ফিরাইয়া দাও মুক্ত শৈশব

প্রতীকী ছবি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:২৩ | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ১৫:২৮
দেশের উচ্চ ও নিম্ন আদালতে ‘মামলাজট’ লইয়া যখন আমরা আক্ষেপে আকুল, তখন নূতন উদ্বেগের জন্ম দিয়াছে কেবল শিশুদের বিরুদ্ধেই প্রায় ৪০ সহস্র মামলা বিচারাধীন থাকিবার খবর।
সোমবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের এই তথ্য আরও উদ্বেগজনক, ইহার মধ্যে দুই সহস্রাধিক মামলা পাঁচ বৎসরেরও অধিক সময় ধরিয়া বিচারাধীন। অথচ ২০১৩ সালের শিশু আইনে প্রাঞ্জল ভাষায় বলা হইয়াছে, আদালতে ‘অভিযুক্ত’ শিশুর প্রথম উপস্থিতি হইতে ৩৬০ দিবসের মধ্যেই বিচারকার্য সম্পন্ন করিতে হইবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বড়জোর আরও দুই মাসসহ সর্বোচ্চ ১৪ মাস পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা যাইবে।
আলোচ্য প্রতিবেদনেই রহিয়াছে, মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণে কোনো কোনো শিশুর বয়স বৃদ্ধির কারণে তাহাকে সংশোধনাগারের পরিবর্তে কারাগারে যাইতে হইবে। এই পরিস্থিতি ব্যতীত ও সংশোধনাগারে স্বাভাবিকের অতিরিক্ত সময় অবস্থান কিংবা জামিনে মুক্ত থাকিলেও দীর্ঘতর বিচার প্রক্রিয়া কেবল হয়রানিমূলক নহে, হতাশাজনকও। সেইখান হইতে কেহ যদি নূতন করিয়া অপরাধে জড়াইয়া পড়ে, দোষ দিব কাহাকে?
শিশুদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে আইনি প্রক্রিয়ার সহিত সংশ্লিষ্টদের জনবল সংকট, অদক্ষতা ও অবহেলার যেই কারণ দেখানো হইতেছে, উহা আংশিক সত্য। নিছক কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা নহে, নীতিগত পরিস্থিতিও বিবেচনায় লইতে হইবে। এই ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন-আদালত এবং বিরোধ নিষ্পত্তির বিকল্প ব্যবস্থায় যদ্রূপ তাগিদ দেওয়া যাইতে পারে, তদ্রূপ শিশু-কিশোরদের অপরাধপ্রবণতা প্রতিরোধে মনোযোগ দিতে হইবে। আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক কারণও গুরুত্বপূর্ণ। কিশোর-তরুণদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা এবং উহার অনিবার্য অনুষঙ্গ হিসাবে মাদকের বিস্তার কিংবা উভয়ের জের ধরিয়া রক্তারক্তি, ছিনতাই, যৌন হয়রানি এমনকি খুনাখুনির নেপথ্যে অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের ‘অর্থপূর্ণ’ আশীর্বাদও থাকে।
এই প্রশ্ন লইয়া আমাদের সকলকেই ভাবিতে হইবে যে, যেই বয়সে পড়াশোনা, খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকিবার কথা, সেই বয়সে শিশু-কিশোররা কেন অপরাধে জড়াইয়া যাইতেছে? কেন সুকুমারবৃত্তি লালনের পরিবর্তে আদালত ও সংশোধনাগার এবং ক্ষেত্রবিশেষে কারাগারে দৌড়াইতে হইতেছে?
আমরা মনে করি, সামাজিক এই সন্ধিক্ষণে প্রশাসনের পাশাপাশি পরিবার, সমাজ ও অভিভাবকদের আগাইয়া আসিতে হইবে। কারাগার বা সংশোধনাগারের বন্দিদশা হইতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্ত রাখিতে অনলাইন ও অফলাইনের অনাকাঙ্ক্ষিত বন্দিত্ব হইতে মুক্তি দিতে হইবে।