করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯ কীভাবে ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে, প্রতিদিনই দেশীয় ও বিদেশি সংবাদমাধ্যমে দেখছি আমরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যদিও এই ভাইরাসের বিস্তারকে 'মহামারি' ঘোষণা করেনি, এটি বিশ্বের জন্য 'সর্বোচ্চ ঝুঁকি' তৈরি করেছে বলে সতর্কবার্তা ব্যক্ত করেছে। বস্তুত সংখ্যাগত দিক থেকে দেখলেও এর ভয়াবহতা স্পষ্ট। প্রাথমিকভাবে যদিও চীন ও ওই অঞ্চলের দেশগুলোতে সংক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছিল, এখন দেখা যাচ্ছে শুধু বরফ আচ্ছাদিত এন্টার্কটিকা ছাড়া বাকি ছয় মহাদেশের ৫২টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। ইতোমধ্যে ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ নিশ্চিতভাবেই আক্রান্ত হয়েছে, মৃতের সংখ্যাও ছাড়িয়েছে ২৯শ'। আমাদের আশঙ্কা, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। অনেক দেশেই এ-সংক্রান্ত সংক্রমণের সঠিক চিত্র নিরূপণ করা যাচ্ছে না।

বিশেষত উত্তর কোরিয়ার মতো কিছু দেশের প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে বাকি বিশ্বের ধারণাই নেই। মন্দের ভালো যে, বাংলাদেশে এখনও বড় সংখ্যায় সংক্রমণ দেখা যায়নি। চীনের উহান থেকে উদ্ধার করে আনা বাংলাদেশি নাগরিকদেরও দেশে ফিরিয়ে এনে সঙ্গনিরোধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করোনাভাইরাসমুক্ত হিসেবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। দেশের বাইরে সিঙ্গাপুর ও আরব আমিরাতে মোট ছয়জন আক্রান্ত হলেও তাদের বেশিরভাগই শঙ্কামুক্ত ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু তাতে করে সতর্কতায় সামান্য অবহেলারও সুযোগ নেই।

বাংলাদেশের মতো ঘনবসতি ও হালকা সচেতনতার দেশে এ ধরনের ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যে কোনো বিবেচনাতেই ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। আমরা দেখছি, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও করোনাভাইরাসকে পরাস্ত করা কতটা কঠিন হয়ে উঠছে। সেদিক থেকে আমরা যদি ভাইরাস না ছড়ানোর লড়াই জোরদার করতে পারি, তা হবে বেশি কার্যকর। ইতোমধ্যে বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এর সবচেয়ে বড় প্রতিষেধক নাগরিক সচেতনতা। সরকারের পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে।

ভুলে যাওয়া চলবে না যে, করোনাভাইরাসের বিস্তার কেবল আক্রান্তের জন্য বিপজ্জনক নয়। একজন থেকে মুহূর্তেই অনেকজনে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ভাইরাস আক্রান্তের আর্থিক ক্ষতিও বিবেচনায় রাখতে হবে। ইতোমধ্যে গোটা বিশ্বের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন ঘটেছে। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে এই পরিস্থিতিকে। আমদানি-রপ্তানি বিঘ্নিত হওয়ায় উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থা কতটা নাজুক হয়ে পড়েছে, তার খানিকটা আঁচ আমরাও পাচ্ছি। এই পরিস্থিতি অনির্দিষ্টকাল ধরে চলতে পারে। গত তিন মাস করোনাভাইরাস কেবল বিস্তৃতই হচ্ছে। আরও কতদিন পর এর বিস্তার থামবে বা প্রতিষেধক আবিস্কার হবে আমরা জানি না। এই পরিস্থিতিতে সতর্কতা ও সচেতনতাই একমাত্র বিকল্প। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকেও এগিয়ে আসতে হবে এ ক্ষেত্রে। সব পক্ষ আন্তরিক হলে এই লড়াইয়ে বিজয় কঠিন হতে পারে না।