ঢাকা বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

দুদক কেন টলিবে?

দুদক কেন টলিবে?

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৩ | ০৫:৩৭

সংসদ নির্বাচনের পূর্বে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক হইতে ‘নির্দোষ সনদ’ হস্তগত করিতে বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন সংসদ সদস্য ‘দৌড়ঝাঁপ’ করিতেছেন– সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই রূপ ভাষ্য বিস্ময়কর নহে। ভোটারের নিকট ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করিতে আমাদের দেশে প্রার্থী ও সম্ভাব্য প্রার্থীগণ সামাজিক ও আধ্যাত্মিক বিভিন্ন কেন্দ্রে যদ্রূপ দৌড়ঝাঁপ করিয়া থাকেন, সেই তুলনায় দুদক আরও গুরুতর অভিমুখ। প্রশ্ন হইতেছে, দুর্নীতির অভিযোগ হইতে অব্যাহতিপ্রাপ্তির এই প্রকার দৌড়ঝাঁপে দুর্নীতি দমনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটির দায়িত্বশীলতা টলিয়া যাইবে কিনা? সেই ক্ষেত্রে গত দেড় বৎসরে ক্ষমতাসীন দলের আটজনকে পরিসমাপ্তিকরণপত্র তথা অভিযোগ হইতে অব্যাহতি দিবার যেই তথ্য সমকালের সোমবারের প্রতিবেদনটিতে উঠিয়া আসিয়াছে, উহা দুদকের প্রতি নাগরিকের আস্থাবর্ধক হইতে পারে না।

দুদক সচিব যদিও বলিয়াছেন, কাহাকেও অভিযোগ হইতে অব্যাহতি দিবার ‘চাপ’ নাই; তাঁহার সংস্থারই একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করিবার শর্তে সমকালকে চাপ ও তদবিরের তথ্য জানাইয়াছেন। বলিয়াছেন, সরাসরি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহিত সাক্ষাৎচেষ্টা, তৎসহিত প্রভাবশালী রাজনীতিক কিংবা রাজনীতিবহির্ভূত প্রভাবশালী দিয়াও তদবির চলিতেছে। বস্তুত ‘চাপ’ থাকিবার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে লুকাইবার চেষ্টার মধ্যেই মিলিতেছে চাপ থাকিবার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। আমাদের প্রত্যাশা, দুদক সকল চাপকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাইয়া সংবিধান ও আইন সমুন্নত রাখিয়া দুর্নীতি দমনকার্যে তৎপর থাকিবে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক যথার্থই বলিয়াছেন, উত্থাপিত অভিযোগ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয়, স্থান বা প্রেক্ষিত দুদকের বিবেচ্য হইতে পারে না।

ইতোমধ্যে অব্যাহতিপত্রপ্রাপ্ত সংসদ সদস্যগণের বিরুদ্ধে যেই সকল অভিযোগ দুদকে দাখিল হইয়াছিল, সেইগুলির মধ্যে ছিল ক্ষমতার অপব্যবহার, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সম্পদ দখল, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিবিধ দুর্নীতি। এই প্রকার অভিযোগের একটির বিরুদ্ধেও দুদকের অনুসন্ধানে ‘আমলযোগ্য তথ্য-প্রমাণ’ মেলে নাই– আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় ইহা অবিশ্বাস্য নয় কি? এমনকি একজনের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা হইতেও একই প্রকার অভিযোগ উত্থাপিত হইয়াছিল বলিয়া সমকালের প্রতিবেদনে যেই তথ্য রহিয়াছে, উহার ব্যাপারে দুদক কী বলিবে? শুধু চাপ নহে; প্রশ্নটি সুনীতিরও। পুলিশের বহুল সমালোচিত ও বরখাস্ত উপমহাপরিদর্শক মিজানুর রহমানকে মামলা হইতে ‘বাঁচাইয়া’ দিবার প্রতিশ্রুতি দিয়া দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির কীভাবে লক্ষ লক্ষ নগদ টাকা ও মূল্যবান ‘উপঢৌকন’ লইয়াছিলেন; আমরা ভুলিয়া যাই নাই। আলোচ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঐরূপ লেনদেনের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়াছে কিনা, খতাইয়া দেখিতে দোষ কী?

আমরা দেখিতেছি, যেই সকল সাবেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ‘অনুসন্ধান’ অব্যাহত রহিয়াছে, তাহাদের মধ্যে বিরোধীদলীয় রাজনীতিকের সংখ্যাই অধিক। অনস্বীকার্য, কাহারও বিরুদ্ধে অভিযোগমাত্রই দুর্নীতির প্রমাণ নহে। উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়া সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ হইতে অব্যাহতিও পাইতে পারেন বৈকি। কিন্তু যেইখানে অব্যাহতিপ্রাপ্তদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিকের এবং দীর্ঘতর সময় ধরিয়া অনুসন্ধানের আওতাভুক্তদের মধ্যে বিরোধীদলীয় রাজনীতিকের আধিক্য রহিয়া যায়, সেইখানে প্রশ্ন উত্থাপন অস্বাভাবিক নহে।

আরও পড়ুন

×