পুকুর-দিঘি-ছড়া-টিলার নগরী সিলেটে অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ড অনেক দিন ধরে চলছে। একদিকে মানুষের লোভের থাবায় দখল হচ্ছে পুকুর-দিঘি, অন্যদিকে টিলায় পড়েছে কোদালের কোপ। এতে শুধু প্রাকৃতিক ভারসাম্যই নষ্ট হচ্ছে না, ডেকে আনছে নানারকম বিপর্যয়ও। আমরা আরও হতাশ যে, সরকারি সংস্থাও পিছিয়ে নেই এমন আত্মঘাতী কর্মকাণ্ডে। শনিবার সমকালে 'কৌশলে পুকুর-দিঘি গিলছে সিসিক' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকার নামকরণও হয়েছিল পুকুর-দিঘির নামানুসারে। এখন এলাকাগুলো থাকলেও খোদ পুকুর-দিঘি অস্তিত্বহীন। দখলে-দূষণে বিপন্ন এখনও যেগুলোর অস্তিত্ব কোনো রকম টিকে আছে, সেদিকেও পড়েছে দখলদারের লোলুপ দৃষ্টি। এবার কৌশলে পুকুর দখলের অশুভ প্রতিযোগিতায় নেমেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।
সিলেট নগরীর কাজীটুলার কাজীদিঘি ও জিন্দাবাজারের কাস্টমস অফিসের পুকুরের আয়তন কমিয়ে ফেলা হচ্ছে! উন্নয়নের নামে এমন কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা জানি, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নিকট অতীতেও নির্দেশনা দিয়েছেন। জলাধার সংরক্ষণ আইন উপেক্ষা করে প্রায় ২৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সিলেট নগরীতে যে অশুভ প্রতিযোগিতা চলছে, আশু এর নিরসন দরকার।
সারাদেশেই কমবেশি এমন চিত্র বিদ্যমান। জলাশয় দখল-দূষণের কারণে পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর যেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তেমনি এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় সুপেয় পানি সংকটের পাশাপাশি শহর-নগরে অগ্নিনির্বাপণ কর্মকাণ্ডও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ভূমি আগ্রাসনের কারণে জলাশয় বিলীনের এই অপপ্রক্রিয়া ঠেকাতেই হবে। এ ক্ষেত্রে জলাধার সংরক্ষণ আইনের প্রয়োগ জরুরি। আমরা আশা করি, সিসিক উন্নয়নের নামে আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড বন্ধ করে পরিকল্পিত নগরায়ণে মনোযোগী হবে। একই সঙ্গে সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীল মহলগুলো দখলকৃত জলাশয় উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
মন্তব্য করুন