করোনায় কর্মসংস্থান
প্রয়োজন বহুমুখী পদক্ষেপ

প্রতীকী ছবি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২১ | ১২:০০
করোনা-দুর্যোগ দেশে কর্মসংস্থানের সংকট আরও বাড়িয়েছে নিঃসন্দেহে। করোনার সর্বব্যাপ্ত প্রভাব চাকরির বাজারে পড়েছে নানাভাবে। বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আমরা দেখেছি, একদিকে নতুন অনেক চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়া বন্ধ রয়েছে। আবার প্রকাশিত চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে অনেকে আবেদন করে বসে আছেন, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ পরীক্ষা হচ্ছে না। ইতোমধ্যে অনেকেরই বয়স শেষ হয়ে গেছে। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেশনজটের বিষয়টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। করোনার এ সময়ে চাকরির সংকটে অনেকের হতাশার বিষয়টিও গবেষণায় উঠে এসেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, চাকরির বাজারের এ সংকট নিয়ে প্রশাসনিক উদ্যোগ আমরা কমই দেখছি। এমনকি গত বছর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে পাঁচ মাস বয়স সমন্বয় করার যে কথা প্রশাসন বলেছিল, কার্যত তা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের ব্যাপারে মানা হলেও কর্মকর্তা পদে মানা হয়নি। তাহলে কেন সমন্বয়ের কথা বলা হলো? এমনিতেই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি দীর্ঘদিনের।
বিশেষ করে, করোনাকালের ক্ষতি বিবেচনায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স স্থায়ীভাবে ৩২ করার দাবি জানিয়ে আসছে চাকরিপ্রার্থীরা। স্থায়ীভাবে বিবেচনা করা না হলেও অন্তত করোনার সময়কালের জন্য চাকরিতে বয়সের প্রবেশসীমা দুই বছর বাড়ানো যেতে পারে। আমরা জানি, উচ্চশিক্ষা লাভের পর অধিকাংশই চাকরিতে প্রবেশ করতে চায়। পারিবারিক অবস্থা বিবেচনায় পড়াশোনা শেষে একটা চাকরি অনেকেরই জরুরি হয়ে পড়ে। করোনার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকা কিংবা ধীরগতি কেবল শিক্ষার্থীর জন্যই নয়, অনেক পরিবারের জন্যও বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতোমধ্যে গত বছরের শেষে অনার্স ও মাস্টার্সের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণ করলেও বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীরা এখনও বসে আছে। গত বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝিতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পর শিক্ষার অন্যান্য স্তরে অটোপাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী শ্রেণিতে উঠলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশেরই পরীক্ষা হয়নি। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাসময়ে যথাযথ উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। বলাবাহুল্য, বর্তমান সময়ে সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীই সরকারি চাকরিমুখী।
বাস্তবতা হলো, প্রতিবছর যে পরিমাণ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা শেষ করে তাদের মধ্যে সামান্য অংশই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পায়। সরকারি চাকরিতে আসন কম থাকায় প্রতিযোগিতাও হয় তীব্র। যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এখনও প্রায় চার লাখ পদ খালি রয়েছে এবং কর্মকর্তাদের অবসরজনিত কারণে দিন দিন তা আরও বাড়ছে। আমরা মনে করি, সরকারি শূন্য পদে দ্রুত জনবল নিয়োগ দেওয়া প্রয়াজন। এখনই তাদের নিয়োগের বিষয়টি সরকারিভাবে চূড়ান্ত করা হলে করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবে। নতুন বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পাশাপাশি যেসব নিয়োগ আটকে আছে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে সেগুলোরও দ্রুত পরীক্ষা নেওয়া জরুরি। আমরা দেখেছি, করোনার প্রভাবে বেসরকারি খাতের নিয়োগও অনেক বন্ধ হয়ে গেছে। বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জনবল ছাঁটাই করেছে। অনেকের বেতন কমিয়ে দিয়েছে। তার প্রভাবও চাকরির বাজারে পড়ছে ব্যাপকভাবে। দেশের এবং বিশ্বের অর্থনীতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত বেসরকারি খতের সংকট সহসা কাটছে না বলে বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য যথার্থ।
আমরা মনে করি, করোনায় সৃষ্ট চাকরির বাজারের সংকট মোকাবিলায় প্রশাসনিক এবং ব্যক্তিক উভয় ধরনের উদ্যোগ প্রয়োজন। করোনা-পরবর্তী বিশ্বে গতানুগতিক অনেক চাকরিই কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে নিজস্ব উদ্যোগের পাশাপাশি কাঙ্ক্ষিত চাকরির জন্য বসে না থেকে যে ধরনের কাজের সুযোগ সামনে আসবে, সেটাই গ্রহণ করা উচিত। ই-কমার্সসহ অনলাইনভিত্তিক কাজের সুযোগ বাড়ছে, স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ শিল্প সম্প্রসারিত হচ্ছে। এমনকি কৃষিতেও ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তরুণ প্রজন্মকে বহুমুখী যোগ্যতা অর্জনে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা প্রয়োজন। কর্মসংস্থানের সংকট মোকাবিলায় সরকারকে কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষায় আরও জোর দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে বৈশ্বিক চাহিদার নিরিখে অন্যান্য দেশে প্রশিক্ষিত জনশক্তি পাঠানোর ব্যাপারেও প্রশাসনের অগ্রণী ভূমিকা প্রত্যাশিত।
- বিষয় :
- করোনায় কর্মসংস্থান