শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস আক্রান্ত তিনজন শনাক্ত হয়েছে। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) আনুষ্ঠানিকভাবে রোববার এ তথ্য প্রকাশের পর নাগরিকদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এর ছাপ আমরা দেখতে পাচ্ছি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আমরা মনে করি, করোনাভাইরাসের জন্য আতঙ্ক নয়, বরং বাড়তি সতর্কতা জরুরি। মনে রাখতে হবে, এটা বৈশ্বিক দুর্যোগ। চীনে প্রথম শনাক্ত হলেও এখন গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার কারণ ও ধরন বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া তিনজনের ক্ষেত্রেই স্পষ্ট। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, আক্রান্তদের দু'জন ইতালি থেকে ফিরে আসা এবং অপরজন তাদের নিকটাত্মীয়। এ ক্ষেত্রে বিমান ও স্থলবন্দরগুলোতে বাড়তি পরীক্ষা, নজরদারি ও সতর্কতাই হতে পারত উপযুক্ত জবাব।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সেখানে 'ঢিলেঢালা' তৎপরতার খবর সংবাদমাধ্যমে আসছে। আক্রান্ত দু'জনও বিমানবন্দরে নয়, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। এমন আরও 'রোগী' থাকার আশঙ্কা আমরা উড়িয়ে দিতে পারি না। স্বস্তির বিষয় যে, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে দৃশ্যমান প্রস্তুতি নিয়েছে। অন্য আরও নানা বিষয়ের মতো লুকোচুরির বদলে বিষয়টি প্রকাশ্যে এনে মোকাবিলায় উদ্যোগী হওয়া পরিণত মানসিকতার প্রমাণ। আমরা দেখতে চাইব, বিমানবন্দর কিংবা স্থল ও নৌবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা গৃহীত হয়েছে। আগের মতো ঔদাসীন্য দেখতে চাই না। একই সঙ্গে সবাইকে আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই যে, করোনাভাইরাস এড়াতে নাগরিক সতর্কতাই উত্তম প্রহরী।
আমরা সবাইকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে বলি। তারপরও কেউ যদি আক্রান্ত হন, তাহলে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। এটা আর দশটা ভাইরাসজনিত রোগের মতোই। উপযুক্ত ও সময়োচিত চিকিৎসায় নিরাময় সম্ভব। সব দায়িত্ব বন্দরের ওপর ছেড়ে দিয়ে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কর্তব্যেও সামান্য অবহেলার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতি ও হালকা সচেতনতার দেশে এ ধরনের ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যে কোনো বিবেচনাতেই ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। আমরা দেখছি, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও করোনাভাইরাসকে পরাস্ত করা কতটা কঠিন হয়ে উঠছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা একাধিকবার বলেছি যে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিষেধক উত্তম।
করোনাভাইরাস চিকিৎসার চেয়ে ভাইরাস না ছড়ানোর লড়াই জোরদার করা বেশি কার্যকর। বাজারে ইতোমধ্যে সৃষ্ট 'মাস্ক' সংকট কীভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুরাহা করা যায়, ভাবতে হবে কর্তৃপক্ষকে। সরকারের পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে। আতঙ্ক ও গুজব যাতে না ছড়ায়, সে ব্যাপারেও উদ্যোগী হতে হবে সব পক্ষকে। অর্থনৈতিক প্রস্তুতি নেওয়াও জরুরি। ইতোমধ্যে গোটা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার ছায়া ঘনীভূত হচ্ছে। আমদানি-রপ্তানি বিঘ্নিত হওয়ায় উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থা কতটা নাজুক হয়ে পড়েছে, তার খানিকটা আঁচ আমরাও পাচ্ছি। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের প্রস্তুতি রাখতে হবে; কিন্তু আতঙ্কিত হওয়ার অবকাশ নেই। সবাই সতর্ক, সচেতন ও সক্রিয় হলে করোনাভাইরাসের দৈত্যকে পরাস্ত করা কঠিন হতে পারে না।
মন্তব্য করুন