ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

বর্ষণে ধানডুবি: কৃষকের স্বপ্ন ভাসিয়ে রাখুন

বর্ষণে ধানডুবি: কৃষকের স্বপ্ন ভাসিয়ে রাখুন

মুজিববর্ষ আন্তঃকলেজ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১২ মে ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৩ মে ২০২২ | ০০:১০

বঙ্গোপসাগরে দেখা দেওয়া ঘূর্ণিঝড় 'আসানি' শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ এড়িয়ে ভারতের অল্প্রব্দপ্রদেশের উপকূলে গিয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে- এটা শঙ্কার মধ্যেও স্বস্তির খবর হতে পারত। কিন্তু আমরা দেখছি, ঘূর্ণিঝড় অন্যদিকে চলে গেলেও এর প্রভাবে সৃষ্ট ভারি বর্ষণের হাত থেকে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চল রেহাই পায়নি। শুধু উপকূল নয়; বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে গত কয়েক দিন ধরে চলেছে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ এমন সময়ে দেখা দিয়েছে, যখন অধিকাংশ অঞ্চলে মাঠে ছিল পাকা বোরো ধান। আমরা দেখেছি, আরও কয়েক সপ্তাহ আগে হাওরাঞ্চলে একইভাবে পাকা ও আধাপাকা ধান অকালবন্যার শিকার হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় প্রভাবিত এই বর্ষণে এবার বাকি অঞ্চলের ধানও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কৃষকের ঘরে উঠতে পারল না। বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে চলনবিল, বরেন্দ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগকবলিত ধানক্ষেত নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, তার শিরোনামই অনেক কথা বলে- 'ডুবছে কৃষকের স্বপ্ন। কৃষক যখন বছরের প্রধান মৌসুমের প্রধান ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছিল, তখন কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সব ধানগাছ মাটিতে পড়ে বা পানিতে ডুবে যাওয়া স্বপ্ন ডোবা ছাড়া আর কী হতে পারে!

আলোচ্য প্রতিবেদনে স্থান না পেলেও এটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই যে, একই চিত্র দেশের অন্যান্য অঞ্চলেরও। এই আশঙ্কাও অমূলক হতে পারে না যে, ধান ছাড়া অন্যান্য ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এই বর্ষণে। শুকনো মাঠের তরমুজ পানিতে ডুবে রয়েছে- এমন একটি দৃশ্যও প্রধান আলোকচিত্র হিসেবে বুধবার সমকালে প্রকাশ হয়েছে। আমরা দেখতে চাইব, অবিলম্বে মাঠ পর্যায়ে চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে আনা হবে এবং সে অনুযায়ী ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মসূচি গৃহীত হবে। তবে সবকিছুর আগে দিশেহারা কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, বোরো মৌসুম কেবল কৃষকের জন্য ব্যক্তিগতভাবে প্রধান খাদ্য ও অর্থকরী অবলম্বন নয়; এর সঙ্গে দেশের সামগ্রিক খাদ্যশস্য উৎপাদনের বিষয়টিও জড়িত। এমনিতেই নানা কারণে কৃষি বিশেষত ধান উৎপাদন গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে। এখন যদি নতুন বিপত্তি হিসেবে বর্ষণে কৃষকের স্বপ্ন ডুবে যায়, তাহলে সবারই বিপদ। আমরা চাই, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে ঔদাসীন্য ও দীর্ঘসূত্রতা ঘটবে না। বিভিন্ন ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মসূচিতে যে 'ধ্রুপদি' অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি দেখা যায়, এ ক্ষেত্রে তার পুনরাবৃত্তি হবে আত্মঘাতী।

অনেক কৃষকই সরকারি ও বেসরকারি উৎস থেকে ঋণ নিয়ে ধান চাষাবাদ করেছেন; আমাদের ধারণা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক যাতে সেই ঋণ মওকুফ কিংবা পরিশোধের জন্য সুবিধাজনক শর্ত পেতে পারেন, সে ব্যাপারে ইতিবাচক উদ্যোগ দেখতে চাই আমরা। দেশের অনেক অঞ্চলেই এখন 'হার্ভেস্টিং মেশিন' ব্যবহূত হচ্ছে। কিন্তু সমকালের প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, বর্ষণে শুয়ে পড়া ধান তোলার ক্ষেত্রে এই যন্ত্র কোনো কাজে আসেনি। এসব যন্ত্রের দাম পরিশোধের কিস্তি বিলম্বিত বা হ্রাস বা রেয়াত করা যায় কিনা, সংশ্নিষ্টদের ভেবে দেখতে বলি আমরা।

স্বীকার করতে হবে, গত কয়েক বছরে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণ সহজ করতে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু বিশেষত বোরো মৌসুমে দেখা যায় কৃষক তার উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পায় না। সরকার ধান ও চাল সংগ্রহের যে কর্মসূচি গ্রহণ করে, তাতে লাভ হয় মূলত মধ্যস্বত্বভোগীদের। এ বছর কৃষকের ক্ষতি বিবেচনায় যেটুকু ধান ঘরে তুলতে পেরেছে, তার ন্যায্য এমনকি প্রণোদনাসাপেক্ষে বাড়তি মূল্য দেওয়া যেতে পারে। ভুলে যাওয়া চলবে না যে, করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্বজুড়েই খাদ্য খাতে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই আগুনে ঘি ঢেলেছে। ফলে খাদ্যশস্যের মতো 'স্পর্শকাতর' পণ্য অর্থ থাকলেও স্বল্পসময়ের মধ্যে আমদানি করা যাবে না। বস্তুত কৃষি সংক্রান্ত যে কোনো দুর্যোগে তাৎক্ষণিক অথচ দূরদর্শী পদক্ষেপই কেবল যেমন কৃষকদের, তেমনই দেশের খাদ্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও সুরক্ষিত রাখতে পারে। কৃষকের স্বপ্ন ভাসিয়ে রাখতে আমরা তেমন উদ্যোগই দেখতে চাই।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×