করোনার সংক্রমণ
দ্বিতীয় ঢেউ রোধে প্রস্তুতি নিন

হারিয়ে যাওয়া অর্থ প্রকৃত মালিকের হাতে তুলে দিতে পেরে খুশি রিকশাচালক নাজমুল- সমকাল
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ২৩:০০
দেশে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও করোনা পরিস্থিতি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে না আসা হতাশাজনক। এরই মধ্যে আসন্ন শীতে করোনার প্র্রাদুর্ভাব আরও বেড়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা যে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তাতে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। মঙ্গলবারের সমকালের প্রতিবেদনে এ জন্যই সংক্রমণ ঠেকাতে জোরালো প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছে। স্বস্তির বিষয় হলো, প্রধানমন্ত্রী এর গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন এবং ইতোমধ্যে নির্দেশনাও দিয়েছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে শীতের সময় করোনাভাইরাসটি যেভাবে চীনের উহান থেকে শুরু হয়ে শীতপ্রধান দেশগুলোতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, তাতে বিশেষজ্ঞদের ধারণা অমূলক হতে পারে না। গবেষকরা বলছেন, যে তাপমাত্রায় এ ভাইরাসটি দ্রুত বিস্তার ঘটাতে পারে, শীতকাল তার জন্য আদর্শ। তার ওপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর মধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, আসছে শীতে করোনাভাইরাস মহামারি আরও মারাত্মক রূপ নিতে পারে। আমরা দেখছি, শীতের আগে থেকেই কিছু দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। সুতরাং আমাদের প্রস্তুতি যে জোরাল হওয়া দরকার, তা বলাই বাহুল্য। আমরা মনে করি, ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক দুই পর্যায়েই সতর্কতা জরুরি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ পুনরায় শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি চালু হয়েছে। অথচ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে মানুষের মাঝে এক ধরনের শৈথিল্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্বাভাবিক জীবনযাপনে স্বাস্থ্যবিধি না মানাই ভাইরাসের ঝুঁকির বড় কারণ। এর সঙ্গে শীতের বিষয়টি যোগ হওয়ার অর্থ দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের প্রবল আশঙ্কা। সেই সংক্রমণ প্রতিরোধের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এখনই করণীয় বিষয়ে রোডম্যাপ প্রস্তুত করে সে অনুযায়ী পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রাখতেই হবে। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ যেমন পেরিয়েছে, তেমনি মৃতের সংখ্যাও পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। এভাবে প্রতিদিন শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়লেও বাস্তবে সচেতনতা দৃশ্যমান নয়। এমনকি প্রশাসনের নজরদারিও উঠে যাওয়ার মতো অবস্থা। স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে এ মাসের শুরু থেকে গণপরিবহন স্বাভাবিক হলেও সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। ঠেলাঠেলি করে ওঠা আর ঠাসাঠাসি করে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার প্রবণতা রয়ে গেছে করোনাকালের মতোই। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিংমলসহ প্রায় সবই স্বাভাবিক হলেও শারীরিক দূরত্ব তেমন মানা হচ্ছে না কোথাও। সবচেয়ে বড় বিষয়, দেশের বিপুল অধিকাংশ মানুষই মাস্ক না পরে বাইরে বের হচ্ছে। অথচ করোনা ভ্যাকসিন এলেও মাস্ক পরতে হবে। কারণ প্রতিটি নাগরিকের ভ্যাকসিন পাওয়া নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ঝুঁকি থাকেই। আমাদের মাস্ক পরা শুধু বাধ্যতামূলক করাই নয়, বরং নজরদারি বাড়িয়ে যারা মাস্ক পরবে না তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করাও দরকার হয়ে পড়েছে। সমকালের প্রতিবেদনে এসেছে, শীতের আগাম প্রভাব মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্নিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরপরই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রথম দফার সংক্রমণ সামাল দিতে গিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার যেসব বিষয়ে ত্রুটি ধরা পড়েছে, তা দ্রুত সংশোধন করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা যে পরামর্শ দিয়েছেন, তার সঙ্গে আমরা বহুলাংশে একমত। নমুনা পরীক্ষা থেকে শুরু করে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা দ্রুততার সঙ্গে গুণগত মানে উন্নীত করার দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। আমরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথায় বিলম্বে হলেও আশাবাদী। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এর বাইরে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা করছি। করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রতিদিনই নতুন নতুন পরিকল্পনা করে যাচ্ছে এবং তা কার্যকর করছে। এটা সত্য যে, টিকা উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী জোর প্রচেষ্টা চলছে। কবে নাগাদ ওই টিকা পাওয়া যাবে তা যেহেতু নিশ্চিত নয়; আবার এ মুহূর্তে জীবিকা ও অর্থনীতির স্বার্থে লকডাউনও সম্ভব নয়। সুতরাং স্বাস্থ্যবিধি ও শরীরিক দূরত্ব মেনে চলাই মূল ভরসা। সবাই যেন এ নির্দেশনা মেনে চলেন, সেজন্য সরকারের সচেতনমূলক কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও সক্রিয়তা কাম্য।
- বিষয় :
- করোনার সংক্রমণ