অন্ধ হইলেই প্রলয় বন্ধ হইবে না

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০
দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়া মোট হাসপাতালের মাত্র ১ দশমিক ৩২ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর তথ্য প্রতিদিন প্রকাশ করিয়া যাইতেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর– সমকালে রবিবার প্রকাশিত এই সংবাদ আমাদের যুগপৎ বিক্ষুব্ধ ও বিস্মিত করিয়াছে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে মন্দ চিত্র ‘গালিচার নিম্নে’ লুকাইয়া রাখিবার ধারণা রহিয়াছে বটে, উহা জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ হইবে! বিষয়টি শুধু অবিশ্বাস্য নহে, অবিমৃষ্যকারিতারও নামান্তর। কারণ যদি পূর্ণাঙ্গ চিত্র না পাওয়া যায়, তাহা হইলে এই প্রকার রোগ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গৃহীত হইবে কীসের ভিত্তিতে?
এহেন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেই পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাই গৃহীত হউক না কেন, উহা মূল কর্তিত বৃক্ষের অগ্রভাগে জল সিঞ্চনেরই নামান্তর হইতে বাধ্য। এই আশঙ্কাও অমূলক হইতে পারে না, আত্মতুষ্টির অন্তরালে রোগটি অতিমারিতে রূপান্তরিত হইতে পারে।
আমরা জানি, ডেঙ্গুর ন্যায় সর্বব্যাপ্ত রোগে সকলেরই হাসপাতালে যাইবার প্রয়োজন বা সামর্থ্য বা মানসিকতা থাকে না। অনেকে গৃহে অবস্থান করিয়াই চিকিৎসা চালাইয়া যান। কেহ কেহ গুরুতর আকার ধারণ না করিলে রোগটির পরিণাম সম্পর্কে ধারণাই করিতে পারেন না। এই কারণেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ অন্তত ২০ গুণ সাব্যস্ত করিয়াছেন।
সকল হাসপাতালের তথ্য একযোগে পাইবার উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা দেশে অদ্যাবধি গড়িয়া ওঠে নাই বলিয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন পরিচালক যেই যুক্তি প্রদর্শন করিয়াছেন, উহা নেহাত অচল। এই ক্ষেত্রে জনবল, অর্থ, প্রশিক্ষণের অজুহাতও ধর্তব্য নহে। করোনা অতিমারিকালে যদি সকল হাসপাতাল হইতে তথ্য লওয়া সম্ভব হয়, বর্তানে তাহা দুরূহ কেন? একজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হাসপাতালগুলিকে অনলাইনে অভিন্ন ড্যাশবোর্ড ব্যবস্থার আওতায় আনিবার যেই পরামর্শ দিয়াছেন, উহা যথার্থ। হাসপাতালগুলি তথায় তথ্যাদি তুলিয়া ধরিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই জাতীয় চিত্র প্রস্তুত হইবে। আমরা মনে করি, অনলাইনে জমাকৃত ঐ তথ্য যাহাতে উন্মুক্ত থাকে এবং নাগরিকগণ স্ব স্ব অঞ্চলের পরিস্থিতি বুঝিয়া সতর্ক হইতে পারে, সেই ব্যবস্থা
করা প্রয়োজন।
আমাদের আশঙ্কা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স্বীয় দুর্বলতা আড়াল করিবার উদ্দেশ্যেই ৯৮ শতাংশ হাসপাতালের ডেঙ্গু চিত্র সংগ্রহ ও প্রকাশ করিতেছে না। এই ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারক মহলের উচিত হইবে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অধিক হইলে জনসাধারণ আতঙ্কিত হইতে পারে বলিয়া যেই ধারণা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে রহিয়াছে, উহাও অমূলক। দেশে যখন তথ্য ফাঁকির এই চিত্র, তখন খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাইতেছে, চলতি মৌসুমে বিশ্বব্যাপীই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়াইয়া যাইতে পারে।
স্মরণে রাখিতে হইবে, অন্ধ হইলেই প্রলয় বন্ধ হইবার কোনো কারণ নাই। বরং বাস্তবতা স্বীকার করিয়া উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণই হইবে বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।
- বিষয় :
- প্রলয় বন্ধ
- সম্পাদকীয়