেই তুলনায় দেশে গ্রন্থাগারের সংখ্যা বাড়েনি, বরং কমেছে। এটি শুভদায়ক নয়। গ্রন্থাগারের সংখ্যা বাড়াতে হবে আমাদের স্বার্থ ও প্রয়োজনেই। সেই নিরিখেই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সংশ্নিষ্ট ব্যক্তিদের এ ব্যাপারে যথাযথ দৃষ্টিই এক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনতে পারে।
সভাপতি, বাংলাদেশ গ্রন্থসুহৃদ সমিতি ও বেরাইদ গণপাঠাগার
whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×