প্রযুক্তি
আর্থিক সেবায় প্রতিবন্ধকতা সরাবে 'বিনিময়'

শেখ মো. মনিরুল ইসলাম
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০
বাংলাদেশে ডিজিটাল রূপান্তরের অগ্রযাত্রায়, বিশেষ করে আর্থিক পরিষেবার ইকোসিস্টেমে, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এমএফএস) মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির গতি সঞ্চার হয়েছে আজ এক যুগেরও অধিক সময়। কভিডকালে নগদের ব্যবহারে সর্বস্তরের মানুষ যখন আগ্রহ হারাল, তখন এমএফএসের ব্যবহার সব মানুষের জন্য বয়ে আনল স্বাচ্ছন্দ্য। বিকাশসহ অন্যান্য এমএফএস প্রদানকারী তাদের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে আর্থিক পরিষেবার পরিধি বৃদ্ধি করে চলেছে নিরন্তর।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সাফল্য পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে গ্রাহকদের ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে সার্বিক লেনদেনের সুবিধা প্রদানে ইন্টারঅপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফর্মের (আইডিটিপি) প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। গত ১১ নভেম্বর সেই বহুল প্রতীক্ষিত আইডিটিপির শুভ উদ্বোধন হলো, যা এখন 'বিনিময়' নামে পরিচিত। প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে আন্তঃব্যবহারযোগ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি আর্থিক লেনদেনকে আরও সহজ, প্রতিযোগিতামূলক এবং উদ্ভাবনী করতে সক্ষম করবে।
বিনিময় একটি আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থা, যা প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত পৃথক এমএফএসের পাশাপাশি পৃথক ব্যাংক ও পৃথক পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) গ্রাহকদের মধ্যে প্রয়োজন ও ইচ্ছামাফিক, সরাসরি এবং তাৎক্ষণিক আন্তঃলেনদেনের সুবিধা দেয়। এটি কোনো আলাদা অ্যাপ নয়। এটি একটি সেবা হিসেবে ব্যাংক ও এমএফএস সংস্থাগুলোর অ্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংযুক্ত এমএফএস বা ব্যাংকের যে কোনো অ্যাকাউন্ট দিয়ে গ্রাহক 'বিনিময়' ব্যবহার করে আন্তঃলেনদেন করতে পারবেন। পরিষেবাটি গ্রাহক, মার্চেন্ট, আর্থিক সংস্থা এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেনের সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করবে। বিনিময়ের যাত্রা শুরুর আগ পর্যন্ত ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপির মধ্যে আন্তঃলেনদেনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ এবং আটটি ব্যাংক প্রাথমিকভাবে তাদের গ্রাহকদের জন্য এই সুবিধা প্রদান শুরু করেছে। বিনিময় ডিজিটাল সেবার সাম্প্র্রতিক পদক্ষেপের মধ্যে একটি সময়োপযোগী ও যুগান্তকারী উদ্যোগ। বিনিময় সেবাটি ব্যবহার করতে হলে গ্রাহকের প্রথমত তাঁর ব্যাংক বা এমএফএস অ্যাপে 'বিনিময়' আইকনে গিয়ে নিবন্ধন করে একটি ভার্চুয়াল আইডি (ভিআইডি) তৈরি করতে হবে। কাউকে টাকা পাঠাতে চাইলে 'ডিরেক্ট পে' অপশনে গিয়ে প্রাপকের ভার্চুয়াল আইডি ও টাকার পরিমাণ লিখে পাঠানো যাবে। বিনিময়ে নিবন্ধন করা থাকলে আলাদাভাবে নাম, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তথ্য কিংবা ফোন নম্বর দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। ক্রমান্বয়ে এটি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সেবা যেমন ট্যাক্স জমা, ট্রান্সপোর্ট টিকিট ক্রয়, রাস্তা ও সেতুর টোল সংগ্রহ, ই-কমার্স অপারেশনসহ অনেক কিছুতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। এ ছাড়া বিনিময়ে ব্যবহূত অথোরাইজেশন স্ট্যান্ডার্ড প্রতিটি লেনদেন যাচাই করে। যার ফলে আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধ করা আরও সহজ হবে ও অর্থ পাচার, সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং কর ফাঁকি দেওয়া কঠিন হবে বলে ধারণা করা যায়।
আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র বেগবান করার সঙ্গে সঙ্গে নতুন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে সব আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সুষম পরিবেশ গড়ে তুলতে বিনিময় প্ল্যাটফর্ম অনন্য ভূমিকা পালন করবে। এর মাধ্যমে সর্বস্তরের গ্রাহকদের জন্য সেবার মান সহজ ও উন্নত হবে বলে আশা করা যায়। লেনদেনের জন্য গ্রাহকদের এখন আর কোনো 'নির্দিষ্ট একটি প্ল্যাটফর্ম' বেছে নিতে হবে না। যেহেতু গ্রাহকদের এখন আন্তঃলেনদেনের সুবিধার কারণে উন্নতমানের সেবাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেহেতু আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই নতুন ব্যবস্থায় আরও সক্ষমতার সঙ্গে সেবা প্রদানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। প্রতিযোগিতামূলক অগ্রগণ্যতা নির্ধারিত হবে সেবার মান, গ্রাহকের মতামত ও ব্র্যান্ডের প্রতি গ্রাহকদের আনুগত্য দ্বারা। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে আক্রমণাত্মক ও নেতিবাচক প্রচারণায় লিপ্ত প্রতিযোগীরা উন্নতি করতে ব্যর্থ হবে।
ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে কয়েক বছর ধরে ব্যাংক এবং এমএফএসের ব্যবহার যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বোপরি, দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী বিশেষ করে ডিজিটাল পেমেন্ট সংস্কৃতির দিকে ঝুঁঁকছে দ্রুততার সঙ্গে। সে ক্ষেত্রে বিনিময় দেশের ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। কারণ এর লক্ষ্য গ্রাহকদের ক্ষমতায়ন করা এবং পরিষেবা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের আরও স্বাধীনতা দেওয়া। বিনিময় সব ধরনের আর্থিক সেবা স্বচ্ছ ও সহজ করবে, যার মধ্যে শিগগিরই চালু হবে বেতন প্রদান, রেমিট্যান্স পাঠানো, ট্যাক্স প্রদান, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ এবং ই-কমার্স লেনদেন করার সেবা। আশা করা যায়, এটি অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনবে এবং আর্থসামাজিক অগ্রগতি সহজতর করবে। আমরা যত এ ধরনের উদ্ভাবনের সম্মুখীন হবো এবং ব্যবহার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জন করব, ততটাই বুঝতে পারব বিনিময়কে কার্যকর করার সিদ্ধান্তটি ব্যবসায়িক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে কতটুকু কার্যকর ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। বিনিময় শিগগিরই 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'-এর স্বপ্ন বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে যাচ্ছে।
মেজর জেনারেল (অব.) শেখ মো. মনিরুল ইসলাম: চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার, বিকাশ
আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সাফল্য পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে গ্রাহকদের ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে সার্বিক লেনদেনের সুবিধা প্রদানে ইন্টারঅপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফর্মের (আইডিটিপি) প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। গত ১১ নভেম্বর সেই বহুল প্রতীক্ষিত আইডিটিপির শুভ উদ্বোধন হলো, যা এখন 'বিনিময়' নামে পরিচিত। প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে আন্তঃব্যবহারযোগ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি আর্থিক লেনদেনকে আরও সহজ, প্রতিযোগিতামূলক এবং উদ্ভাবনী করতে সক্ষম করবে।
বিনিময় একটি আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থা, যা প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত পৃথক এমএফএসের পাশাপাশি পৃথক ব্যাংক ও পৃথক পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) গ্রাহকদের মধ্যে প্রয়োজন ও ইচ্ছামাফিক, সরাসরি এবং তাৎক্ষণিক আন্তঃলেনদেনের সুবিধা দেয়। এটি কোনো আলাদা অ্যাপ নয়। এটি একটি সেবা হিসেবে ব্যাংক ও এমএফএস সংস্থাগুলোর অ্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংযুক্ত এমএফএস বা ব্যাংকের যে কোনো অ্যাকাউন্ট দিয়ে গ্রাহক 'বিনিময়' ব্যবহার করে আন্তঃলেনদেন করতে পারবেন। পরিষেবাটি গ্রাহক, মার্চেন্ট, আর্থিক সংস্থা এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেনের সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করবে। বিনিময়ের যাত্রা শুরুর আগ পর্যন্ত ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপির মধ্যে