সিলেটে সুরমা নদীর ওপর নির্মিত তৃতীয় শাহজালাল সেতুতে লোহার পাতের বদলে বাঁশ ব্যবহারের যে সচিত্র প্রতিবেদন মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশ হয়েছে, তা নিন্দনীয় হলেও নজিরবিহীন নয়। এতে আমরা বিক্ষুব্ধ হলেও বিস্মিত নই। আমাদের মনে আছে, ২০১৬ সালের এপ্রিলে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কৃষি বিভাগের একটি ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহারের ঘটনা প্রথম জনসমক্ষে এসেছিল। ওই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ ও ক্ষোভের মধ্যেই উন্মোচিত হয়েছিল এমন আরও একাধিক অঘটন। এমনকি রেলপথের স্লিপারেও বাঁশের ব্যবহার নতুন করে আলোচনায় এসেছিল। সেদিক থেকে সিলেটের এই সেতুর অভ্যন্তরীণ সংযোগ বা এক্সপানশন জয়েন্টে বাঁশের ব্যবহার খানিকটা ভিন্ন মাত্রার- স্বীকার করতেই হবে। আমরা আশঙ্কা করি, এমন আরও বিচিত্র ধরনের 'বাঁশকাণ্ড' কংক্রিটের অন্তরালে চাপা পড়ে রয়েছে! সমকালে প্রকাশিত আলোচ্য প্রতিবেদনটিতে দেখা যাচ্ছে, সম্প্রতি ওই সেতুর সাতটি অভ্যন্তরীণ সংযোগের তিনটি থেকে লোহার পাত চুরি হয়ে যায়। সেখানে বাঁশ ও বিটুমিন দিয়ে ফাঁকা জায়গাটি ভরাট করা হয়েছে। সওজের স্থানীয় কার্যালয় থেকে যদিও এটাকে 'প্রাথমিক' ব্যবস্থা বলা হয়েছে- আমরা মনে করি, এর মধ্য দিয়ে আসলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করা হয়েছে। এই 'প্রকৌশল' তারা কোথায় পেয়েছেন, সেই প্রশ্নও এ প্রসঙ্গে তোলা যেতে পারে। এভাবে লোহার পাতের বদলে বাঁশ ব্যবহারের পক্ষে যত যুক্তিই দেওয়া হোক, এটা অনিয়ম ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। সর্বনাশা এসব অনিয়ম বন্ধে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়ার অবকাশও নেই। মনে রাখতে হবে, এর সঙ্গে কেবল রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় নয়; মানুষের জীবনের ঝুঁকিও জড়িত। এ ধরনের অনিয়মে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতেই হবে। দুর্ভাগ্যবশত এর আগের বিভিন্ন ঘটনায় জড়িতদের একাংশকে নামমাত্র শাস্তি দিতে দেখেছি আমরা। এই অনুমান অমূলক হতে পারে না যে, আগের ঘটনাগুলোতে উপযুক্ত শাস্তি বিধান করা গেলে পুনরায় বাঁশ ব্যবহারের নজির দেখতে হতো না। আমরা দেখতে চাই, এ ধরনের ঘটনায় সংশ্নিষ্ট সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে। তাহলেই কেবল জীবনের ঝুঁকি তৈরি ও সম্পদের অপচয়কারী এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ হতে পারে।
--
প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০ । ০১:১৯ । প্রিন্ট সংস্করণ
মন্তব্য করুন