চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার একটি পুলিশ বক্সে শুক্রবার রাতে বিস্ম্ফোরণে অন্তত পাঁচজন আহত হওয়ার খবরটিকে হালকাভাবে নেওয়ার অবকাশ নেই। অস্বীকার করা যাবে না যে, জঙ্গিবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠী বাংলাদেশে অতীতে যে মাত্রায় হামলা চালিয়েছে, এ হামলা সে তুলনায় 'ছোট'। কিন্তু এর মাত্রা ও অভিমুখ আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। আমাদের মনে আছে, গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ঢাকা ও খুলনায় অন্তত সাতটি এলাকায় পুলিশ বক্সে বা টহল গাড়িতে এভাবে বিস্ম্ফোরণ ঘটেছিল বা বিস্ম্ফোরক পাওয়া গিয়েছিল।
তখনই আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল যে, এভাবে হামলার মধ্য দিয়ে নতুন কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী আত্মপ্রকাশ করতে চাইছে বা পুরোনো জঙ্গিগোষ্ঠী নতুন পন্থা অবলম্বন করছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় এক অভিযানে তিন জঙ্গি আটক হওয়ার মধ্য দিয়ে অবশ্য বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর হামলার সূত্রও মিলে গিয়েছিল। রোববার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, আগের সাতটি ঘটনায় ব্যবহূত বোমার সঙ্গে চট্টগ্রামের এই বিস্ম্ফোরকের মিল রয়েছে। হামলার ধরন থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্দেহ করছে, এর নেপথ্যে রয়েছে নব্য জেএমবি। আমরা উদ্বিগ্ন এ কারণে যে, এত অভিযানের পরও জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর দৌরাত্ম্য কমছে না কেন? আগে যেখানে শুধু রাজধানীতে এ ধরনের হামলা দেখা যেত, এখন খুলনা ও চট্টগ্রামেও ছড়িয়েছে। আমরা দেখতে চাইব, দেশের অন্যান্য নগরেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে ফতুল্লায় আটক জঙ্গিদের কাছ থেকে তাদের নেটওয়ার্কের সম্পূর্ণ চিত্র উদ্ধারেও উদ্যোগী হওয়ার বিকল্প নেই। সম্প্রতি আমরা দেখেছি, মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে ওঠা কুখ্যাত জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের কার্যক্রম বিস্তৃত করার ইঙ্গিত দিয়েছে। বস্তুত গত বছরের মার্চে জঙ্গিগোষ্ঠীটির এক প্রকাশনায় বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা জোরদারের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। চট্টগ্রামে সর্বশেষ বিস্ম্ফোরণসহ অন্যগুলো এরই প্রমাণ কিনা, খতিয়ে দেখা জরুরি। আমরা আগেও নব্য জেএমবির সঙ্গে আইএসের যোগসূত্রের প্রমাণ পেয়েছি। মধ্যপ্রাচ্যে কথিত খেলাফত উচ্ছেদের পর তাদের মধ্যে সংযোগ নতুন মাত্রা পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে আগেও আমরা একাধিকবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছি যে, আইএস মধ্যপ্রাচ্যে মাটি হারানোর পর এর জঙ্গিরা নিজ নিজ দেশে গিয়ে সক্রিয় হতে পারে।
গত বছর খোদ ঢাকায় এমন একজন জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়েছিল, যে সিরিয়ায় আইএসে যুক্ত ছিল। সন্দেহ নেই, হলি আর্টিসান-পরবর্তী সময়ে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় আমরা আগের তুলনায় সতর্ক ও সক্রিয় হয়েছি। ইতোমধ্যে এর সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির রায়ও এসেছে আদালত থেকে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে চলছে। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু জঙ্গি অভিযানে আটক বা নিহত হয়েছে। কিন্তু সতর্কতা ও নজরদারি যে সবসময়ের, পাঁচলাইশের হামলা সেই তাগিদই দিয়ে গেল।
মন্তব্য করুন