ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫

অর্থনীতির জন্য স্বস্তিকর নহে

অর্থনীতির জন্য স্বস্তিকর নহে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০

মুডিসের পর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অপর আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি এসঅ্যান্ডপি বাংলাদেশের ঋণমান হ্রাস করিয়াছে। মুডিস এবং এসঅ্যান্ডপি বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ঋণমান নির্ধারণকারী এজেন্সিসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বৈশ্বিক ঋণমান বাজারের একটা বিরাট অংশ উহাদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে দেশের অর্থনীতির জন্য উক্ত ঋণমান অবনমন মোটেও সুখকর কিছু নহে।

বুধবার সমকালের এক প্রতিবেদনে যেমনটা বলা হইয়াছে, মঙ্গলবার প্রকাশিত এসঅ্যান্ডপির প্রতিবেদনমতে, আগামী ১২ মাসে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিতে পারে। এমন ঝুঁকি প্রতিফলিত করিবার জন্য তাহারা দীর্ঘমেয়াদি আউটলুক ‘নেতিবাচক’ দিয়াছে। সংস্থাটি কাগজে-কলমে এখনই বাংলাদেশের ঋণমান হ্রাস না করিলেও বিশ্লেষকদের মতে, একটা ‘স্থিতিশীল’ ঋণমানকে ‘নেতিবাচক’ বলাটাই অবনমনের শামিল। এসঅ্যান্ডপির প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিস্থিতির উন্নতি করিতে না পারিলে আগামীতে বাংলাদেশের রেটিং নিম্নমান হইবে। গত মে মাসে মুডিস আমাদের ঋণমান ‘বিএ৩’ হইতে হ্রাস করিয়া ‘বি১’ করে।

 ঋণমান হইল কোনো দেশের ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা। যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক শক্তি, বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও বৈদেশিক বাণিজ্যে ইহার প্রভাব উল্লেখযোগ্য। ঋণমানের মূল্যায়ন হইতে কোনো দেশের ঋণ পরিশোধের ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ফলে বৈদেশিক ঋণ পাওয়া কম ঋণমানসম্পন্ন দেশের পক্ষে কঠিন হইয়া পড়ে। এ প্রসঙ্গে সমকালের প্রতিবেদনে উদ্ধৃত ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আরএফ হোসেনের বক্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য।

তাঁহার মতে, বিশেষত দেশের ব্যাংক খাতের উপর ঋণমান অবনমনের প্রভাব অধিক হইতে পারে। কেননা, স্বনামধন্য কোনো একটি বৈশ্বিক সংস্থা খারাপ কিছু বলিলে অন্যরা তাহা গুরুত্বসহকারে দেখে। এলসিসহ অন্যান্য কারণে প্রতিটি ব্যাংকের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় একটি সীমা দেওয়া আছে। ঝুঁকি বিবেচনায় বৈদেশিক ব্যাংকসমূহ এখন সেই সীমা কমাইয়া দিতে পারে, যাহার সরাসরি ভুক্তভোগী হইবে দেশের আমদানি খাত। কারণ ইহার ফলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাইতে পারে। এমনিতেই ডলার সংকটের কারণে দেশের আমদানি খাত অনেকাংশে স্থবির; ডলার সংস্থানের আশায় যথায় জ্বালানির ন্যায় অতি জরুরি পণ্যের ঋণপত্র খুলিতেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে দ্বারে দ্বারে ঘুরিতে হইতেছে, তথায় বেসরকারি আমদানিকারকদের কষ্ট তো কহতব্য নহে।

আমরা মনে করি, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ দেশ হইতে মুদ্রা পাচার প্রতিহতকরণ বিষয়ে নির্ধারিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করিলে অদ্যকার সংকটজনক পরিস্থিতির উদ্ভব হইত না। দুঃখজনক, বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট দৃশ্যমান হইবার পরও সংস্থাসমূহ যথেষ্ট সতর্ক হয় নাই। যাহার ফল দেশের ঋণমান সম্পর্কে উক্ত দুই আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ।

তবে আমাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা যে কোনো মূল্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্যোগী হইবে। অন্তত রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির বিষয়ে তৎপর হইবে।

আরও পড়ুন

×