করোনা পরিস্থিতিতে অতিদরিদ্র পরিবারপ্রতি মাসে দুই হাজার টাকা নগদ দেওয়ার যে পরিকল্পনার কথা রোববার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমরা তা স্বাগত জানাই। এই বাজারে দুই হাজার টাকা বড় অঙ্ক না হলেও এতে করে এই দুঃসময়ে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের নাগরিকদের জীবিকা নির্বাহ নিশ্চয়ই সহজতর হবে। আমরা জানি, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষে বিভিন্ন পর্যায়ে ইতোমধ্যে ত্রাণ কর্মসূচি চলছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আগে থেকে চালু কর্মসূচিগুলোরও আওতা বাড়ানো হয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগেও ছিন্নমূল মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসছেন অবস্থাসম্পন্ন নাগরিকরা। কিন্তু নগদ অর্থের উপযোগিতা তার থেকে ভিন্ন। এতে করে দরিদ্র পরিবারগুলোর 'ফ্রিডম অব চয়েজ' বহুলাংশে বেড়ে যাবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম যখন বিপর্যস্ত, তখন আপৎকালীন ওষুধপথ্য কেনারও সামর্থ্য বেড়ে যাবে। এ ছাড়া সরকার যে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করছে, এই অর্থে সেখান থেকেও সুবিধা নিতে পারবে গ্রহীতারা। বস্তুত নগদ অর্থের বহুবিধ উপযোগিতা বিবেচনা করেই বিভিন্ন মহল থেকে ইতোমধ্যে এ ধরনের সহায়তার দাবি উঠেছে।

আমরা দেখছি, নগদ সহায়তার উদ্যোগ সম্পর্কিত খবরটি যেদিন সমকালে প্রকাশ হয়েছে, সেদিনই সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজনের পক্ষ থেকে দরিদ্র মানুষকে সরাসরি সহায়তার দাবি জানানো হয়েছে। অবশ্য সংস্থাটির পক্ষে যেভাবে খাদ্য সহায়তার পরিবর্তে নগদ অর্থ সহায়তার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, আমরা তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি। আমরা মনে করি, খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই। এতে করেই বরং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। খাদ্য ছাড়া শুধু নগদ অর্থপ্রাপ্তিতে অপচয় বা উপযুক্ত খাতে ব্যয় না হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমরা মনে করি, খাদ্যের পাশাপাশি মাসে পরিবারপ্রতি হাজার দুয়েক নগদ অর্থ হতে পারে পূর্ণাঙ্গ সহায়তা 'প্যাকেজ'।

আমরা এও দেখেছি, প্রতিবেশী ভারতেও সামাজিক সুরক্ষার অংশ হিসেবে অতিদরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য নগদ সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা এ ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ সহায়তার অর্থ দরিদ্র পরিবারগুলোতে পৌঁছে দিতে পারি। এ ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটরগুলো তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে এই বিতরণ সেবা বিনামূল্যে দিতেই পারে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ বিতরণ করা হলে ঘাটে ঘাটে অনিয়ম ও নয়ছয়ের ঝুঁকি কমবে। বাংলাদেশে দরিদ্র পরিবারগুলোর অধিকাংশের কাছেই অন্তত একটি মোবাইল ফোন রয়েছে বলে ধারণা করা যায়। যাদের নেই, তাদের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের উদ্যোগী হতে হবে। সমকালের আলোচ্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে কমবেশি ৩৬ লাখ অতিদরিদ্র পরিবারকে মাসিক নগদ প্রণোদনা দিতে সরকারের মোট খরচ সাতশ' কোটি টাকারও কম। আমরা বিশ্বাস করি, যে সরকার করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমাজের বিভিন্ন স্তরের জন্য প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারে, তারা অর্থনৈতিকভাবে দেশের প্রান্তিকতম জনগোষ্ঠীর জন্য এই অর্থ খরচের সামর্থ্য রাখে।