ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

অন্যদৃষ্টি

সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও নগর-সংস্কৃতি

সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও নগর-সংস্কৃতি

মো. রিফাত-উর-রহমান

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৩ | ০৫:৩৮

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী পাঁচ বছর ধরে সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষিত নিয়ে গবেষণাধর্মী নিরীক্ষা পরিচালনা করে আসছেন। পাঁচ বছর ধরে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা সিরাজগঞ্জ ও জয়পুরহাট জেলার আদিবাসী অধ্যুষিত বিভিন্ন গ্রামের স্থানিক আদিজ্ঞান অনুসরণের চেষ্টা এবং তা নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। বিশেষত প্রথাগত পদ্ধতিতে শিশু জন্মদান প্রক্রিয়া সম্পর্কে গভীরতর গবেষণা করছেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। চলমান গবেষণার একটি অংশ ২০২২ সালে সেইজ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

এ ছাড়া বর্ণপ্রথা, পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যবাদী আচরণের পরিপ্রেক্ষিত নিয়েও বেশ কয়েকটি গবেষণা চলমান। এর মধ্যে একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করছি। আমাদের দেশে মূলধারা থেকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম দলিত। এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে কালো রঙের নারীরা সামাজিকভাবে বঞ্চিত, শোষিত। শুধু গায়ের রং কালো হওয়ার কারণে অভিশপ্ত জীবন যাপন করেন তাঁরা। সমাজে কেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে  ‘সৌন্দর্যের মান’ নির্ধারিত হয়, সেই প্রশ্ন সামনে রেখে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিচালিত একটি গবেষণা ২০২১ সালে সেইজ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

দেশে বর্তমানে প্রসূতির অধিকাংশই শিশু জন্মদানের ক্ষেত্রে সিজারিয়ান পদ্ধতি অনুসরণ করেন। অথচ এখনও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আদিবাসী নারী প্রথাগত শিশু জন্মদান পদ্ধতি অনুসরণ করেন। আমরা জয়পুরহাটের উচাই গ্রামের বেশ কিছু আদিবাসী নারীর ওপর প্রায় দুই বছর ধরে সমীক্ষা পরিচালনা করছি। শিশু জন্মদান প্রক্রিয়া মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্বের অনেক দেশে বর্তমানে সিজারিয়ান পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না। অথচ আমাদের দেশে ৯০ দশক থেকে সিজারিয়ান পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শিশু জন্মদানের ক্ষেত্রে প্রসূতির ক্ষতি হয় না বললেই চলে। কিন্তু সিজারিয়ান পদ্ধতিতে শিশু জন্মদানের ক্ষেত্রে প্রসূতির শারীরিক ঝুঁকি থেকে যায়। তবুও আমরা কেন স্বাভাবিকের চেয়ে সিজারিয়ান পদ্ধতিকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছি? আমরা গবেষণা চলাকালে কয়েকজন ধাত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আদিজ্ঞান প্রয়োগ করে শিশু জন্মদানে সহযোগিতা করছেন। অন্তঃসত্ত্বাকে শুধু শুইয়ে নয়; বরং হাঁটু গেড়ে, বসে এমনকি কখনও কখনও দাঁড়ানো অবস্থাতেও তাঁরা প্রসবকাজ সম্পাদন করিয়েছেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমরা শিশু জন্মদানের পদ্ধতি অনুসন্ধানে বিভিন্ন প্রত্নস্থানে প্রাপ্ত পোড়ামাটির ফলক ও প্যানেলগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি। ময়নামতীতে প্রাপ্ত একটি পোড়ামাটির ফলকে প্রসূতির হাঁটু গেড়ে থাকা শিশু জন্মদানের ছবি রয়েছে। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু প্রত্নস্থলে পোড়ামাটির ফলকে দাঁড়ানো, বসে বা শুয়ে শিশু জন্মদানের চিত্র পাওয়া গেছে। অর্থাৎ পশ্চিমা বিশ্ব বর্তমানে শিশু জন্মদানের যেসব পদ্ধতি অনুসরণ করছে, সেসব পদ্ধতি আমাদের অঞ্চলে বহুকাল আগেই চর্চিত হয়েছে।

ভৌগোলিক আয়তনে আমাদের বঙ্গীয় উপত্যকা ছোট হলেও এ দেশের বৈচিত্র্যময় নদনদী এবং নদীবাহিত পাললিক ভূমির কারণে বহুকাল আগে থেকে মানুষের বসতি গড়ে তোলার আকর্ষণীয় অঞ্চল ছিল। এর কিছু প্রমাণ আমরা সমৃদ্ধ নগর-সংস্কৃতি তথা উয়ারী-বটেশ্বর ও মহাস্থানগড়ে পাচ্ছি। এর বাইরেও সমৃদ্ধ গ্রাম-সংস্কৃতির আবহ যে লম্বা সময় ধরে গড়ে উঠেছে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। গভীরতর গবেষণার মাধ্যমে আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষিত অনুসন্ধান করা জরুরি।

মো. রিফাত-উর-রহমান : চেয়ারম্যান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন

×