- সম্পাদকীয়
- অর্জনে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা
অর্জনে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন
জাতিসংঘ ২০১৬ সাল থেকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ঘোষণা করে; যাতে জাতিসংঘ সদস্যভুক্ত প্রত্যেকটি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুধামুক্তি, সুস্বাস্থ্য, মানসম্মত শিক্ষা, লিঙ্গ সমতাসহ ১৭টি লক্ষ্য অর্জনে বদ্ধপরিকর। এসব লক্ষ্য অর্জনে চার বছরে বাংলাদেশের অগগ্রতি মূল্যায়নের যে পরামর্শ গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির প্রতিবেদনে এসেছে, তার সঙ্গে আমরা বহুলাংশে একমত। আমরা দেখেছি, সিপিডির প্রতিবেদনে আসা ছয়টি লক্ষ্যের মধ্যে তিনটিতেই বাংলাদেশের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণে। এ ছাড়া বৈষম্য নিরসন এবং শান্তি ও ন্যায়বিচারেও অগ্রগতি যথেষ্ট নয়। স্বস্তির বিষয় হলো- শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অংশীদারিত্বের লক্ষ্যগুলোত বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।
১৫ বছরের মধ্যে চার বছরের মূল্যায়ন যদিও সার্বিক অগ্রগতি নির্ণয়ের জন্য যথেষ্ট নয়, তারপরও আমরা কোন পথে আছি এর মাধ্যমে সেটি স্পষ্ট হচ্ছে। আমাদের মনে আছে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত করা জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল। সে সময় উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্জন করতে সক্ষম হয়। এমডিজিতে অতিদারিদ্র্য নিরসন, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, শিশুমৃত্যুর হার, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতির যে দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ তখন দেখাতে সক্ষম হয়েছিল- আমরা মনে করি, তার পরবর্তী ধাপ হিসেবে এসডিজিতেও তা অব্যাহত থাকবে। এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ থাকাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে সিপিডির প্রতিবেদন সূত্রে সমকালের প্রতিবেদনে যেসব চ্যালেঞ্জের কথা এসেছে- বেকারত্ব কমানো, আর্থিক স্থিতিশীলতা অর্জন, দুর্যোগে ক্ষতি কমানো, অর্থ পাচার রোধ ইত্যাদি খুব কঠিন নয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা আছে বলেই আমরা মনে করি। টেকসই উন্নয়নের দায় ও দায়িত্ব কেবল সরকারের একার নয়। সরকারি-বেসরকারি যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হয়। এসডিজি বাস্তবায়নে বেসরকারি খাত, সরকারি খাত, সুশীল সমাজ ও এনজিওদের সেই অংশীদারিত্বের কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠান গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের 'এসডিজি রিপোর্ট' নামে বেসরকারি পর্যায়ে এসডিজিবিষয়ক প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বক্তব্য দেন। এটা সত্য যে, বৈশ্বিক অনেক সূচকেই বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। তবে পরিবেশ দূষণ, যানজট, দুর্নীতি সমস্যার সমাধানে সরকার কাজ করলেও আমরা এগুলোতে বেশ পিছিয়েই আছি। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে সব বাধা মোকাবিলা করা সরকারের রুটিন কাজ হওয়া উচিত। এসবের মাধ্যমেই এসডিজি অর্জন সহজ হবে। তবে এসডিজির সময়সীমা ২০৩০ সাল পর্যন্ত নির্ধারিত বলে মাঝেমধ্যে অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে হবে। এর মাধ্যমে বোঝা সহজ হবে, কোন খাতে আমরা পিছিয়ে বা কোন খাতে জোর দিতে হবে। সিপিডির প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কর্মপরিকল্পনায় আমাদের পিছিয়ে থাকার বিষয়টি যেহেতু জোরালোভাবে এসেছে, আর দুর্যোগও যেহেতু আমাদের নিত্যসঙ্গী, সেহেতু বিষয়টিতে জোর দিতেই হবে। আর কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ সব বিষয়েই সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। তবেই এমডিজির মতো এসডিজিতেও বাংলাদেশ দৃষ্টান্তমূলক সাফল্য অর্জন করবে।
মন্তব্য করুন