পার্লাইট পাউডার পরিবেশের ঝুঁকি
কুমারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন গ্রিড লাইনে পুড়ে যাওয়া ট্রান্সফরমার ও লাইন মেরামত করছেন কর্মীরা- ইউসুফ আলী
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২০ | ১২:০০
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পার্লাইট পাউডার চটগ্রামের সীতাকুণ্ড সাগর উপকূলে যেভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার খবর বৃহস্পতিবারের সমকালের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কেবল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলেই নয়, বরং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সাগর উপকূলে এলএনজি তথা তরল প্রাকৃতিক গ্যাস বহনকারী স্ট্ক্র্যাপ জাহাজ কাটার পর এগুলো যেভাবে উন্মুক্ত স্থানে স্তূপাকারে ফেলে রাখা হচ্ছে, তাও পরিবেশের জন্য হুমকি। আমরা জানি, গ্যাস পরিবহনে জাহাজের ট্যাঙ্কগুলো সুরক্ষার জন্য দুই স্তরবিশিষ্ট এক ধরনের প্লাইবোর্ডের প্রতিরোধক দেওয়া হয়, সেখানেই থাকে পার্লাইট পাউডার। সমস্যা হলো, যখন এলএনজিবাহিত জাহাজগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়, তখন তা বেচে দিলে সীতাকুণ্ড সাগর উপকূলে কাটার জন্য আনা হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ওই ট্যাঙ্কের অংশবিশেষ কিনে নিয়ে উন্মুক্ত স্থানে পাউডারগুলো ফেলে প্লাইবোর্ড ও কাঠ ফার্নিচারের দোকানে বেচে দেন। প্রশ্ন হলো, জাহাজগুলো যারা কাটছেন তাদের পার্লাইট পাউডার মাটিতে পুঁতে ফেলতে বলা হলেও তারা সেটি কেন করছেন না?
অভিযোগ আছে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্নিষ্টদের জানিয়েই এ কাজ করছেন। আমরা মনে করি, পার্লাইট পাউডার গর্ত করে ব্যবসায়ীদের পুঁতে ফেলার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তারা বিষয়টি মানছেন কিনা তা দেখার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের ওপরই বর্তায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পার্লাইট পাউডার ফসলের জন্য মাটির প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন- আয়রন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতি শোষণ করে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে। এই পাউডার মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগসহ ফুসফুস ক্যান্সারেরও কারণ হতে পারে। এসব পাউডারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না করে যেভাবে যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হচ্ছে, পরিত্যক্ত পার্লাইট যেভাবে খালবিলে ফেলা হচ্ছে বলে সমকালের প্রতিবেদনে এসেছে, তাতে বিভিন্নভাবে তা মানুষের খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করা অস্বাভাবিক নয়। আমরা জানি, তেল ও গ্যাস উৎপাদনে পার্লাইট একটি ভালো শোষণের কাজ করে এবং ব্যবহারের পর এটি অনেকক্ষেত্রে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
আমরা দেখেছি, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সাগর উপকূলের ফৌজদারহাট, কদমরসুল, শীতলপুর ও কুমিরায় এ রকম চারটি জাহাজ কাটার জন্য আনা হয়। আমরা চাই, পরিবেশে প্রভাব ও মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেবে। স্থানীয় ব্যবসায়ী যারা জাহাজগুলো কাটার কাজ করছেন, তাদের যথানিয়মে পার্লাইট পাউডার থেকে মানুষকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতেই হবে। এর আগে পার্লাইট পাউডারের ব্যবস্থাপনা কীভাবে করা হতো আমরা জানি না, তবে ভবিষ্যতে এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য যথাযথ নির্দেশনা ও বাধ্যবাধকতা থাকা চাই। আমরা জানি, জাহাজভাঙা শিল্পে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছরের হিসাব অনুযায়ী, এ শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। প্রতিবছর জাহাজভাঙা শিল্প থেকে সরকার শতকোটি টাকা রাজস্ব পায় আমদানি শুল্ক্ক, ইয়ার্ড ও অন্যান্য কর বাবদ। এ খাতে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়। জাহাজের মধ্যে যা আছে সব কিছুই পুনর্ব্যবহার উপযোগী ও বিক্রয় করা হয়। জাহাজ থেকে ইস্পাতসহ বিভিন্ন আসবাব, রং, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, লুব্রিক্যান্ট, তেল ইত্যাদি পাওয়া যায়। যার ওপর ভর করে বিকশিত হচ্ছে আরও অনেক ব্যবসা।
কিন্তু অর্থনৈতিক এ সুবিধার পাশাপাশি এর পরিবেশগত দিকটি উপেক্ষিত থাকছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আমরা পার্লাইট পাউডার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও বিষয়টি দেখছি। আমাদের প্রত্যাশা- সরকার জাহাজভাঙা শিল্পে নজর দিয়ে একে পরিবেশবান্ধব ও ব্যবসায়ীদের পেশাদার হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। একই সঙ্গে সীতাকুণ্ডের সমুদ্র উপকূলের উন্মুক্ত স্থানে রাখা পার্লাইট পাউডার যথাযথ ব্যবস্থাপনায় অপসারণে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
- বিষয় :
- পার্লাইট পাউডার পরিবেশের ঝুঁকি