ডায়রিয়া-নিউমোনিয়ায় দূষণের দায়

.
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৩ | ২৩:২১
চলতি বৎসর দেশে প্রায় ৬ লক্ষ ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগী ভর্তি হইবার যেই তথ্য সোমবার সমকালের এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হইয়াছে, উহা সরকারি হাসপাতালের চিত্র মাত্র। সহজেই অনুমিত, বেসরকারি হাসপাতালেও বিপুলসংখ্যক রোগী ভর্তি হইতেছেন। আর যাহারা ‘সামান্য’ জ্বর, কাশি, ঠান্ডা লইয়া হাসপাতালে যাইবার প্রয়োজন কিংবা ‘বিলাসিতা’ বোধ করিতেছেন না; করিলেও ভর্তি হইবার পরিবর্তে চিকিৎসা কিংবা ব্যবস্থাপত্র লইয়া গৃহে ফিরিতেছেন, তাহাদের যোগ করিলে এই সংখ্যা হইবে বহু গুণ। হেমন্ত কিংবা শীতকালে অখণ্ড বাংলায় যদিও এইরূপ ব্যাধির প্রকোপ বিরল নহে, এই মৌসুমে সংখ্যার বিপুল উল্লম্ফন উদ্বেগজনক বটে। অভিন্ন ভূপ্রকৃতির অংশ হইয়াও পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় বাংলাদেশে জ্বর-কাশি হইতে ডায়রিয়া-নিউমোনিয়া রোগীতে হাসপাতালগুলি উপচাইয়া পড়িবার দায় কেবল প্রকৃতির স্কন্ধে চাপাইলে চলিবে না।
আমরা আশঙ্কা করি, ব্যাধির এই বাড়াবাড়ির নেপথ্যে রোগ-জীবাণুর তুলনায় ব্যবস্থাপনাগত ঘাটতিই প্রবল। হেমন্ত ও শীত মৌসুমে প্রকৃতি শুষ্ক থাকিবার কারণে বায়ুদূষণের হার বৃদ্ধি পায় বটে; উপযুক্ত সুরক্ষা ব্যতীত যত্রতত্র নির্মাণকাজ, নির্বিচার বিসবুজীকরণ ও জলাভূমির অবনমনের কারণে উহা আরও বৃদ্ধি পাইয়া ব্যাধির কারণ হইয়া দাঁড়াইতেছে। এই বৎসরই কেবল বায়ুদূষণে ব্যাধির বাড়াবাড়ি ঘটিতেছে, এমন নহে। গত আগস্টে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদনে আমরা দেখিয়াছিলাম, দূষিত বায়ুতে নিঃশ্বাস লইবার কারণে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭ বৎসর হ্রাস পাইতেছে। গত বৎসর ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটিও স্মরণ করা যাইতে পারে। তথায় বলা হইয়াছিল, মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণ এই দেশে প্রতি বৎসর ৮০ সহস্রাধিক নাগরিকের অকালমৃত্যুর কারণ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী যথায় প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে সর্বোচ্চ ৫ মিলিগ্রাম দূষণ সহনীয় হইবার কথা; তথায় বাংলাদেশের বাতাসে দূষণকারী গ্যাসীয় কণার উপস্থিতি উহার ১৪ হইতে ১৬ গুণ।
যেই কারণে কেবল প্রতিকার নহে, প্রতিষেধক লইয়াও ভাবিতে হইবে। চিকিৎসাপত্র দিয়া তাৎক্ষণিক উপশম হয়তো হইবে; কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে পরিত্রাণ পাইতে হইলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে নজর দিতেই হইবে।