করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে চলমান 'লকডাউন' দীর্ঘতর হবে বলেই মনে হচ্ছে। আমরা দেখেছি, বিকল্প মাধ্যম বিশেষত অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে নানা মাধ্যম থেকে দাবি ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। একইভাবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গত মাসের শেষ সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণের জন্য শিক্ষকদের অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়। সে অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে। সেখানে ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি পরীক্ষা তথা মূল্যায়ন কার্যক্রমও তারা চালু রাখে। এমনকি কোনো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমরা মনে করি, এ দুর্যোগকালে এটি যথোচিত ও সময়োচিত সিদ্ধান্ত। কিন্তু হঠাৎ করে ইউজিসি যেভাবে একতরফা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে, তাতে আমরা বিস্মিত না হয়ে পারি না। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখলে পরীক্ষা বা মূল্যায়ন কার্যক্রম কেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালু রাখতে পারবে না?

মূল্যায়ন যেহেতু শিক্ষা কার্যক্রমেরই অংশ, সেহেতু মূল্যায়ন বন্ধ রেখে শিক্ষা সম্পূর্ণ হতে পারে না। তাছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে বলছে, মূল্যায়ন চালু না রাখলে অনলাইন ক্লাস অর্থহীন হয়ে যাবে, তাতে অনেকেরই গুরুত্ব থাকবে না- সেটিও যুক্তিগ্রাহ্য। আমরা মনে করি, ক্লাসের পাশাপাশি পরীক্ষা কার্যক্রমও অনলাইনে চলতে পারে। কারণ তথ্যপ্রযুক্তি এতটা এগিয়েছে যে, অনলাইনের মাধ্যমেই যথাযথ উপায়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নামমাত্র পরীক্ষা বা কোনো পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দিতে চাইছে বলে ইউজিসি যে অভিযোগের কথা বলছে, সেটি খতিয়ে দেখা যেতে পারে। অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই যথাযথ মান যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে এমন উপায় অবলম্বন করা দরকার, যাতে অনিয়মও ঠেকানো যায়। এ ক্ষেত্রে ওপেন বুক পরীক্ষা একটি উদাহরণ হতে পারে। কিন্তু তার বদলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ যৌক্তিক অবস্থান হতে পারে না। আমরা চাই, ইউজিসি এ ব্যাপারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসেই  বিষয়টি সুরাহা করুক।