ইসলাম ও সমাজ
মাতৃভাষার গুরুত্ব ও ভাষা সুরক্ষার তাগিদ

মো. শাহজাহান কবীর
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৯:০৯
ভাষা মানুষের পরিচয়ের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। ভাষা মহান আল্লাহর দান ও তাঁর কুদরতের নিদর্শন। তাই সব ভাষাই সম্মানিত। সুরা ইব্রাহিমের ৪ আয়াতে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, 'আর আমি প্রত্যেক রাসুলকে তার স্বজাতির ভাষাতেই ওহিসহ পাঠিয়েছি, যাতে করে সে স্পষ্টভাবে আমার কথা তাদের বুঝিয়ে দিতে পারে।' সুরা আর-রূমের ২২ আয়াতে এরশাদ হয়েছে, 'আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও রঙের বিভিন্নতা। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।'
বিদায় হজের ভাষণে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, 'কালোর ওপর সাদার প্রাধান্য নেই, অনারবের ওপর আরবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই।' (বুখারি)। সুতরাং কোনো ভাষাকে হেয় জ্ঞান করা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা এবং অবহেলা করা যাবে না। কেননা, ভাষার স্রষ্টাও মহান আল্লাহ। তাঁর সৃষ্টির অবমূল্যায়ন করা তাঁর প্রতি অসম্মান প্রদর্শনেরই নামান্তর। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, 'তিন কারণে তোমরা আরবিকে ভালোবেসো- যেহেতু আমি আরবি ভাষায় কথা বলি; কোরআন আরবি ভাষায় লেখা এবং জান্নাতের ভাষাও হবে আরবি' (বুখারি)। কিন্তু আরবি পরকালের ভাষা হওয়া সত্ত্বেও সব নবী-রাসুল আরবিভাষী ছিলেন না। এমনকি সব আসমানি কিতাবও আরবি ভাষায় লেখা হয়নি।
আল কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল করার বিষয়ে আল্লাহতায়ালা সুরা ইউসুফের ২ আয়াতে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, 'ইহা আমি অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায়, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।' অর্থাৎ আরবদের কাছে আরবিভাষীর নবী ও আরবি কিতাব আল কোরআন নাজিল করা হয়েছে। কারণ তাদের মাতৃভাষা আরবি। অনারবি ভাষায় নাজিল করলে তাদের বুঝতে ও অনুসরণ করতে সহজ হবে না।
ইসলাম প্রচারে স্পষ্ট ভাষা ও সাবলীল বর্ণনার প্রভাব অনস্বীকার্য। রাসুলে পাক (সা.) ছিলেন 'আফছাহুল আরব', তথা আরবের শ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধভাষী। তাই বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলা রাসুলে পাক (সা.)-এর সুন্নত। মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, কিছু বর্ণনায় রয়েছে জাদুর ছোঁয়া।
একেক জাতির জন্য একেক ভাষা সৃষ্টি করা আমাদের ওপর আল্লাহতায়ালার বিশেষ নেয়ামত। ভাষার মাধ্যমেই একে অপরের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করে। মানুষের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতার সঙ্গে তার উন্নতি অঙ্গাঙ্গী জড়িত। মহানবী (সা.) ছিলেন আরবের সবচেয়ে সুন্দর ও শুদ্ধভাষী। শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা মহানবী (সা.)-এর সুন্নত।
বাংলাভাষী হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসটি আমাদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ফেব্রুয়ারি এলে আমরা যেমন এর ইতিহাসের দিকে তাকাই, তেমনি বাংলা সুরক্ষারও চিন্তা করি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য বাকস্বাধীনতা ও নিজ ভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা। মাতৃভাষার জন্য রক্ত ও জীবন দেওয়ার যে ইতিহাস আমরা সৃষ্টি করেছি, তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তাই ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি আমাদের ভাষাশহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে সারাবিশ্বে।
বর্তমানে বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে পবিত্র কোরআন ও রাসুলে পাক (সা.)-এর হাদিসের বাণীর অগণিত অসংখ্য কপি। রচিত হয়েছে কোরআন, হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থসহ অসংখ্য ইসলামী গ্রন্থের মহাসম্ভার, যা বাংলাভাষী মানুষের জন্য দ্বীন ইসলামকে সঠিকভাবে জানার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। এ ভাষার মাধ্যমেই আমরা মহান আল্লাহর বড়ত্ব ও মহানুভবত্ব সম্পর্কে জানতে এবং তা অনুভব করতে পারি। সে জন্য বাংলা ভাষাকে বিকৃতি থেকে বাঁচিয়ে এর সুরক্ষায় আমাদের কাজ করা উচিত।
ড. মো. শাহজাহান কবীর: চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
- বিষয় :
- ইসলাম ও সমাজ
- মো. শাহজাহান কবীর