করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষায় মানুষ যখন ঘরে অবস্থান করছে, তখন বাইরের প্রাণিকুল ভুগছে মারাত্মক খাদ্য সংকটে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বন, উদ্যান ও বিশেষত শহর এলাকার প্রাণিকুলের দুর্দশার চিত্র সংবাদমাধ্যমে ফুটে উঠেছে। বস্তুত আমরা দেখে আসছি, যখনই মানবসমাজ কোনো দুর্যোগে পতিত হয়, তাতে প্রাণিকুলও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা দুর্যোগ যেভাবে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে, বাংলাদেশেও যেভাবে এর প্রভাব দিন দিন প্রবলতর হচ্ছে, তা থেকে বাঁচতে ঘরে থাকার বিকল্প নেই। এ অবস্থায় মানুষের সুরক্ষা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রাণিকুলের কথাও ভুলে থাকা চলে না। করোনার এ সময়ে যেহেতু অনেক শ্রমজীবী মানুষই কাজের বাইরে, অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আয়ের পথ বন্ধ বলে মানুষও খাদ্য সংকটে পড়েছে। ফলে বিচ্ছিন্নভাবে ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ কেউ মানুষের পাশাপাশি প্রাণীদের খাবার দিতেও এগিয়ে এসেছেন। তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্যই। সমকালে মধুপুর বনের অভুক্ত বানর-হনুমানের দল খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে আসার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে এসে বেঘোরে মারা যাচ্ছে অভুক্ত প্রাণিকুল। মধুপুরসহ অন্যান্য বনের এসব প্রাণীর কথাও চিন্তা করা দরকার। এরা লোকালয়ে মারা গেলে সেটাও প্রতিবেশ ব্যবস্থার জন্য নেতিবাচক হবে। আমরা জানি, পশুপাখি ও অন্যান্য প্রাণিকুল প্রতিবেশেরই অংশ। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় আমাদের উপকারে তারা জড়িয়ে থাকে। খাদ্যের অভাবে প্রাণিকুলের এ করুণ পরিণতি কাম্য নয়। স্বাভাবিকভাবেই রাজধানীসহ শহরে আশ্রিত প্রাণীরা বেশি সংকটে রয়েছে। অফিস-আদালত, হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ বলে ইট-কাঠ-পাথরের এ শহরে খাদ্য ছাড়া তাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় তাদের জীবন বাঁচাতে প্রশাসনকেই এগিয়ে আসতে হবে। কুকুর-বিড়ালের জন্য রাজধানীতে এলাকাভিত্তিক খাবার দেওয়া যেতে পারে। বন ও উদ্যানগুলোতেও প্রাণীদের জন্য সরকারিভাবে যে টোকেন খাবার হিসেবে কলা, বাদাম ও বিস্কুট দেওয়া হয়, তার বাজেট বাড়িয়ে সংকটের এ সময়ে তাদের বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য দেওয়া জরুরি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণিকুল রক্ষার বিষয়টিও জোর দেওয়া প্রয়োজন। বন-জঙ্গলের বাইরে আসা প্রাণিকুলকে অসহায় পেয়ে সবাই মারতে নয়, খাবার দিয়ে তাদের রক্ষায় উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। সরকার, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও মানবিক মানুষ খাবার নিয়ে এগিয়ে এলে মানুষের পাশাপাশি প্রাণিকুলকেও বাঁচানো নিশ্চয়ই সম্ভব হবে।

বিষয় : প্রাণিকুল

মন্তব্য করুন