সমকালীন প্রসঙ্গ
পুঁজিবাদের কারণে সমাজে বৈষম্য বাড়ছে

সাব্বির আহমেদ
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২১ | ১২:০০
জনগণের কাজ সরকার নির্বাচন করা আর সরকারের কাজ জনসাধারণের সব ভালো-মন্দ, সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। রাজনীতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণাটা এমনই। এ ধারণা খুব সাধারণ এবং স্বাভাবিক। জাঁ জ্যাক রুশোর সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট তত্ত্বও তাই বলে। কিন্তু বাস্তবতাটা কোনোকালেই এত সহজ-সরল ছিল না বা নেই। তা না থাকার কারণ হচ্ছে, একই বিষয়ে একজন মানুষের একাধিক মতামত তৈরি করার ক্ষমতা। বৃহত্তর পরিসরে পরিস্থিতি অনেক অনেক জটিল হয়ে যায়। জনগণ কখনোই কোনো বিষয়েই একমত হতে পারে না; পারলে সবাই জ্ঞানী হয়ে যেত। একমাত্র প্রকৃত জ্ঞানীরাই কোনো বিষয়ে একমত হতে পারেন।
এই একমত হতে না পারা সমস্যার সমাধান হচ্ছে, জনপ্রতিনিধি নিয়োগ করে সাধারণ পরিষদ বা সংসদ বানানো এবং সেখানে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সম্ভাব্য সমাধানের একাধিক উপায় নিয়ে একটা তালিকা প্রস্তুত করে তা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস করা। এই উপায়ে জনকল্যাণে সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে এই প্রক্রিয়ায় কতকগুলো গলদ আছে বলে বাস্তবে আসলে তা হয় না। তাহলে গণতন্ত্রের এই জয়জয়কারের দুনিয়ায় মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুঃখ, কষ্ট, বেদনা থাকত না; থাকত না মানুষে মানুষে আয় বৈষম্য, ধন বৈষম্য।
আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পৃথিবীর মাত্র ১ শতাংশ ধনী মানুষের হাতে রয়েছে পুরো দুনিয়ার ৬৯০ কোটি মানুষের সমান সম্পদ। এই ধনীদের সম্পদের ওপর থেকে তাদের সরকারগুলো মোট আদায়কৃত করের মাত্র ৪ শতাংশ কর আদায় করতে পারে। অতিধনীরা তাদের ওপর ধার্যকৃত আয়করের ৩০ শতাংশ এড়িয়ে যান। অন্যদিকে প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষ মারা যায় বিনা চিকিৎসায়; প্রতি বছর ১০ কোটি মানুষ হতদরিদ্র হয়ে যায় শুধু চিকিৎসা খরচ জোগাতে গিয়ে; ৫ ভাগের ১ ভাগ শিশু স্কুলে যেতে পারে না। এমন পরিস্থিতির দায় গণতন্ত্রের। গণতন্ত্র দুর্বল মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।
বাংলাদেশেও বেড়ে চলছে আয় এবং ধন বৈষম্য। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির দেওয়া তথ্য অনুসারে, ১৯৯১-৯২ সালে শীর্ষ ৫ শতাংশ ধনী দেশের মোট সম্পদের ১৮.৮৫ শতাংশের মালিক ছিল। সে সময়ে সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ মানুষের সম্পদ ছিল দেশের মোট সম্পদের ১.০৩%। ২০১৫-১৬ সালে এসে ধনীদের সম্পদ হয়েছে ২৭.৭৯% (বেড়েছে ৮.৯৪%) আর দরিদ্রদের হয়েছে ০.২৩% (কমেছে ০.৮%)। দেশ অর্থনীতিতে যত শক্তিশালী হচ্ছে, ততই বেড়ে চলছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে অধিক হারে ধনীরা ধনী হচ্ছেন; দরিদ্ররা সম্পদশালী হচ্ছেন অর্থনীতির চেয়ে কম গতিতে। মানে দাঁড়াল এই যে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেন না খেটে খাওয়া মানুষ।
