ঢাকা বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

সম্ভাবনার বর্ষ

সম্ভাবনার বর্ষ

শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের টবগী-১ কূপের খননকাজ শুরু হয় গত ১৯ আগস্ট। ফাইল ছবি

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৮:০০ | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ | ২০:৫৪

গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির আরেকটা বৎসর বিদায় লইল, আরম্ভ হইল নতুন বর্ষ-২০২৩। নতুনের বন্দনার অংশ হিসাবে আমরা ২০২৩ সাল আড়ম্বরের সহিত বরণের আনুষ্ঠানিকতা দেখিতেছি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রায় সকল কিছুই এই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী পরিচালিত হয় বলিয়া দেশে সরকারি ছুটিসহ সরকারি-বেসরকারি নানামুখী পরিকল্পনা নতুন বৎসর আসিবার পূর্বেই করা হয়। বিদায়ী বৎসরটি যখন আরম্ভ হইয়াছিল, তখনও প্রায় দুই বৎসর পূর্ব হইতে তাণ্ডব চালানো করোনা অতিমারি সম্পূর্ণরূপে বিদায় হয় নাই। অর্থনীতির গতি ধরিয়া রাখিতে এবং মানুষের রুটি-রুজির কথা বিবেচনা করিয়া অতিমারি প্রতিরোধে আরোপিত ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলিয়া লওয়া হইলেও তখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ পুরোদমে কার্যক্রম আরম্ভ করে নাই। তবে সরকারের সময়মতো টিকাকরণ কর্মসূচি গ্রহণের ফলে এবং সচেতন মানুষদের স্বাস্থ্যবিধি অনেকাংশে প্রতিপালনের কারণে করোনা পরিস্থিতি খুব দ্রুতই নিয়ন্ত্রণে চলিয়া আসে; জাতীয় অর্থনীতিসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রই করোনা-পূর্ববর্তী সময়ের গতি পুনরুদ্ধার করিতে থাকে। কিন্তু অনেকটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো বিদায়ী বৎসরের ফেব্রুয়ারিতে আচম্বিতেই আরম্ভ হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ; ইহার প্রভাবে জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের বিশ্ববাজার টালমাটাল হইয়া উঠে; দেশে দেশে স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে চড়িয়া যায় বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম মার্কিন ডলারের মূল্য। আমদানিনির্ভর বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই এই সংকটের কবলে পড়ে। ফলে একদিকে সকল প্রকার নিত্যপণ্যের মূল্য আকাশচুম্বী হইয়া উঠে, আরেকদিকে জাতীয় অর্থনীতি নিপতিত হয় বহুবিধ সংকটে। তবে কিছুটা বিলম্ব হইলেও সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপর হয়; যাহার ফলস্বরূপ অর্থনীতি ধীরলয়ে হইলেও সচল থাকে এবং সাধারণ মানুষও কোনো না কোনো প্রকারে ক্ষুণ্ণিবৃত্তি মিটাইতে সক্ষম হয়। এই প্রসঙ্গে দেশের অতি ঘাতসহ কৃষির কথা না বলিলেই নহে। করোনার সময়ে অন্য সব খাত যখন প্রায় স্থবির হইয়া পড়ে, তখন বহুবিধ বঞ্চনা সত্ত্বেও কৃষককুল উৎপাদন সচল রাখেন। গত এক যুগ ধরিয়া এই খাতে সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন নীতি-সহায়তাও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হইল, দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করিয়া বিদায়ী বৎসরেই সরকার স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করে; সম্প্রতি চালু হইল পরিবহনের ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক বাহন মেট্রোরেল। এক নগর দুই শহর তিমের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত টানেলের কাজও প্রায় সমাপ্ত হয় বিদায়ী বৎসরে। আশা করা হইতেছে, এই জানুয়ারিতেই ইহা যান চলাচলের জন্য খুলিয়া দেওয়া হইবে। প্রায় বিশেষজ্ঞই মনে করেন, এইসব মেগাপ্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের ফলে আমাদের অর্থনীতি নতুন বৎসরে পূর্বের চাইতেও গতিশীল হইবে; দেশ আগাইয়া যাইবে ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্ন পূরণের দিকে।

এমন সব সম্ভাবনা লইয়া নতুন বৎসরে পদার্পণ নিশ্চয় বেশ আনন্দের বিষয়। তবে ইহাও মনে রাখিতে হইবে, এই সম্ভাবনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফলবান হইবে না; ইহার জন্য প্রয়োজন হইবে সরকারের পক্ষ হইতে বহুবিধ সচেতন প্রয়াস। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতে বহুদিন ধরিয়াই খেলাপি ঋণের পর্বত জমিয়াছে; একই সঙ্গে বহু কেলেঙ্কারিময় ঘটনাও এই খাতে ঘটিয়াছে। বিশেষজ্ঞগণ বহু বৎসর ধরিয়া এই সব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধে ব্যাংক ও আর্থিক সংস্থাগুলোতে ব্যাপক সংস্কার সাধনের পরামর্শ দিয়া আসিতেছেন; বাজেটের রাজস্ব ঘাটতি কমাইবার জন্যও তাহারা এই খাতে সংস্কারের কথা বলিয়া আসিতেছেন। নতুন বৎসরে এই সব পরামর্শ এড়াইয়া যাইবার অবকাশ নাই বলিয়া আমরা মনে করি। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হইল, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রাখিয়া, বিশেষত ইহার পরিচালনা পদ্ধতি লইয়া শাসক দল ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক উত্তাপ সৃষ্টি হইয়াছে; আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে উহার আশু সমাধান জরুরি হইয়া পড়িয়াছে, নতুবা তাহা রাজনৈতিক ঝড়ের রূপ পরিগ্রহ করিয়া দেশের অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রের অর্জন লন্ডভন্ড করিয়া দিতে পারে।

বছরটি পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাইলে অনেক চ্যালেঞ্জই মোকাবিলা করা সহজ হইবে এবং আমাদের অগ্রযাত্রা নতুন বছরেও অব্যাহত থাকিবে। নতুন বছরের প্রথম দিনে আমরা সমকাল পরিবারের পক্ষ থেকে পাঠক, লেখক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ীসহ দেশবাসীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।

আরও পড়ুন

×