ঢাকা রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

সংলাপের সূচনার এখনই সময়

সংলাপের সূচনার এখনই সময়

কক্সবাজার বিমানবন্দর। ফাইল ছবি

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৩ | ০৪:১০

বুধবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অন্য সকলের মতো আমাদেরকেও স্বস্তি দিয়াছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি চার দশকেরও অধিক সময় ধরিয়া কতিপয় সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক কারণে আমাদের জাতীয় রাজনীতির দুই যুযুধান পক্ষ। কয়েক মাস পূর্বেও দুই দল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিকটবর্তী স্থানে সমাবেশ করিতে গিয়া পরস্পর অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘাত-সংঘর্ষে জড়াইয়াছে। ফলস্বরূপ বহু হতাহতের ঘটনাও ঘটিয়াছে। ঐ সকল প্রাণঘাতী সংঘর্ষের কথা স্মরণ করিয়াই বুধবারের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ লইয়া জনমনে এক প্রকার আতঙ্ক সৃষ্টি হইয়াছিল। যদিও কাহারও কাহারও ধারণা, ঐ সময়ে রাজধানীতে অবস্থানরত উচ্চপদস্থ মার্কিন সরকারি প্রতিনিধি দলের কারণেই উভয় পক্ষ সংযমের পরিচয় দিয়াছে। অন্তর্নিহিত কারণ যাহাই থাকুক; আমরা ইহাকে দুই প্রধান দলের নেতাদের দায়িত্বশীল আচরণের ফল বলিয়া মনে করি। আমাদের প্রত্যাশা, আগামী দিনগুলিতেও তাহারা যে কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার পরিচয় রাখিবেন।

 উক্ত দুই সমাবেশে দল দুইটার নেতৃবৃন্দ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে নিজেদের যে অনড় মনোভাব ব্যক্ত করিয়াছেন, উহা বিভিন্ন পর্যবেক্ষকের মতো আমাদেরও উদ্বিগ্ন করিয়াছে। বৃহস্পতিবার সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, বিএনপি যেহেতু মনে করে– বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভবপর নহে; তাই দলটির নেতৃবৃন্দ বুধবারের সমাবেশে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ– তাহাদের ভাষায়, এক দফার আন্দোলনের ডাক দিয়াছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দও তাহাদের সমাবেশ হইতে এক দফার ঘোষণা দিয়াছেন এবং উহা হইল– আগামী নির্বাচন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই হইতে হইবে। ইতোপূর্বে এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা বারংবার বলিয়াছি, উভয় দলের এহেন অনড় মনোভাব অব্যাহত থাকিলে দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কস্মিনকালেও সম্ভবপর হইবে না; এমনকি নির্বাচনটিই অনিশ্চিত হইয়া যাইতে পারে, যাহা একদিকে বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত দেশের গণতন্ত্রের জন্য প্রবল হুমকিস্বরূপ, অন্যদিকে অর্থনীতির জন্যও সুখকর হইতে পারে না।

আমরা মনে করি, রাজনৈতিক তো বটেই, যে কোনো সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য পরস্পরবিরোধী পক্ষসমূহের মধ্যে সংলাপের বিকল্প নাই। বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানেও বিশেষত দুই প্রধান দলের মধ্যে সংলাপ অপরিহার্য।

সংবিধানমতে, আগামী জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। সেই ক্ষেত্রে দুই দলের মধ্যে সমঝোতার প্রক্রিয়াটি এখনই আরম্ভ হইতে হইবে। সেই কারণেই নাগরিক সমাজ; যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশের বৃহৎ উন্নয়ন সহযোগীরাও দুই দলকে সাম্প্রতিক সময়ে পুনঃপুন সংলাপের তাগিদ দিতেছে। অনস্বীকার্য, ক্ষমতাসীন দল হিসাবে আওয়ামী লীগকেই এই ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখিতে হইবে।

তবে বিরোধী দলকেও উন্মুক্ত মন লইয়া উহাতে সাড়া দিতে অগ্রসর হওয়া বাঞ্ছনীয়।

আরও পড়ুন

×