অন্যদৃষ্টি
সাদ্দাম-ইনান পারবেন?
মিজান শাজাহান
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৬:১৬
ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের ১৩ দিন পর মঙ্গলবার রাতে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাদ্দাম হোসেনকে সভাপতি এবং একই বিভাগের শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাদ্দামের বাড়ি পঞ্চগড়, ইনানের ঝালকাঠি। আঞ্চলিকতার পাশাপাশি 'মাই ম্যান' দিয়ে কমিটি করতে গিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের পরিণতি আমরা বারবার দেখেছি। পুরোনো পথে হাঁটলে খেসারত তাঁদেরই দিতে হবে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রয়েছে সোনালি অতীত। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকা স্মরণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে নানা কারণে বারবার সংবাদমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হয়েছে উপমহাদেশের প্রাচীন এ ছাত্র সংগঠনটি। শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে দিয়ে জয়-লেখককে ছাত্রলীগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। করোনার সময় কৃষকের ধান কেটে দেওয়ার পাশাপাশি দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণ করে ইতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হয়েছে ছাত্রলীগ। কিন্তু সেই অর্জনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি সংগঠনটি। আলোচিত বিশ্বজিৎকে হত্যা করেছে, তাদের দায়িত্ব এ সংগঠন নেয়নি। আমরা জানি, ব্যক্তির অপরাধের দায় সংগঠন নেয় না। অভিযোগ ওঠার পর সাময়িক বহিস্কারের পথে হেঁটে তাৎক্ষণিক মাছ দিয়ে শাক ঢাকার চেষ্টা করা হয়। ইডেন কলেজে ছাত্রী নির্যাতনের পাশাপাশি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আলোড়ন সৃষ্টি করলেও, বিষয়টি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এত অভিযোগের পরও ইডেন কলেজের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নিয়ে বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার এর নিকটতম উদাহরণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন হলে ডেকে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনা সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতারা পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের মারধর করেছে। ঝিনাইদহে এক নেতা পরীক্ষা কেন্দ্রে লাইভ করে শিরোনাম হয়েছে। কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছে ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী ছাত্র সংগঠনের নেতারা।
সাদ্দাম এবং ইনান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়ালেখা করেছেন। সাদ্দাম এতদিন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন; ডাকসুর সর্বশেষ এজিএস হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। অন্যদিকে ইনান ছাত্রলীগের বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের আগে ঢাবির বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
ছাত্রলীগ গর্ব করে বলে- অস্ত্র নয়, কলমই শক্তি। আমরা আশায় বুক বাঁধতে চাই- সাদ্দাম-ইনানের দায়িত্বকালে কোনো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর হাতে অস্ত্র দেখব না। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হবে না। দলীয় নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে না। হলে সিট বাণিজ্য, ক্যান্টিনে চাঁদাবাজি ও টর্চার সেলে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হবে না। ক্যাম্পাসে প্রতিপক্ষকে হামলার শিকার হতে হবে না।
আদর্শের ছাত্র রাজনীতি দলীয় লেজুড়বৃত্তিতে পরিণত হয়েছে। যে কারণে হলে আবাসন ব্যবস্থা ও ক্যান্টিনে খাবারের মানোন্নয়নের আন্দোলনের বদলে দলীয় স্বার্থসংশ্নিষ্ট আন্দোলন বেশি দেখা যায়। প্রকৃত শিক্ষার্থীদের নিয়েই গঠিত হওয়া উচিত ছাত্র সংগঠনের কমিটি। কিন্তু কোনো কোনো সংগঠনে দেখা যায়, অছাত্র কেউ কেউ সংগঠনের শীর্ষ নেতা হয়েছেন। ছাত্র রাজনীতি হওয়ার কথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে তাদের কার্যক্রম। এসব ইউনিটকে সমন্বয়ের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি থাকবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এসব সংগঠনের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা, জেলা ও মহানগর কমিটি হচ্ছে। এসব কমিটির কোনো কোনো নেতা জড়িয়ে পড়েন টেন্ডারবাজিতে। এলাকাভিত্তিক চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে। পকেট আর দল ভারী করতে গিয়ে কোনো কোনো সময় জড়িয়ে পড়েন সহিংসতায়।
বিএনপির আমলে ছাত্রদলের গোলাগুলিতে বুয়েট ছাত্রী সনি প্রাণ হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগের আমলে এসে বুয়েট ছাত্র আবরার ছাত্রলীগের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। এ যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করে ছাত্রলীগের হারানো অতীত ফিরিয়ে আনতে পারলে সাদ্দাম-ইনানকে ধন্যবাদ জানাব।
মিজান শাজাহান: সহ-সম্পাদক, সমকাল
mizanshajahan@gmail.com
- বিষয় :
- অন্যদৃষ্টি
- মিজান শাজাহান