ঢাকা সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

এমপিপুত্রের ধলেশ্বরী গ্রাস

এমপিপুত্রের ধলেশ্বরী গ্রাস

.

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:৩৪

ধলেশ্বরী নদীর তীরে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় জাহাজ নির্মাণক্ষেত্র তথা শিপইয়ার্ড স্থাপন করিতে গিয়া ফসলি জমি দখলের যেই অভিযোগ স্থানীয় থানা পর্যন্ত গড়াইয়াছে, উহাতে খালি চোখেই দ্বিগুণ অনিয়ম স্পষ্ট। প্রথমত, শিপইয়ার্ড স্থাপনের মধ্য দিয়া নদীটিতে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধির আয়োজন চলিতেছে। এই ক্ষেত্রে পরিবেশ সুরক্ষা সংক্রান্ত ছাড়পত্র লইবার বাধ্যবাধকতা কতখানি প্রতিপালিত হইয়াছে, আমাদের সন্দেহ রহিয়াছে। দ্বিতীয়ত, শিল্প স্থাপনে ভূমি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ফসলি জমি এড়াইয়া চলিবার নিয়মও আলোচ্য শিপইয়ার্ড স্পষ্টতই মানে নাই। আর্থিক বা সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক চাপে পড়িয়া কেহ যদি ফসলি জমি বিক্রয় করিতে বাধ্যও হয়, ক্রেতা উহার শ্রেণি পরিবর্তন করিয়া শিল্প স্থাপন করিতে পারিবে না। আলোচ্য গ্লোব শিপইয়ার্ড ঐ নিয়ম তো লঙ্ঘন করিয়াছেই; উপরন্তু কৃষিজমি দখল করিয়া অবকাঠামো নির্মাণ ও সম্প্রসারণ চালাইয়া যাইতেছে। ইহা নিছক অনিয়ম হইতে পারে না, বরং অমার্জনীয় অপরাধ।

গ্লোব শিপইয়ার্ডের বেপরোয়া মনোবৃত্তির কারণ ‘ধ্রুপদি’। কাগজ-কলমে ইহার স্বত্বাধিকারী ক্ষমতাসীন দলের একজন সংসদ সদস্যের পুত্র। বেনামে যে স্থাপনাটি সংসদ সদস্যেরই, উহা বুঝিতে বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। তিনি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দা বলিয়া মুন্সীগঞ্জের এই শিপইয়ার্ডের ভূমি ক্রয়, মাটি ভরাট ও নির্মাণ কাজের ভার দেওয়া হইয়াছে স্থানীয় কাউন্সিলরসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীকে। উত্তম ব্যবস্থা বটে! সেই দাপটে আড়াই একরের শিপইয়ার্ড ১০ একরে পৌঁছিয়া গিয়াছে; এখন সংযোগ সড়কের জন্য চলিতেছে জমি দখল। সাংবৎসরিক খাদ্য যেই জমি হইতে আসে, উহা রক্ষায় স্থানীয়রা প্রতিবাদ শুরু করিয়াছিল প্রথম হইতেই; কিন্তু কেহ কর্ণপাত করে নাই। বরং প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের হইয়াছে ক্ষমতার প্রভাব খাটাইয়া। শেষ পর্যন্ত স্থানীয়রাও থানায় অভিযোগ করিয়াছেন; কিন্তু পুলিশ স্পষ্টতই ধরি মাছ না ছুঁই পানি অবস্থান লইয়াছে। 

আমরা মনে করি, গ্লোব শিপইয়ার্ড ঘিরিয়া অত্যাচারী চক্রকে অবিলম্বে থামাইতে হইবে। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে নদীর প্রতিবেশ, ফসলি জমি তথা খাদ্য নিরাপত্তা জলাঞ্জলি দেওয়ার অবকাশ নাই। বড় কথা, প্রশ্নটি নাগরিক অধিকারের। আইনের চক্ষে সাংসদ ও সাধারণ মানুষের কোনো পার্থক্য থাকিতে পারে না। স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন যেহেতু কর্ণপাত করিতেছে না, আমরা উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ দেখিতে চাহি। শিপইয়ার্ডের জন্য যতখানি ভূমি অনুমোদন পাইয়াছে, উহার অধিক যেন সম্প্রসারিত না হয়– তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে। শুধু তাহাই নহে, শিপইয়ার্ডের পরিবেশগত সমীক্ষা ও সামাজিক সমীক্ষা যথার্থভাবে সম্পন্ন হইয়াছে কিনা, খতাইয়া দেখিতে হইবে। যাহাদের অবহেলায় পরিস্থিতি এতদূর গড়াইয়াছে, তাহাদেরও শাস্তি নিশ্চিত করিতে হইবে। অবহেলা ও ঔদাসীন্যে বুড়িগঙ্গা নদী দখল ও দূষণে প্রায় মারিয়া ফেলিবার পর ধলেশ্বরীরও অভিন্ন পরিণতির আশঙ্কা যে কোনো মূল্যে দূর করিতে হইবে।

আরও পড়ুন

×