আন্তঃলেনদেনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ এবং আটটি ব্যাংক প্রাথমিকভাবে তাদের গ্রাহকদের জন্য এই সুবিধা প্রদান শুরু করেছে। বিনিময় ডিজিটাল সেবার সাম্প্র্রতিক পদক্ষেপের মধ্যে একটি সময়োপযোগী ও যুগান্তকারী উদ্যোগ। বিনিময় সেবাটি ব্যবহার করতে হলে গ্রাহকের প্রথমত তাঁর ব্যাংক বা এমএফএস অ্যাপে 'বিনিময়' আইকনে গিয়ে নিবন্ধন করে একটি ভার্চুয়াল আইডি (ভিআইডি) তৈরি করতে হবে। কাউকে টাকা পাঠাতে চাইলে 'ডিরেক্ট পে' অপশনে গিয়ে প্রাপকের ভার্চুয়াল আইডি ও টাকার পরিমাণ লিখে পাঠানো যাবে। বিনিময়ে নিবন্ধন করা থাকলে আলাদাভাবে নাম, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তথ্য কিংবা ফোন নম্বর দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। ক্রমান্বয়ে এটি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সেবা যেমন ট্যাক্স জমা, ট্রান্সপোর্ট টিকিট ক্রয়, রাস্তা ও সেতুর টোল সংগ্রহ, ই-কমার্স অপারেশনসহ অনেক কিছুতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। এ ছাড়া বিনিময়ে ব্যবহূত অথোরাইজেশন স্ট্যান্ডার্ড প্রতিটি লেনদেন যাচাই করে। যার ফলে আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধ করা আরও সহজ হবে ও অর্থ পাচার, সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং কর ফাঁকি দেওয়া কঠিন হবে বলে ধারণা করা যায়।
আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র বেগবান করার সঙ্গে সঙ্গে নতুন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে সব আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সুষম পরিবেশ গড়ে তুলতে বিনিময় প্ল্যাটফর্ম অনন্য ভূমিকা পালন করবে। এর মাধ্যমে সর্বস্তরের গ্রাহকদের জন্য সেবার মান সহজ ও উন্নত হবে বলে আশা করা যায়। লেনদেনের জন্য গ্রাহকদের এখন আর কোনো 'নির্দিষ্ট একটি প্ল্যাটফর্ম' বেছে নিতে হবে না। যেহেতু গ্রাহকদের এখন আন্তঃলেনদেনের সুবিধার কারণে উন্নতমানের সেবাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেহেতু আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই নতুন ব্যবস্থায় আরও সক্ষমতার সঙ্গে সেবা প্রদানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। প্রতিযোগিতামূলক অগ্রগণ্যতা নির্ধারিত হবে সেবার মান, গ্রাহকের মতামত ও ব্র্যান্ডের প্রতি গ্রাহকদের আনুগত্য দ্বারা। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে আক্রমণাত্মক ও নেতিবাচক প্রচারণায় লিপ্ত প্রতিযোগীরা উন্নতি করতে ব্যর্থ হবে।
ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে কয়েক বছর ধরে ব্যাংক এবং এমএফএসের ব্যবহার যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বোপরি, দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী বিশেষ করে ডিজিটাল পেমেন্ট সংস্কৃতির দিকে ঝুঁঁকছে দ্রুততার সঙ্গে। সে ক্ষেত্রে বিনিময় দেশের ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। কারণ এর লক্ষ্য গ্রাহকদের ক্ষমতায়ন করা এবং পরিষেবা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের আরও স্বাধীনতা দেওয়া। বিনিময় সব ধরনের আর্থিক সেবা স্বচ্ছ ও সহজ করবে, যার মধ্যে শিগগিরই চালু হবে বেতন প্রদান, রেমিট্যান্স পাঠানো, ট্যাক্স প্রদান, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ এবং ই-কমার্স লেনদেন করার সেবা। আশা করা যায়, এটি অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনবে এবং আর্থসামাজিক অগ্রগতি সহজতর করবে। আমরা যত এ ধরনের উদ্ভাবনের সম্মুখীন হবো এবং ব্যবহার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জন করব, ততটাই বুঝতে পারব বিনিময়কে কার্যকর করার সিদ্ধান্তটি ব্যবসায়িক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে কতটুকু কার্যকর ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। বিনিময় শিগগিরই 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'-এর স্বপ্ন বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে যাচ্ছে।
মেজর জেনারেল (অব.) শেখ মো. মনিরুল ইসলাম: চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার, বিকাশ
- বিষয় :
- প্রযুক্তি
- শেখ মো. মনিরুল ইসলাম