ঢাকা রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

অধিক সন্ন্যাসী

অধিক সন্ন্যাসী

সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মো. মকবুল হোসেন- ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০

রাজধানীতে ইমারত নির্মাণে রাজউক তথা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের পূর্বে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন লইবার বাধ্যবাধকতা সংক্রান্ত উদ্যোগটি কতটুকুু বাস্তবসম্মত, উক্ত বিষয়ে সন্দেহ পোষণের যথেষ্ট অবকাশ রহিয়াছে। সোমবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন 'ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আওতাধীন এলাকায় ভূমি উন্নয়ন, ইমারত নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ প্রবিধান ২০২২' নামক প্রবিধানমালা চূড়ান্ত হইলে সেইগুলি আপাতত দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-ডিএসসিসি এলাকায় কার্যকর হইবে। ইহার ফলে উক্ত এলাকার বাসিন্দাগণকে ইমারত নির্মাণে প্রথমে ডিএসসিসির দ্বারস্থ হইতে হইবে। ডিএসসিসির অনুমোদনপ্রাপ্তির পর রাজউকের অনুমোদন চাহিয়া আবেদন করা যাইবে। বর্তমানে ইমারত নির্মাণে শুধু রাজউকের অনুমোদনের জন্য রাজধানীবাসীকে কী মাত্রায় আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা পোহাইতে হয়, উহা শুধু সাধারণ মানুষ নন; নীতিনির্ধারক মহলও সম্যক অবগত। প্রস্তাবিত প্রবিধানমালা চূড়ান্ত করিয়া কার্যকর করিবার পর সেই যন্ত্রণা কোথায় গিয়া দাঁড়াইবে- ভাবিলেও মেরুদণ্ড দিয়া হিম প্রবাহিত হইবার কথা। বলা বাহুল্য, অন্যান্য সরকারি পরিষেবা দানকারী সংস্থার মতো রাজউক এবং ডিএসসিসির বিরুদ্ধেও অনিয়মের অভিযোগ বিস্তর। সেই দিক হইতে ইমারত নির্মাণে তদারকির দায়িত্ব রাজউকের সহিত ডিএসসিসির উপর অর্পিত হইলে নিয়মবহির্ভূত খাতে সেবাপ্রত্যাশীর ব্যয় দ্বিগুণ হইবার সমূহ আশঙ্কা। ইহার সহিত বৈধ ব্যয়ও বৃদ্ধি পাইবে। প্রতিবেদন অনুসারে, প্রস্তাবিত প্রবিধানমালায় বলা হইয়াছে- ইমারত নির্মাণের অনুমোদনপ্রত্যাশীকে অন্তত ১৭টা ফরমে আবেদন করিতে হইবে; যাহার প্রতিটা ক্রয় করিতে হইবে সহস্র টাকা ব্যয়ে। ইহার সহিত যুক্ত হইবে ইমারতের ফ্লোর স্পেসের ফি, যাহা ৩০ সহস্র বর্গমিটারের অধিক হইলে আবেদনকারীকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমা দিতে হইবে। এই বিপুল পরিমাণ বৈধ-অবৈধ বর্ধিত ব্যয় রাজধানীতে শুধু ইমারত নির্মাণ ব্যয়ই বৃদ্ধি করিবে না; বাড়ি ভাড়াও বহুগুণে
বৃদ্ধি পাইবে। মোদ্দা কথা, আলোচ্য উদ্যোগটির কারণে রাজধানীতে বিশেষত
সীমিত আয়ের মানুষদিগের বসবাস দুরূহ হইয়া উঠিবে- এই শঙ্কা অমূলক
হইতে পারে না।
স্মরণ করা যাইতে পারে, এক সময় ইমারত নির্মাণে রাজউকের অনুমতির জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশনের অনাপত্তি সংগ্রহের বিধান ছিল। কিন্তু অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজীকরণ; তৎসহিত সেবাপ্রত্যাশীগণের ভোগান্তি হ্রাসের নিমিত্তে বিধানটা রহিত করা হয়। এখন পরিহাসজনকভাবে ঐ বিধানই শুধু ফিরাইয়া আনা হইতেছে না; পূর্ণ প্রক্রিয়াকেই অধিকতর জটিল করা হইতেছে। সংশ্নিষ্ট খাতের নীতিনির্ধারকদিগের এহেন বিধানকে তুঘলকি সিদ্ধান্ত বলিলে খুব কি অত্যুক্তি হইবে? আলোচ্য প্রবিধানমালা প্রণয়নের সহিত যুক্ত ডিএসসিসির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ বলিয়াছেন, রাজধানীতে ইমারত নির্মাণকালে চতুষ্পার্শ্বে নির্ধারিত পরিমাণ স্থান ছাড়িয়া দেওয়াসহ ইমারত মালিক কর্তৃক অবশ্যপালনীয় নিয়মসমূহের ব্যত্যয় রোধ করিতে রাজউক ব্যর্থ হইয়াছে। যাহার কারণে সিটি করপোরেশনের সেবা প্রদানেও সমস্যা হইতেছে। তাঁহার এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে উড়াইয়া দিবার সুযোগ নাই। কিন্তু প্রশ্ন হইল, ডিএসসিসি বিদ্যমান জনবল লইয়া উহার প্রতিশ্রুত সেবা প্রদানেই হিমশিম খাইতেছে; এক্ষণে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করিবে কী রূপে? আর একটা বিশেষায়িত দায়িত্ব পালনকল্পে রাজউকের যতটুকু দক্ষ জনবল বিদ্যমান, ততটুকুও কি ডিএসসিসির আছে? ইমারত নির্মাণ তদারকি করিতে যাইয়া সরকারি দুই সংস্থার মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা; এমনকি দ্বন্দ্ব-সংঘাত ঘটিবে না- উহার নিশ্চয়তাই বা কে প্রদান করিবে? দুই সংস্থার ধাক্কাধাক্কির কারণে অধিক সন্ন্যাসীর কারণে গাজন নষ্ট হইবার মতো ঘটনাও যে ঘটিতে পারে, এমন শঙ্কাও উড়াইয়া দেওয়া যায় না।
সম্পূর্ণ রাজধানীকে যদি বহুল আলোচিত নগর সরকারের মতো একক এবং শক্তিশালী কোনো নির্বাচিত সংস্থার অধীন লওয়া যাইত, তাহা হইলে হয়তো বিভিন্ন সেবার মান বৃদ্ধি; তৎসহিত ইমারত নির্মাণেও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা সম্ভব হইত। সরকার যদি সেই পথে হাঁটিতে না চাহে, তাহা হইলে আমাদিগের পরামর্শ- দ্রুত আলোচ্য উদ্যোগটি বন্ধ করা হউক। উহার পর সংশ্নিষ্ট বিশেষজ্ঞগণের পরামর্শ লইয়া রাজউকের প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন ও জনবল বৃদ্ধিপূর্বক নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে সংস্থাটিকে সক্ষমকরণের পাশাপাশি কঠোর জবাবদিহির আওতায় আনিতে হইবে।

আরও পড়ুন

×