সাক্ষাৎকারে সিটিটিসিপ্রধান মো. আসাদুজ্জামান
লন্ডন থেকে জঙ্গি অর্থায়ন তদন্ত করছে যুক্তরাজ্য

সাহাদাত হোসেন পরশ
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৮:০০ | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ | ২০:৫৫
উগ্রপন্থিরা অনেক সময়ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি এড়িয়ে তাদের অপারেশন সম্পন্ন করে। তারা গোয়েন্দাদের তথ্যপ্রযুক্তিগত তদারকির যে দুর্বলতা রয়েছে তার সুযোগ নেয়। তথ্যপ্রযুক্তির এমন অনেক ব্যবস্থা রয়েছে যেগুলোর ওপর নজর রাখার সক্ষমতা এখনও গড়ে ওঠেনি। তারা এমন কিছু বিশেষ গোপন অ্যাপ ব্যবহার করে যেটা তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না। শুধু আমরা কেন, সাইবার জগতে বিশ্বের যেসব দক্ষ ও শক্তিশালী তাদের এসব অ্যাপের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই। এখন হয়তো আমরা পারছি না; আগামী দিনে এসব অ্যাপের ওপর নজরদারি থাকবে। সেই সক্ষমতা অর্জন করব। তখন জঙ্গিদের আরও কোণঠাসা করা যাবে। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর আমরা দেখেছি তারা কোন প্রযুক্তিতে কাজটি করেছে। জঙ্গিদের এই প্রযুক্তির কাউন্টার করতে আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের যে কাউন্টার পার্ট রয়েছে তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। এ নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। গতকাল শনিবার পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। জঙ্গিবাদের বর্তমান বাস্তবতা ও আগামীর চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জঙ্গিদের অর্থের মূল উৎস হলো সমর্থকদের কাছ থেকে পাওয়া চাঁদা। এর বাইরে বিভিন্ন উৎস থেকে তাদের কাছে অর্থ যাচ্ছে। ২০২২ সালে জঙ্গিদের কাছে লন্ডন থেকে বিপুল অর্থ এসেছে। অস্ট্রেলিয়া থেকেও অর্থ এসেছে। এই ধরনের দুটি উৎসকে আমরাই শনাক্ত করেছি। আন্তর্জাতিক পার্টনার হিসেবে যুক্তরাজ্যকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। যুক্তরাজ্য তাদের সংস্থার মাধ্যমে এই ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে। সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, ২০১৬ সালে হলি আর্টিসানে হামলার পর সিটিটিসিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় জঙ্গিরা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ২০২০ সালে ছোটখাটো হামলা তারা চালানোর চেষ্টা করে। সব পরিকল্পনা শনাক্ত করতে পেরেছি। ২০২১ সালে জঙ্গিরা কোনো ধরনের হামলা চালাতে পারেনি। ২০২২ সালে এসে আনসার আল-ইসলামের সদস্যরা সাজাপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছে। এটি একটি বড় ঘটনা। এটি একই সঙ্গে শঙ্কার। এর মধ্য দিয়ে অনেক দিন পর তারা দুঃসাহস দেখাতে পেরেছে। জঙ্গি ছিনতাইয়ে যারা সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের শনাক্ত করা গেছে। তবে নেতৃত্বদানকারীদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। যারা তাদের সহায়তা করেছিল ও পরিকল্পনায় অংশ নেয়- এমন কয়েকজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি।
আসাদুজ্জামান আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। উগ্রবাদ নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কা নেই। তবে জঙ্গিরা গোপনে তাদের শক্তি বাড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অনলাইনে নতুন সদস্য রিক্রুট করছে। ধর্মীয় বিভ্রান্তিমূলক ব্যাখ্যা ও পরলৌকিক সহজ প্রাপ্ততার বিষয়ে প্রলোভন দেখিয়ে তরুণদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। অনলাইনে প্রথম দাওয়াত দেওয়ার পর কারও কারও সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছে জঙ্গিরা। এরপর তাদের 'সিক্রেট গ্রুপে' নেওয়া হয়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তরুণ-যুবকদের মধ্যে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে- এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতন থাকা জরুরি। অনেক সময় উগ্রপন্থিরা তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রথমে দলভুক্ত করতে চায়। হঠাৎ দৃশ্যমান পরিবর্তনের ব্যাপারে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নিতে পারেন। আবার পাঠ্যবইয়ে জঙ্গিবিরোধী সচেতনতামূলক কোনো বিষয় থাকলে ভালো।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, চলতি বছর হঠাৎ করে নতুন জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম গোয়েন্দাদের নজরে আসে। পাহাড়ে গোপন আস্তানায় সহযোগীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথ্য পাওয়ার পর সেখানে অভিযান চালিয়ে তাদের প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে। তারা শেষ পর্যন্ত সংগঠিত হতে পারেনি। এই ঘটনায় রক্সি নামে এক জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি আমাদের জানিয়েছে, জেলখানায় বসে নতুন জঙ্গি সংগঠন তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল। হরকাতুল জিহাদ অব বাংলাদেশের (হুজিবি) সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গিরা বৈঠকে ছিল। এই পরিকল্পনায় শামিন মাহফুজ নামে এক জঙ্গি ছিল। দলছুট জঙ্গিদের একত্রিত করার প্রচেষ্টা ছিল এটি। আনসার আল-ইসলামের সঙ্গেও নতুন জঙ্গি সংগঠনের বৈঠক হওয়ার তথ্য রয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে সক্রিয় জঙ্গিদের সঙ্গে দেশের বাইরের উগ্রপন্থিদের সরাসরি যোগাযোগ নেই। তবে বাইরের জঙ্গিদের প্রভাব দেশীয় জঙ্গিদের ওপর অনেক সময় থাকে। অনেক সময় এমন দেখা যায়, আরাকানে গিয়ে অনেক জঙ্গি মুসলমানদের স্বার্থরক্ষার নামে লড়াইয়ে শরিক হতে চায়। তবে তারা শেষ পর্যন্ত যেতে পারে না।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, অনেক সময় নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে নিরাপত্তা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশি মনোযোগী হয়। এই সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করে জঙ্গিরা।