ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

দুদকের হতাশাজনক ১৯ বৎসর

দুদকের হতাশাজনক ১৯ বৎসর

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ২২:০০ | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:৩০

মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক ১৯ বৎসর পূর্ণ করিল। দেশে দুর্নীতির আশঙ্কাজনক বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সচেতন নাগরিকদের উত্তরোত্তর দাবিকে মান্যতা দিতে ২০০৪ সালে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরোর স্থলে একটা ‘স্বাধীন’ প্রতিষ্ঠানরূপে দুদকের প্রতিষ্ঠা।

প্রত্যাশিত জনআস্থা অর্জনে একটা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৯ বৎসর যথেষ্ট সময়। কিন্তু দুঃখজনক, অদ্যাবধি ঐ আস্থা অর্জনে দুদক ব্যর্থ হইয়াছে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে বিশেষত দুর্নীতি-অনিয়মে চরম ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের প্রত্যাশা তলানিতে ঠেকিয়াছে বলিলেও ভুল হইবে না। নিঃসন্দেহে বিগত সময়ে দুদকের দায়সারা কার্যক্রমই এহেন হতাশাজনক পরিস্থিতির জন্ম দিয়াছে। একটা পরিসংখ্যান দিলেই বিষয়টা পরিষ্কার হইবে।

দুদকের নিজস্ব পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করিয়া মঙ্গলবার সমকাল জানাইয়াছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সালে দুর্নীতির অভিযোগে ৫২১টি মামলা রুজু করিলেও, বিশেষত ২০২১ সালে মামলা করে মাত্র ৩৬৬টি, যাহা গত বৎসর আরও হ্রাস পাইয়া দাঁড়ায় ২৮৯-তে এবং এই বৎসর অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ২২৩। অথচ এই সময়ে দেশে দুর্নীতির বাড়বাড়ন্ত ঘটিয়াছে, যাহা বিক্ষিপ্তভাবে হইলেও সরকারের কোনো কোনো মন্ত্রী স্বীকার করিয়াছেন।

দুদকের বিরুদ্ধে অপর গুরুতর অভিযোগ হইল, গত এক যুগে বিশেষত ব্যাংক ও স্বাস্থ্য খাতে একাধিক কেলেংকারি ঘটিলেও প্রতিষ্ঠানটি কোনো রাঘববোয়ালকে জালে আটকাইতে পারে নাই। আমাদের স্মরণে আছে, এই সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ২০১৩ সালে বিদায়কালে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অনেকটা স্বীয় ব্যর্থতা ঢাকিবার প্রয়াসস্বরূপ দুদককে ‘নখদন্তহীন ব্যাঘ্র’ বলিয়াছিলেন। বাস্তবে দুদক আইনে প্রতিষ্ঠানটি যতটুকু স্বাধীনতার অধিকারী; শীর্ষ পদধারীদের সদিচ্ছা থাকিলে উহাই দুর্নীতিবাজদের বুকে কাঁপন ধরাইতে যথেষ্ট। মূলত ঢালাও দলীয়করণই অন্য প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের ন্যায় দুদকের এহেন দশার জন্য দায়ী।

দুর্নীতি শুধু মোট দেশজ উৎপাদনের ২ শতাংশই খাইয়া ফেলিতেছে না; টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত এবং দেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যও বৃদ্ধি করিয়া চলিতেছে। অতএব দুদকের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের প্রত্যাশা, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে উহার শূন্য সহিষ্ণুতার অঙ্গীকার পূরণে প্রতিষ্ঠানকে আপন গতিতে চলিতে দিবে এবং ইহার কর্তাব্যক্তিগণও মেরুদণ্ড ঋজু রাখিয়া দায়িত্ব পালন করিবেন।

আরও পড়ুন