বর্তমান পৃথিবীতে গণতন্ত্রকে প্রায় সব দেশে মোক্ষ করে নেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে রয়েছে 'পুঁজিবাদ' যাকে 'মুক্তবাজার অর্থনীতি' নামে ডাকা হয়। যেসব দেশে গণতন্ত্র ভিন্ন পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানেও পুঁজিবাদের জয়জয়কার। কমিউনিস্ট চীনে আছে পুঁজিবাদ। রাজতান্ত্রিক সৌদি আরব কিংবা কুয়েতেও পুঁজিবাদ। ইসলামী ইরানেও পুঁজিবাদ। যে পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থাই হোক না কেন পুঁজিবাদই বর্তমান পৃথিবীর একমাত্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বৈষম্য বিরাজ করছে, তা শুধুই পুঁজিবাদের একাধিপত্যের ফল। পুঁজিবাদ গণতন্ত্রের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে চলছে বর্তমান পৃথিবীর প্রায় ৮০০ কোটি মানুষকে। পুঁজিবাদ যদি ন্যায়ের পথে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রয়োগ হতো, তাহলে এত ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি হতো না।
অন্যান্য ব্যবস্থায় যা-ই থাকুক না কেন, গণতন্ত্রে রয়েছে সব মানুষের সমান অধিকারের স্বীকৃতি। সবারই এক ভোট। বাস্তবতা হচ্ছে- সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা জনহিতকর নেতা বা সরকার নির্বাচন করতে পারে না। সঠিক নেতা নির্বাচন করতে প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হয়। সচেতন হতে হলে দরকার শিক্ষা এবং সঠিক তথ্যের অবাধ প্রবাহ। যার কোনোটিই যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায় না; অতীতেও পাওয়া যায়নি। এ কারণেই সক্রেটিস গণতন্ত্র পছন্দ করতেন না। রাজনীতিতে হিংসা-বিদ্বেষ, বিভাজন, বর্ণবাদ, ধর্মের ব্যবহার, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মিথ্যাচার, অর্থ, পেশাগত এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার ব্যবহার ইত্যাদি উপায়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে দেওয়া হয়। বিভ্রান্ত জনগণ সঠিক নেতা নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়। গণতন্ত্র কাঙ্ক্ষিত ফল দিতে পারছে না। এসব সমস্যা নতুন নয়, সেই গ্রিক সভ্যতার কাল থেকে যখন যেখানে গণতন্ত্রের চর্চার চেষ্টা করা হয়েছে, সেখানেই অপশক্তির প্রভাবে গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।
বর্তমান পৃথিবীতে গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, কমিউনিজম সবকিছুর মধ্যেই দোর্দণ্ড প্রতাপে বিরাজ করছে পুঁজিবাদ। পুঁজিবাদে মানব কল্যাণের বিষয় নেই। সে শুধু মুনাফাই খোঁজে; মানুষকে ভোগবাদী বানায়। বেশি বেশি ভোগে উৎসাহিত করে। ভোগের উৎসাহ মানুষকে আরও বেশি পরিশ্রমী করে তোলে। অধিক পরিশ্রম উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। অধিক উৎপাদনশীলতার ফল পুঁজিপতি ভোগ করে; খেটে খাওয়া মানুষের হাতে পড়ে শুধু বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু না হলে চলে না, ততটুকু। শ্রমিক বেঁচে না থাকলে পুঁজিপতির জন্য সম্পদ জোগাড় করবে কে?
