ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

ভারত

বিরোধী ঐক্য বেশি প্রয়োজন কংগ্রেসের

বিরোধী ঐক্য বেশি প্রয়োজন কংগ্রেসের

শশী শেখর

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০

ভারতের চলমান রাজনীতিতে রাহুল গান্ধীর মতো এমন অল্প কিছু নেতা আছেন, যাঁরা মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের ওপর পরোক্ষ চাপ প্রয়োগ করতে পারেন। রাহুল গান্ধী যখনই কয়েক ধাপ এগিয়ে যান, তখনই তিনি নতুন বাধার সম্মুখীন হন। সম্প্রতি সুরাটের আদালত মানহানির মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি এখনও উচ্চ আদালত বা সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন। যদি তিনি এ মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে ব্যর্থ হন বা বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়, তবে তিনি পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অযোগ্য হবেন। এ কারণেই তিনি তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে ওয়েনাদে নিয়ে গিয়েছিলেন।

কেরালার ওয়েনাদ হলো সেই নির্বাচনী এলাকা, যেখান থেকে তিনি ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে জিতেছিলেন। গান্ধী পরিবারের পুরোনো ঘাঁটি আমেথিতে তিনি পরাজিত হন। গত মাসে সুরাটের একটি নিম্ন আদালতে মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। লোকসভা সচিবালয় দ্রুত তাঁর সদস্যপদ কেড়ে দেয়। এখন প্রশ্ন হলো, যদি নির্বাচন কমিশন ওয়েনাদে উপনির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়– প্রিয়াঙ্কা সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা। যদিও কংগ্রেসের মধ্যে আলোচনা ছিল, প্রিয়াঙ্কা সোনিয়া গান্ধীর পরিবর্তে রায় বেরেলি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। কংগ্রেসের জন্য কেরালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে দলটি রাজ্যের ২০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৫টিতে জিতেছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে এই আসনগুলোর একটিও হারাতে চাইবে না কংগ্রেস। সে জন্য গান্ধী পরিবারের একজন সদস্যকে এই রাজ্যে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের বৃহত্তম রাজ্য এবং গান্ধী-নেহরু পরিবারের আদি রাজ্য উত্তরপ্রদেশের কী হবে?

রাহুলকে নিঃসন্দেহে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি নতুন কৌশল তৈরি করতে হবে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, লালগালিচা এখন নীতিশ কুমারের জন্য বিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কংগ্রেস যাঁকে গত সাধারণ নির্বাচনের আগে বাদ দিয়েছিল। নীতিশ গত সেপ্টেম্বরেও কংগ্রেসের সমর্থন পাওয়ার আশায় দিল্লি গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ‘পরিবার’ থেকে সবুজ সংকেত পাননি। এ কারণেই তিনি এবং তেজস্বী যাদব প্রকাশ্যে বলেছেন, তাঁরা বিরোধী ঐক্যের প্রচেষ্টায় যোগ দিতে ইচ্ছুক, তবে কংগ্রেসকেও সে জন্য রাজি হতে হবে। আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে নীতিশের ওপর কংগ্রেসের নির্ভরতা নিঃসন্দেহে বাড়বে। নীতিশ কুমার কি অদূর ভবিষ্যতে অন্য রাজ্যে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন?

বিরোধী ঐক্যের জন্য রাহুল গান্ধীকে আরও একবার রাস্তায় নামা প্রয়োজন। বর্তমান রাজনীতিতে এমন লোক কমই আছেন, যাঁরা ক্ষমতার বাইরে থেকেও জনগণের কল্যাণে জনপ্রতিনিধিদের ওপর পরোক্ষ চাপ প্রয়োগ করতে পারেন। শাসকগোষ্ঠীর স্বেচ্ছাচারিতা রুখতে এটাই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। রাহুল অতীতেও একই প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ২০১১ সালে উত্তরপ্রদেশের ভাট্টা পারসোলে তাঁর সফরের কথা মনে করা যেতে পারে। রাজ্য সরকার একটি বেসরকারি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কৃষকের জমি অধিগ্রহণ করলে রাহুল বিক্ষুব্ধ কৃষকদের পাশে দাঁড়ান, যদিও ওই আন্দোলনের ফসল কংগ্রেসের ঘরে যায়নি। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী পরের নির্বাচনে হেরে যান।

একইভাবে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে সংশোধনী আনায় তার অনুলিপি সংবাদমাধ্যমের সামনে রাহুল গান্ধী ছিঁড়ে ফেলেন। এটা ছিল তাঁর নিজ দলের সরকারের ওপর আঘাত। মনমোহন সিংয়ের জন্য এর চেয়ে বড় অপমান আর কিছু হতে পারে না যে, গান্ধী পরিবারই তাঁকে দায়িত্বে এনেছিল, আবার তাঁদেরই একজন তাঁর সিদ্ধান্তকে প্রকাশ্যে অগ্রাহ্য করেছিলেন।

রাহুল গান্ধী নিশ্চয়ই এই সমস্যাগুলো সম্পর্কে সচেতন। এ কারণেই তিনি একটি বর্ণশুমারির পক্ষে কথা শুরু করেছেন। ‘জিসকি জিতনি সাংখ্য ভরি, উসকি উতনি হিস্যেদারি (ব্যক্তির শক্তি অনুযায়ী ভাগ করুন)’ স্লোগানটি একবার কংগ্রেসকে অস্থিতিশীল করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। আজ সেই পথই বেছে নিয়েছেন রাহুল গান্ধী। আগামী দিনে মণ্ডল ও কমণ্ডলু রাজনীতির পুনরুত্থান ঘটবে– তা স্পষ্ট। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি বলেছেন, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে রাম মন্দিরের কাজ শেষ হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মূর্তি স্থাপন থেকে শুরু করে সব অনুষ্ঠান হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাসের পক্ষে জোরালো হবে। দীর্ঘদিন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই অনুভূতিকে কাজে লাগিয়েছে।

এখানে দুটি প্রশ্ন উঠছে– অযোধ্যায় ‘মহান রাম মন্দির’ উদ্বোধন বিজেপিকে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আনবে, নাকি জাতশুমারির নামে রাম লেহরের মতোই আরেকটি ঝড় উঠবে? মজার ব্যাপার হলো, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পিছিয়ে পড়া জাতি থেকে এসেছেন। আগের সব আঞ্চলিক ও জাতীয় নির্বাচনে তিনি কার্যকরভাবে প্রমাণ করেছেন– জাত সমীকরণ ভাঙার ক্ষেত্রে তাঁর অবিশ্বাস্য ক্ষমতা রয়েছে।

রাহুল গান্ধী যদি তাঁর প্রচেষ্টায় সফল হতে চান, তাহলে তাঁকে অবশ্যই তাঁর চিন্তা, কথা এবং কাজে তা প্রমাণ করতে হবে। তিনি এখন যে সমস্যা মোকাবিলা করছেন তা হলো, কথা বলার ক্ষেত্রে তাঁর নিয়ন্ত্রণের অভাব। সংবাদ সম্মেলনে প্রায়ই তাঁর যে আচরণ দেখা যায়, সেটি তাঁর সঙ্গে মানানসই নয়। তাঁকে অবশ্যই এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে– তিনি বা তাঁর দল কেউ-ই টানা তৃতীয় পরাজয়ের ভার বহন করতে পারবেন না।

শশী শেখর: প্রধান সম্পাদক, হিন্দুস্তান টাইমস; ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক

আরও পড়ুন

×