করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে চিকিৎসক ও চিকিৎসা সংশ্নিষ্টদের অনেকেই নিজেদের পেশাগত মানবিক দায়িত্ব পালন থেকে দূরে থাকার খবর এর আগে সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। কিন্তু এখন দেশের প্রায় সব হাসপাতালেই তাদের সুরক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই নিশ্চিত করা হয়েছে। পিপিইসহ আনুষঙ্গিক সবকিছু দেওয়া হয়েছে। তারপরও তাদের অনেককেই কর্মস্থলে না পাওয়া কিংবা যে কোনো সাধারণ রোগীকেও চিকিৎসা প্রদানে অনীহার বিষয়টি যুগপৎ দুঃখজনক ও প্রশ্নবোধক। এমনকি অনেকেই চেম্বারও করছেন না। চিকিৎসকরা দায়িত্ব সচেতন ও জনবান্ধব হবেন এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু শুক্রবার সমকালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন ফের প্রশ্ন দাঁড় করিয়েছে। 'হাসপাতালে নেই জরুরি সেবাও' শিরোনামে প্রকাশিত ওই সংবাদ প্রতিবেদনে চট্টগ্রামের যে চিত্র উঠে এসেছে, তা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। ১৪ বছরের শিশুর কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে শেষ পর্যন্ত একটি হাসপাতালে ঠাঁই পেলেও প্রায় বিনা চিকিৎসায় তার প্রাণহানির বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না। দেশের বিভিন্ন স্থানের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন দায়িত্বহীনতার একাধিক চিত্র উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। অনেক রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিংবা নির্ণয়কেন্দ্রে টেকনিশিয়ানরা না থাকায় রোগ নির্ণয় কার্যক্রমও ভেঙে পড়েছে। আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সম্প্রতি ভিডিও কনফারেন্সের সময় সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালের চিকিৎসকদের অনুরোধ জানিয়েছেন কোনো রোগীকে যেন ফিরিয়ে দেওয়া না হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ না করে রোগী দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন। প্রতিদিনই মানুষ কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। সব রোগীই করোনা আক্রান্ত- চিকিৎসকরা যদি এমন ধারণা পোষণ করেন, তাহলে তা খুবই অসঙ্গত। তারা তাদের পেশার মূলমন্ত্র মানবিক দায় পালনে কোনোভাবেই অনীহা প্রকাশ করতে পারেন না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাধারণ রোগীরা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এভাবে চিকিৎসাবঞ্চিত হবেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ শুধু মানুষের মৌলিক অধিকারের ওপরই আঘাত নয়, সরকারি নির্দেশনা ও সংবিধানের প্রতিও অবজ্ঞা প্রদর্শনের শামিল বলে আমরা মনে করি। এমন কর্মকাণ্ড অপরাধের পর্যায়েও পড়ে। চিকিৎসকসহ সংশ্নিষ্টদের সুরক্ষার ব্যাপারে আমরা দ্বিমত পোষণ করি না। কিন্তু তারা কোনোভাবেই চিকিৎসা সেবাদানে অনীহা প্রকাশ কিংবা নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারেন না। স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বশীলসহ চিকিৎসক ও সংশ্নিষ্টরা তাদের দায়বোধ ভুলে না গেলেই মঙ্গল। আমরা আশা করি, তারা করোনাভাইরাস আক্রান্ত যেমন, তেমনি অন্য রোগে আক্রান্তদেরও যথাযথ চিকিৎসা দানের ব্যাপারে নিষ্ঠ হবেন। করোনাভাইরাস আক্রান্তদের ব্যাপারে সরকারের জোরদার উদ্যোগের পাশাপাশি সাধারণ রোগীদের যাতে চিকিৎসা ব্যাহত না হয়, এ ব্যাপারে মনোযোগ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক সংহতি-সংবেদনশীলতাও বাড়াতে হবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেও তা যে সম্ভব, এমন দৃষ্টান্ত আমাদের সামনেই রয়েছে।
--
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০ । ২৩:০১ | আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০ । ১৯:৫০ । প্রিন্ট সংস্করণ
মন্তব্য করুন