গত বর্ষা মৌসুমে ঢাকাসহ সারাদেশেই ডেঙ্গু রোগের ক্রমবিস্তার কতটা মারাত্মক হয়েছিল, তা এখনও আমাদের স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায়নি। আমরা দেখেছি, সময় থাকতে সতর্ক ও প্রস্তুত না হওয়ায় গত মৌসুমে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অতীতের সব মাত্রা অতিক্রম করেছিল। ভয়াবহ ওই সময় পেরিয়ে আসার পর এটা প্রত্যাশিত ছিল যে, এবার আর সংশ্নিষ্টরা ঔদাসীন্য ও অবহেলার পরিচয় দেবেন না। কিন্তু সোমবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে- প্রস্তুতিতে ঘাটতি এখনও প্রকট। মশক নিবারণে জার্মানি থেকে যে 'অত্যাধুনিক' যন্ত্র আমদানি করা হয়েছে, তা সঠিকভাবে চালানোর লোকবল নেই। এমনকি সিঙ্গাপুর থেকে মশক বন্ধ্যত্বকরণ প্রযুক্তি আনার যে তোড়জোড় তখন দেখা গিয়েছিল, তাও স্তিমিত।
আমাদের প্রশ্ন, তাহলে কি এত আলোচনা, আবেদন- সকলই গরল ভেল? আবারও কি নিছক মশক নিবারণের ব্যর্থতা নিকটজনের প্রাণ কেড়ে নিতে থাকবে? যন্ত্রণায় বিদ্ধ হতে থাকবে নগরবাসী। গতবারের চিত্র আমরা আর দেখতে চাই না। স্বীকার করতে হবে, মশক নিবারণের প্রথাগত পদ্ধতি এখন কাজে আসছে না। মশার বিস্তারের নতুন নতুন কারণও যোগ হচ্ছে। গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ চলাকালেই আন্তর্জাতিক কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আমরা দেখেছিলাম, এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে মশকসহ কীটপতঙ্গের প্রজনন পরিবেশ 'উর্বর' হয়েছে।
আগামী মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া 'ডেঙ্গু মৌসুম' সামনে রেখে আমরা সময়ে এক ফোঁড় দিতে বলি। সময় থাকতেই সতর্ক হওয়ার বিকল্প নেই। ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার মতো মশক নিয়ন্ত্রণে গতানুগতিক স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা-সংক্রান্ত তৎপরতার বাইরে এসে পরিবেশ-প্রতিবেশগত প্রতিকারও বিবেচনায় নিতে হবে। গত বছর একই ধরনের সংকট মোকাবিলায় ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডের মতো দেশ একই পরিস্থিতিতে কীভাবে কাজ করেছিল, সেখান থেকেও শিক্ষা নিতে পারি আমরা। সবচেয়ে জরুরি বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে তোড়জোড়ের বদলে সাংবৎসরিক ব্যবস্থা।
দুর্যোগ যত বড়ই হোক, সব পক্ষ আন্তরিকভাবে ও বছরজুড়ে সক্রিয় থাকলে তা মোকাবিলা কঠিন হতে পারে না। জোর দিতে হবে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেও। এ ক্ষেত্রে দায়িত্বও নিতে হবে সরকারি ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে। দুর্ভাগ্যবশত পাড়া-মহল্লায় এ ব্যাপারে প্রচার এখনও আমাদের চোখে পড়েনি। আমরা জানি, আগামী মে মাস থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন নতুন মেয়র। কিন্তু সেজন্য বসে থাকার অবকাশ নেই। আমরা দেখতে চাইব, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও এ ব্যাপারে রাখা হচ্ছে বিশেষ নজরদারি। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত বছর যে লেজেগোবরে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, তার পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই দেখতে চাই না। আমরা বিশ্বাস করি, সবাই মিলে সতর্ক ও দায়িত্বশীল হলে ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে রাখা, এমনকি নির্মূলও কঠিন হতে পারে না।
মন্তব্য করুন