অস্থিরতা কমান, অর্থনীতি বাঁচান

.
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | ১৭:২৩ | আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | ২৩:২৩
রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের অর্থনীতিতেও ঝুঁকি বাড়াইয়া তুলিতেছে বলিয়া সোমবার সমকালে প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদনে যেই চিত্র উঠিয়া আসিয়াছে, উহা অগ্রাহ্য করিবার অবকাশ নাই। কারণ উন্নত-অনুন্নত দেশ নির্বিশেষে রাজনীতি ও অর্থনীতি পরস্পর হাত ধরিয়া চলিয়া থাকে। সমকালের আলোচ্য প্রতিবেদনেও স্পষ্ট দেখা যাইতেছে, হরতাল বা অবরোধের ন্যায় রাজনৈতিক কর্মসূচি কীভাবে উৎপাদন, পরিবহন ও বাণিজ্য ব্যবস্থায় প্রত্যক্ষভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলিতেছে। আমরা আশঙ্কা করি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার পতনশীল মজুতের এই সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা পরিস্থিতি আরও নাজুক করিয়া তুলিবে। সমকালের প্রতিবেদনেই রপ্তানি হ্রাস পাইবার যেই চিত্র উঠিয়া আসিয়াছে, তাহাতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ আরও হ্রাস পাইবে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত রক্ষায় যখন এই প্রবাহ বৃদ্ধিই সবচাইতে জরুরি, তখনই উহা হ্রাসের বিরূপ প্রভাব হইবে বহুমাত্রিক। শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমিবার অর্থ হইতেছে, বিনিয়োগেও ধীরগতি চলিতেছে কিংবা আসন্ন। এই সকল কিছুই একদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত করিয়া তুলিবে, অপরদিকে জীবন-জীবিকাও হইয়া উঠিবে কঠিনতর।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর একজন সহসভাপতির ভাষ্যে শুধু পরিবহন খাতেই রাজনৈতিক কর্মসূচির বিরূপ প্রভাবের দুষ্টচক্র স্পষ্ট। সড়কপথে অবরোধ থাকিলে উৎপাদকরা উপযুক্ত মূল্য পান না; সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটিবার কারণে ভোক্তাকেও বাড়তি মূল্য চুকাইতে হয়। আবার ঝুঁকি লইয়া পণ্য পরিবহনে ২৫ হইতে ৩০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির কারণে উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী মধ্যস্বত্বভোগীদেরও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ব্যয় করিতে হইতেছে। আর অগ্নিসংযোগের ন্যায় ‘দুর্ঘটনা’ ঘটিলে তো সকলই গরল ভেল! বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিবের এই পর্যবেক্ষণও উদ্বেগ বাড়াইবার জন্য যথেষ্ট যে, এক দিবসের হরতাল কিংবা অবরোধে দোকানপ্রতি ৫ হইতে ৬ সহস্র টাকার ক্ষতি হয়। স্মরণে রাখিতে হইবে, এই ক্ষতি কেবল ব্যক্তি বা পেশাবিশেষের নহে। বরং ইহাতে সামগ্রিক অর্থনীতির যেই ক্ষতি হইবে, উহা সকলকেই ভোগাইবে। যেইখানে ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা ও সুশাসনের ঘাটতি অর্থনীতিতে এমনিতেই বোঝা হইয়া থাকে, সেইখানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার শাকের আঁটি চাপাইয়া দিলে পরিস্থিতি কী হইতে পারে উহা বুঝিবার জন্য বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই।
সমকালের প্রতিবেদনে উদ্ধৃত ব্যবসায়ী মহলের এই উপলব্ধির সহিত আমরাও একমত, যেই কোনোভাবেই হউক রাজনৈতিক সমঝোতা প্রয়োজন। আমরাও মনে করি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও নাজুক হইয়া পড়িবার পূর্বেই ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক দলগুলির সম্বিত ফিরিবে। আমরা বিশ্বাস করিতে চাহি, আর কিছু না হউক দেশের অর্থনীতি সচল ও সচ্ছল রাখিবার স্বার্থেই তাহারা রেষারেষিমূলক রাজনৈতিক কর্মসূচি হইতে সরিয়া আসিবে। রাজায় রাজায় যুদ্ধে কীভাবে উলুখাগড়ার প্রাণ যায়; হরতাল ও অবরোধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহন দগ্ধ হইবার মধ্য দিয়া খানিকটা বোঝা যায়। কিন্তু চাক্ষুষ না করিলেও অর্থনীতির দহন আরও তীব্র। সেইখানে কেবল উলুখাগড়া নহে, খোদ রাজাগণও বিপাকে পড়িতে বাধ্য।