পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কারসাজি করে বাড়ানো হচ্ছে- পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এই সতর্কবার্তা হালকাভাবে নেওয়ার অবকাশ নেই। বস্তুত চাহিদা ও সরবরাহের ধ্রুপদি নিয়মের কারণে নয়; বরং আড়তদার, পাইকারি বা খুচরা ব্যবসায়ীরা মিলে কীভাবে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দিতে পারে, তার নজির আমরা নিকট অতীতে পেঁয়াজের ক্ষেত্রে দেখেছি। আর বাজারের গুজব কতটা সংক্রমণ হতে পারে, তা দেখেছি লবণ নিয়ে। ভোজ্যতেল, চাল, ডাল, চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামেও আমরা কিছু দিন ধরে অস্থিরতা লক্ষ্য করছি। ফলে রমজান মাস সামনে রেখে মজুদদারি ও দামের কারসাজি নিয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার সতর্কতা নিছক ঘর পোড়া গরুর সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পাওয়ার সঙ্গে তুল্য হতে পারে না। এও ভুলে যাওয়া চলবে না, প্রতি বছর রমজান মাসের আগে যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের ডেকে আবেদন, নিবেদন, হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, তাতে খুব সামান্যই কাজ হয়। আমাদের মনে আছে- গত রমজান মাসে ব্যবসায়ীদের প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম দামে বিক্রির আহ্বান জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। আখেরে তা অরণ্যে রোদনে পরিণত হয়েছিল। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম দামে দূরে থাক, আরও বাড়ানো হয়েছিল। এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা অনেকবার বলেছি- রমজান মাসে পণ্যের দাম আগের মতো থাকলেই যথেষ্ট। কমানোর দরকার নেই, না বাড়ালেই অনেক। কিন্তু সকলই গরল ভেল! কোনো যৌক্তিক কারণ না থাকলেও প্রত্যেক বছর রমজান মাসেই আমরা একই চিত্র দেখে অভ্যস্ত। পুলিশের বিশেষ শাখার প্রতিবেদনের সুপারিশের সঙ্গে আমরা একমত যে, কেবল আহ্বান জানিয়ে কাজ হবে না। চোর কখনও ধর্মের কাহিনি শুনেছে বলে প্রমাণ নেই। টিসিবিকে আরও সক্রিয় করা এবং প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে সরকারের পক্ষে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির পাশাপশি কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধেও নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা। আমরা জানি, রমজান মাসে পরিবহন খরচ ও চাঁদাবাজির হারও বেড়ে যায়। ফলে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির হ্রাস টানতে হলে বাজারের অভিযানের পাশাপাশি চাঁদাবাজিও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শৃঙ্খলা আনতে হবে পরিবহন ব্যবস্থায়ও। কিন্তু আইনের প্রয়োগ করতে গিয়ে বেআইনি কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতা আমাদের কম নেই। রমজানে যখন বাজারে অনিয়মের বাড়বাড়ন্ত, তখন বাড়তি বিপদ হিসেবে অস্থিতিশীলতাও চাই না। আমরা ভোক্তাদেরও ভাবতে বলি। আমাদের অতি আগ্রহ ও অস্থিরতাই কি পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ নয়? রমজানের মর্মবাণী মেনে আমরা যদি সংযম চর্চা করতে পারি, তাহলে বাজারের এমন পরিস্থিতি এড়ানো যেতে পারে। এসব আপ্তবাক্য আমরা সাধারণত রমজানের আগে আগে উচ্চারণ করি। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাতে আমরা এবার আগে থেকেই বলে রাখছি। আমরা দেখতে চাই, সময় থাকতেই সিন্ডিকেট ভাঙার ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। সময়ের এক ফোঁড় দিলে অসময়ে দশ ফোঁড়ের প্রয়োজন নাও হতে পারে।