সকলই গরল ভেল!

জেমি সিডন্স। ছবি: ফাইল
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৯:৩০
মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকার পুনরায় সক্রিয় হইতেছে বলিয়া অনুমিত। এইবার সরকার মাদকের প্রবেশদ্বার বলিয়া চিহ্নিত কক্সবাজার জেলা ও পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম নগরকে 'মাদকপ্রবণ অঞ্চল'রূপে ঘোষণা দিতেছে। সোমবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সকল বিভাগীয় কর্মকর্তার সমন্বয় সভায় এ সংক্রান্ত একটা রূপরেখা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হইয়াছে। রবিবার উক্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায়ও বিষয়টার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হইয়াছে। গত কয়েক বৎসরে সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই মর্মে বহু প্রতিবেদন প্রকাশিত ও প্রচারিত হইয়াছে- ভয়ংকর মাদক বলিয়া চিহ্নিত বিশেষত ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ তথা আইস প্রতিবেশী মিয়ানমার হইতে কক্সবাজার দিয়া দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক হারে প্রবেশ করিতেছে; যাহার প্রধান শিকার তরুণ-যুব সমাজ। এই সময়ে ইহাও প্রত্যক্ষ করা গিয়াছে, যখনই ঐ সকল সংবাদ প্রচারিত হইয়াছে তখনই বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাইয়াছে। কিন্তু সেই সকল অভিযানে কিছু মাদকসহ বহু মাদক বিক্রেতা আটক হইলেও মূল পৃষ্ঠপোষকরা বরাবরই রহস্যজনকভাবে অস্পর্শিত। ২০১৮ সালে তো দেশজুড়িয়া মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের অন্তরালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদক কারবারিদের সহিত রীতিমতো 'বন্দুকযুদ্ধে' অবতীর্ণ হয়। তখন সরকারের তরফ হইতে বিশেষত কক্সবাজার এলাকার মাদক কারবারিদের আত্মসমর্পণেরও সুযোগ প্রদান করা হয়। বাস্তবে সকলই গরল ভেল। মাদকের প্রাপ্যতা হ্রাস পাওয়া তো দূরস্থান, বরং আত্মসমর্পণকারী মাদক কারবারি অনেকে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ পাইয়া পুনরায় একই অপরাধে যুক্ত হইয়াছে। এই প্রেক্ষাপটেই কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম নগরকে মাদক অঞ্চল ঘোষণার সরকারি উদ্যোগ গৃহীত হইয়াছে। অনস্বীকার্য, এহেন ঘোষণা দেওয়া হইলে হয়তো উক্ত এলাকাসমূহের উপর সংশ্নিষ্ট সংস্থাগুলির বিশেষ নজর থাকিবে। মাদকবিরোধী জনসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি বিশেষ অভিযানও চলিবে। কিন্তু ইহাতে কোনো সন্দেহ নাই- মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকারের সদিচ্ছা ব্যতিরেকে কোনো ব্যবস্থাই এই অপরাধের বিস্তারে লাগাম টানিতে পারিবে না।
মিয়ানমার ও ভারতে উৎপাদিত মাদক হাঁটিয়া হাঁটিয়া এই দেশে চলিয়া আসে না। যাহারা উহা এই দেশে লইয়া আসে, তাহারা সকলেই এই দেশের। হ্যাঁ, এই দেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গা অনেকে অবৈধ কারবারে যুক্ত। কিন্তু এই দেশের কাহারও আশীর্বাদ না পাইলে ঐ সকল বিদেশির পক্ষে দেশের সর্বপ্রান্তে উক্ত প্রাণঘাতী নেশাদ্রব্যের বিস্তার ঘটানো সম্ভব নহে। আর ইহাও নির্দি্বধায় বলা যায়, ঊন আশীর্বাদে কিন্তু এই ঝুঁকিপূর্ণ কারবার সম্ভব নহে; প্রয়োজন দুনো আশীর্বাদ; যথা রাষ্ট্রক্ষমতার সহিত যুক্ত কাহারও। আমরা বলিতে চাহিতেছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দলের লোকদের সহায়তা ব্যতীত ইয়াবা, আইস কিংবা ফেনসিডিল সীমান্তের ঐ পার হইতে দেশের অভ্যন্তরে ছড়াইয়া পড়িতেছে না। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকিলেও এই বিষয়ে পর্যবেক্ষকদের প্রায় সকলেই একমত- মাদক ঘিরিয়া এই দেশে যে অর্থনীতি গড়িয়া উঠিয়াছে, উহার আকার বিশাল। প্রচণ্ড প্রতিকূলতার মুখোমুখি না হইলে কেহই যে ঐ লোভনীয় বাণিজ্য পরিত্যাগে অনিচ্ছুক- উহাও বুঝিতে হইবে। সংবাদমাধ্যমের দৌলতেই আমরা কয়েক বৎসর পূর্বে জানিয়াছিলাম, সরকার মাদকের পৃষ্ঠপোষক ও কারবারিদের একটা তালিকা করিয়াছিল, যাহাতে বহু সরকারি দলের সাংসদ ও নেতার নাম ছিল। আবার উহাও জানি, উক্ত তালিকা ধরিয়া বিশেষত মাদক কারবারের রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে অদ্যাবধি কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হয় নাই। যে কারণে খোদ প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে একাধিকবার শূন্য-সহিষুষ্ণতা ঘোষণা করিলেও পরিস্থিতি যেই তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রহিয়া গিয়াছে।
আমাদের বক্তব্য, সরকার আন্তরিকভাবে মাদক কারবার বন্ধ করিতে চাহিলে পক্ষপাতহীনভাবে এই অপরাধের সহিত যুক্ত সকলের বিরুদ্ধেই শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে। তবেই এই ভয়ংকর বিপদ হইতে আমরা মুক্তি পাইব।
- বিষয় :
- সম্পাদকীয়