ভোগবাদ মানুষের মধ্যে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করে তাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে তোলে। পুঁজিবাদ দুর্নীতির সুবিধা নিয়ে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে মুষ্টিমেয় কিছু ধনবানের স্বার্থে। পৃথিবীজুড়ে পুঁজিবাদের হাতে রাজনৈতিক নেতারা পুতুল হয়ে আছেন। এ কথার যথার্থ প্রমাণ হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। পুঁজিবাদের প্রতিরোধে তিনি তার দীর্ঘকালের রাজনৈতিক অঙ্গীকার 'সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা' শতচেষ্টা করেও বাস্তবায়ন করতে পারেননি। রাজনীতির অন্দরমহলে ঢুকে পুঁজিবাদ দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করে আমেরিকার গণমানুষের নেতা বার্নি স্যান্ডার্সকে। নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে পুঁজিবাদ ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ করে নিজেদের পছন্দের বিচারপতি এমি কনি ব্যারেটকে। পুঁজিবাদের চাপে নির্বাচিত হতে পারেন না ব্রিটেনের জনমানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ প্রদর্শনকারী নেতা জেরেমি করবিন।
দীর্ঘদিন ধরে সরকার চালাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া গণমানুষের দল, আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে হবে পুঁজিবাদের ক্রীড়নকদের। নগণ্য হলেও এখনও কিছু সুস্থ চিন্তার মানুষ সমাজে রয়েছেন। তাদের নিয়ে আসতে হবে নীতিনির্ধারণী পদগুলোতে। দূর করতে হবে একচ্ছত্র পুঁজিবাদ; সমন্বয় করতে হবে সাম্যবাদের সঙ্গে।
চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট
এই একমত হতে না পারা সমস্যার সমাধান হচ্ছে, জনপ্রতিনিধি নিয়োগ করে সাধারণ পরিষদ বা সংসদ বানানো এবং সেখানে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সম্ভাব্য সমাধানের একাধিক উপায় নিয়ে একটা তালিকা প্রস্তুত করে তা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস করা। এই উপায়ে জনকল্যাণে সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে এই প্রক্রিয়ায় কতকগুলো গলদ আছে বলে বাস্তবে আসলে তা হয় না। তাহলে গণতন্ত্রের এই জয়জয়কারের দুনিয়ায় মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুঃখ, কষ্ট, বেদনা থাকত না; থাকত না মানুষে মানুষে আয় বৈষম্য, ধন বৈষম্য।
আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পৃথিবীর মাত্র ১ শতাংশ ধনী মানুষের হাতে রয়েছে পুরো দুনিয়ার ৬৯০ কোটি মানুষের সমান সম্পদ। এই ধনীদের সম্পদের ওপর থেকে তাদের সরকারগুলো মোট আদায়কৃত করের মাত্র ৪ শতাংশ কর আদায় করতে পারে। অতিধনীরা তাদের ওপর ধার্যকৃত আয়করের ৩০ শতাংশ এড়িয়ে যান। অন্যদিকে প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষ মারা যায় বিনা চিকিৎসায়; প্রতি বছর ১০ কোটি মানুষ হতদরিদ্র হয়ে যায় শুধু চিকিৎসা খরচ জোগাতে গিয়ে; ৫ ভাগের ১ ভাগ শিশু স্কুলে যেতে পারে না। এমন পরিস্থিতির দায় গণতন্ত্রের। গণতন্ত্র দুর্বল মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।
বাংলাদেশেও বেড়ে চলছে আয় এবং ধন বৈষম্য। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির দেওয়া তথ্য অনুসারে, ১৯৯১-৯২ সালে শীর্ষ ৫ শতাংশ ধনী দেশের মোট সম্পদের ১৮.৮৫ শতাংশের মালিক ছিল। সে সময়ে সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ মানুষের সম্পদ ছিল দেশের মোট সম্পদের ১.০৩%। ২০১৫-১৬ সালে এসে ধনীদের সম্পদ হয়েছে ২৭.৭৯% (বেড়েছে ৮.৯৪%) আর দরিদ্রদের হয়েছে ০.২৩% (কমেছে ০.৮%)। দেশ অর্থনীতিতে যত শক্তিশালী হচ্ছে, ততই বেড়ে চলছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে অধিক হারে ধনীরা ধনী হচ্ছেন; দরিদ্ররা সম্পদশালী হচ্ছেন অর্থনীতির চেয়ে কম গতিতে। মানে দাঁড়াল এই যে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেন না খেটে খাওয়া মানুষ।
