ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নিরাপদ প্রত্যাবর্তন

নিরাপদ প্রত্যাবর্তন

পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। হিন্দুস্তান টাইমস থেকে নেওয়া প্রতীকী ছবিটি।

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩ | ২১:৫৬

পূর্ব আফ্রিকার দেশ সুদানে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস তথা আরএসএফের মধ্যকার রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংঘাতের ফলে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করিতেছে সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে উহা কাহারও অজানা নহে। মূলত রাষ্ট্রক্ষমতা লইয়া দুই জেনারেলের দ্বন্দ্বের ফলস্বরূপ গত ১৫ এপ্রিল হইতে চলমান এ যুদ্ধে ইতোমধ্যেই পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হইয়াছেন। দুই বিবদমান গোষ্ঠী ক্ষমতার জন্য এতটাই উন্মত্ত হইয়া উঠিয়াছে যে, উহাদের সশস্ত্র হামলা হইতে রাজধানী খার্তুমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং রাষ্ট্রদূতের বাসভবনও রেহাই পায়নি; গত ২২ এপ্রিল কূটনৈতিক সুরক্ষার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও ভবনসমূহে হামলা চলে।

এ পরিস্থিতিতে সাধারণ সুদানিরা তো বটেই, দেশটিতে অবস্থানকারী বিদেশিদেরও নিরাপদ বোধ করিবার কোনো কারণ থাকিতে পারে না। অতএব, সংশ্লিষ্ট সকল দেশই সুদানে অবস্থানরত উহাদের নাগরিকদের স্বদেশে কিংবা নিরাপদ কোনো স্থানে সরাইয়া লইবার কার্যক্রম গ্রহণ করিয়াছে।

ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, সৌদি আরবসহ অনেক দেশ উহাদের কূটনীতিক এবং সাধারণ নাগরিকদের উদ্ধারের কার্যক্রম সমাপ্ত করিয়া ফেলিয়াছে। এমনকি প্রতিবেশী ভারতও দারিদ্র্যের পাশাপাশি প্রায় স্থায়ীভাবে সংঘাত-সংঘর্ষপীড়িত দেশটি হইতে উহার ২৮০০ নাগরিকের বৃহৎ অংশকে হয় দেশে ফিরাইয়া আনিয়াছে, নয় নিকটবর্তী সৌদি আরবের জেদ্দায় স্থানান্তর করিয়াছে।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশ অদ্যাবধি সুদানে অবস্থানরত উহার নাগরিকদের ঐ অগ্নিকুণ্ড হইতে উদ্ধারের কার্যক্রম আরম্ভ করিতে পারে নাই। এ অবস্থায় শনিবার সমকালের প্রতিবেদেন যেমনটা বলা হইয়াছে, সুদানে অবস্থানরত প্রায় দেড় সহস্র বাংলাদেশি চরম নিরাপত্তহীনতা ও মানবিক সংকটে দিন কাটাইতেছেন; কারণ তাহাদের অনেকে ইতোমধ্যে হামলা ও লুটপাটের শিকার হইয়া কপর্দকশূন্য অবস্থায় আছেন, এক কক্ষে ১০-১২ জন গাদাগাদি করিয়া অবস্থানের পাশাপাশি অনাহারেও আছেন।

ইহা অনস্বীকার্য, বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে সুদান হইতে বাংলাদেশিদের সৌদি আরবের সহায়তায় দেশে ফিরাইয়া আনিবার কার্যক্রম আরম্ভ করিয়াছে এবং অদ্যাবধি সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়া সুদানে অবস্থানরত ৭০০ বাংলাদেশি দেশে প্রত্যাবর্তনের আশায় নিবন্ধন করিয়াছেন। জানা গিয়াছে, আটকে পড়া বাংলাদেশিদের প্রথমে খার্তুম হইতে পোর্ট সুদান এবং পরে একটা সৌদি জাহাজে করিয়া সৌদি আরবের পোর্ট জেদ্দায় লইয়া আসা হইবে; যথা হইতে তাহারা বিশেষ অথবা নিয়মিত ফ্লাইটে দেশে প্রত্যাবর্তন করিবেন। কিন্তু শঙ্কার বিষয় হইল, পরিস্থিতি অতি জরুরি ভিত্তিতে কার্যটি সম্পাদনের দাবি করিলেও সরকারের প্রস্তুতি তেমনটা নহে।

প্রতিবেদনে সুদানে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে উদ্ধৃত করিয়া যেমনটা বলা হইয়াছে, সৌদি কর্তৃপক্ষ তাহাদের জাহাজটির শিডিউল সম্পর্কে নির্দিষ্ট করিয়া শুক্রবার অবধি কিছুই বলিতে পারে নাই; রাষ্ট্রদূতের মতে– তাঁহারা ২ মের কথা ভাবিলেও বাস্তবে উদ্ধারকার্য আরম্ভ হইতে অতিরিক্ত দু’এক দিন লাগিতে পারে। বলা বাহুল্য হইবে না, প্রয়োজন ছিল গৃহযুদ্ধ আরম্ভ হইবার পরপর সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা, কিন্তু উহা লওয়া হয় দূতাবাসে সশস্ত্র হামলার পর; সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ২৫ এপ্রিল তাঁহার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ঘোষণা দেন যে, তাহারা সুদান হইতে বাংলাদেশিদের নিরাপদ স্থানে সরাইবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন।

যাহা হউক, কিছুটা বিলম্বে হইলেও সুদানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের উদ্ধারকাজ নিরাপদ ও সফলভাবে সম্পন্ন হউক এ প্রত্যাশাই আমরা করি। উদ্ধারকারী জাহাজ এবং জেদ্দার আশ্রয়শিবিরে তো বটেই, পোর্ট সুদানে অবস্থানকালেও যাহাতে বিপন্ন বাংলাদেশিরা বিশেষত খাদ্য, পানীয় ও ঔষধের সংকটে না ভোগেন সেদিকে নজর রাখিতে হইবে। উপরন্তু, পোর্ট সুদানে পৌঁছাইবার পূর্বেও যাহাতে তাহাদের নিরাপদ স্থানে রাখা যায় সেই ব্যাপারে সচেষ্ট থাকিতে হইবে।

সর্বোপরি, আমাদের প্রত্যাশা হইল, আটকে পড়া বাংলাদেশিদের উদ্ধারে আর সামান্যতম বিলম্ব তো নয়ই ন্যূনতম অদক্ষতাও প্রদর্শিত হইবে না। একই সঙ্গে আমরা নানা কারণে দেশে ফিরিতে অনিচ্ছুক বাংলাদেশিদের জন্যও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করিবার সম্ভাব্য সকল উপায় অবলম্বন করিবারও আহ্বান জানাই।

আরও পড়ুন

×