শেষ পর্যন্ত যে দেশের মসজিদগুলোতে নামাজের জামাত সীমিত করার ব্যাপারে আলেম-ওলামা ও ধর্ম মন্ত্রণালয় ঐকমত্যে পৌঁছতে পেরেছে, তা বিলম্বিত হলেও ইতিবাচক। সোমবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে মুসল্লিদের নিজের ঘরে নামাজ পড়ার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, করোনা মোকাবিলার স্বার্থে তা সবাই মেনে চলবেন বলে প্রত্যাশা। বস্তুত এর বিকল্পও ছিল না। আমরা দেখছি, মুসলিম বিশ্বের আবেগ ও শ্রদ্ধার জায়গা সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনাতেও মসজিদে জামাতে নামাজ সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগুরু দেশের সরকারও নিয়েছে একই ধরনের সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশে বরং সরকার মধ্যমপন্থা অবলম্বন করেছে। ওয়াক্তের জামাতে অনধিক পাঁচজন এবং জুমার জামাতে অনধিক দশজন অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত নামাজিদের বদলে মসজিদেরই ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমরা মিলে জামাত করবেন। আমরা মনে করি, এর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন মসজিদগুলো 'বন্ধ' হচ্ছে না; অন্যদিকে জনসমাগমের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকিও বহুলাংশে কমে গেল। একই সঙ্গে মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধরনের ধর্মীয় স্থাপনায় সমাগম এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। আমরা বিশ্বাস করি, সব ধর্মের প্রত্যেক নাগরিক এই নির্দেশনা যথাযথ মেনে চলবেন। প্রার্থনা সম্পর্কিত এই নির্দেশনা ধর্মের সঙ্গে কোনোভাবেই সাংঘর্ষিক হতে পারে না। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ইসলামসহ বিভিন্ন ধর্মে মহামারি ও দুর্যোগের সময় জনসমাগম সুস্পষ্টভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আমরা দেখছি, দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরাও সরকারের সিদ্ধান্ত স্বাগত জানিয়ে এ ব্যাপারে ইসলাম ধর্মের ইতিবাচক নির্দেশনা তুলে ধরছেন। অস্বীকার করা যাবে না যে, এর সঙ্গে মানুষের ধর্মীয় আবেগ ও জীবনাচরণ জড়িত। কিন্তু একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, ধর্ম আমাদের প্রজ্ঞাপূর্ণ আচরণেরও তাগিদ দিয়ে থাকে। সামষ্টিক স্বার্থে ব্যক্তিগত প্রার্থনার ধারায় সাময়িক এই ব্যবস্থা সবাই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে চর্চা করবেন। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসনকেও কাজ করতে হবে প্রজ্ঞার সঙ্গে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে ধর্মীয় স্থাপনার পরিচালক, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও এগিয়ে আসতে হবে সদিচ্ছার সঙ্গে। কেবল ধর্মাচরণে নয়, করোনাভাইরাসের কারণে মানবজাতির সামনে যে দুঃসময় উপস্থিত হয়েছে, তা মোকাবিলায় আমাদের সব ক্ষেত্রেই দিতে হবে প্রজ্ঞার পরিচয়। অভ্যাস, জীবনাচরণে আগের মতো মর্জিমাফিক সিদ্ধান্ত হতে পারে আত্মঘাতী। কেবল নিজের জন্য নয়- পরিবার, স্বজন, সমাজ, এমনকি মানবজাতির জন্য। আমরা সবার কাছেই প্রজ্ঞাপূর্ণ আচরণ ও সিদ্ধান্তের প্রার্থনা করি। আমরা চাই- ঘরে অবস্থান করেই নাগরিকরা নিজ নিজ ধর্মমতে প্রার্থনা করবেন, যাতে করে এই দুঃসময় দ্রুত কেটে যায়। আবার আমাদের মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ ধর্মীয় স্থাপনাগুলো যেন ধর্মপ্রাণ মানুষের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে। যে স্বাভাবিক জীবন আমরা আবহমানকাল ধরে যাপন করেছি, সেখানে ফেরার জন্য সাময়িক সীমাবদ্ধতা সবাইকে মেনে নিতেই হবে।
--
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০ । ২২:৩৮ । প্রিন্ট সংস্করণ
মন্তব্য করুন