বর্তমান পৃথিবীতে গণতন্ত্রকে প্রায় সব দেশে মোক্ষ করে নেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে রয়েছে 'পুঁজিবাদ' যাকে 'মুক্তবাজার অর্থনীতি' নামে ডাকা হয়। যেসব দেশে গণতন্ত্র ভিন্ন পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানেও পুঁজিবাদের জয়জয়কার। কমিউনিস্ট চীনে আছে পুঁজিবাদ। রাজতান্ত্রিক সৌদি আরব কিংবা কুয়েতেও পুঁজিবাদ। ইসলামী ইরানেও পুঁজিবাদ। যে পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থাই হোক না কেন পুঁজিবাদই বর্তমান পৃথিবীর একমাত্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বৈষম্য বিরাজ করছে, তা শুধুই পুঁজিবাদের একাধিপত্যের ফল। পুঁজিবাদ গণতন্ত্রের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে চলছে বর্তমান পৃথিবীর প্রায় ৮০০ কোটি মানুষকে। পুঁজিবাদ যদি ন্যায়ের পথে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রয়োগ হতো, তাহলে এত ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি হতো না।
অন্যান্য ব্যবস্থায় যা-ই থাকুক না কেন, গণতন্ত্রে রয়েছে সব মানুষের সমান অধিকারের স্বীকৃতি। সবারই এক ভোট। বাস্তবতা হচ্ছে- সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা জনহিতকর নেতা বা সরকার নির্বাচন করতে পারে না। সঠিক নেতা নির্বাচন করতে প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হয়। সচেতন হতে হলে দরকার শিক্ষা এবং সঠিক তথ্যের অবাধ প্রবাহ। যার কোনোটিই যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায় না; অতীতেও পাওয়া যায়নি। এ কারণেই সক্রেটিস গণতন্ত্র পছন্দ করতেন না। রাজনীতিতে হিংসা-বিদ্বেষ, বিভাজন, বর্ণবাদ, ধর্মের ব্যবহার, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মিথ্যাচার, অর্থ, পেশাগত এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার ব্যবহার ইত্যাদি উপায়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে দেওয়া হয়। বিভ্রান্ত জনগণ সঠিক নেতা নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়। গণতন্ত্র কাঙ্ক্ষিত ফল দিতে পারছে না। এসব সমস্যা নতুন নয়, সেই গ্রিক সভ্যতার কাল থেকে যখন যেখানে গণতন্ত্রের চর্চার চেষ্টা করা হয়েছে, সেখানেই অপশক্তির প্রভাবে গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।
বর্তমান পৃথিবীতে গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, কমিউনিজম সবকিছুর মধ্যেই দোর্দণ্ড প্রতাপে বিরাজ করছে পুঁজিবাদ। পুঁজিবাদে মানব কল্যাণের বিষয় নেই। সে শুধু মুনাফাই খোঁজে; মানুষকে ভোগবাদী বানায়। বেশি বেশি ভোগে উৎসাহিত করে। ভোগের উৎসাহ মানুষকে আরও বেশি পরিশ্রমী করে তোলে। অধিক পরিশ্রম উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। অধিক উৎপাদনশীলতার ফল পুঁজিপতি ভোগ করে; খেটে খাওয়া মানুষের হাতে পড়ে শুধু বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু না হলে চলে না, ততটুকু। শ্রমিক বেঁচে না থাকলে পুঁজিপতির জন্য সম্পদ জোগাড় করবে কে?
ভোগবাদ মানুষের মধ্যে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করে তাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে তোলে। পুঁজিবাদ দুর্নীতির সুবিধা নিয়ে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে মুষ্টিমেয় কিছু ধনবানের স্বার্থে। পৃথিবীজুড়ে পুঁজিবাদের হাতে রাজনৈতিক নেতারা পুতুল হয়ে আছেন। এ কথার যথার্থ প্রমাণ হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। পুঁজিবাদের প্রতিরোধে তিনি তার দীর্ঘকালের রাজনৈতিক অঙ্গীকার 'সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা' শতচেষ্টা করেও বাস্তবায়ন করতে পারেননি। রাজনীতির অন্দরমহলে ঢুকে পুঁজিবাদ দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করে আমেরিকার গণমানুষের নেতা বার্নি স্যান্ডার্সকে। নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে পুঁজিবাদ ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ করে নিজেদের পছন্দের বিচারপতি এমি কনি ব্যারেটকে। পুঁজিবাদের চাপে নির্বাচিত হতে পারেন না ব্রিটেনের জনমানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ প্রদর্শনকারী নেতা জেরেমি করবিন।
দীর্ঘদিন ধরে সরকার চালাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া গণমানুষের দল, আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে হবে পুঁজিবাদের ক্রীড়নকদের। নগণ্য হলেও এখনও কিছু সুস্থ চিন্তার মানুষ সমাজে রয়েছেন। তাদের নিয়ে আসতে হবে নীতিনির্ধারণী পদগুলোতে। দূর করতে হবে একচ্ছত্র পুঁজিবাদ; সমন্বয় করতে হবে সাম্যবাদের সঙ্গে।
চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট
- বিষয় :
- সমকালীন প্রসঙ্গ