ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বদলি নহে, বদলের প্রশ্ন

বদলি নহে, বদলের প্রশ্ন

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২২:৫৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সম্মুখে রাখিয়া দেশের বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণকে বদলি করিবার যেই উদ্যোগ নির্বাচন কমিশন লইয়াছে, উহা নজিরবিহীন নহে। আমাদের স্মরণে রহিয়াছে, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে দায়িত্বরত তত্ত্বাবধায়ক সরকারও দেশের সকল জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ওসিগণকে বদলি করিয়াছিল। এইবার যদিও জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবার প্রেরিত পত্রে নির্বাচন কমিশন কেবল ইউএনও এবং ওসির বদলির কথা বলিয়াছে, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারগণের ব্যাপারেও প্রস্তাব যাইবার বিষয়টি সহজেই অনুমিত। প্রশ্ন হইতেছে, তপশিল ঘোষণার তিন সপ্তাহ পরে আসিয়া এইরূপ বদলি করিবার উপযোগিতা ও বাস্তবায়নযোগ্যতা কতখানি? স্বীকার্য, যেই সকল ইউএনও এক বৎসর এবং যেই সকল ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছয় মাসের অধিক বর্তমান কর্মস্থলে রহিয়াছেন, কেবল তাহাদেরই বদলি করা হইবে। কিন্তু সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাইতেছে, ৪৯৫ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ৬৩৬ থানার ওসিগণের দায়িত্ব পালনের মেয়াদ-সংবলিত তালিকা ‘চাহিবামাত্র প্রদান’ সম্ভব নহে। 

আমাদের প্রশ্ন, পর্যাপ্ত সময়ের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি ইউএনওগণকে এইভাবে বদলি মাঠ প্রশাসনে নির্বাচন-সংক্রান্ত বিশৃঙ্খলা তৈয়ারি করিবে কিনা? কারণ নির্বাচনকালে ইউএনওগণ সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করিয়া থাকেন বলিয়া নির্বাচনের কয়েক দিন পূর্বে নূতন এলাকায় গিয়া রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি বুঝিবার ক্ষেত্রে অন্তরায় হইতে পারে। যেই কারণে পূর্বের দুই দফায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ওসিগণকে বদলি করা হইলেও গুরুতর আশঙ্কা ব্যতীত ইউএনওগণকে একযোগে বদলি করা হয় নাই। চলতি নির্বাচনী মৌসুমে ইতোমধ্যে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপালন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হইয়াছে। এখন ইউএনওগণকে রদবদল করা হইলে নূতন করিয়া প্রজ্ঞাপন প্রয়োজন হইবে এবং নূতন এলাকায় গিয়া পরিস্থিতি বুঝিবার ঘাটতির ঝুঁকি তো রহিয়াছেই।

ইহা সত্য, কোনো এলাকায় দীর্ঘদিন থাকিলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী বা স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের সহিত সখ্য তৈয়ারি হয়। উহার ফলে নির্বাচনে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন এবং সকলের জন্য সমান ক্ষেত্র তৈয়ারি করিবার ক্ষেত্রে ব্যত্যয়ের আশঙ্কা রহিয়া যায়। কিন্তু উপযুক্ত পদক্ষেপটি লইবার ক্ষেত্রে এত বিলম্ব হইল কেন? এই ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের দোদুল্যমানতা স্পষ্ট। কারণ তপশিল ঘোষণার পর হইতেই ইসি বলিয়া আসিতেছিল, প্রশাসন ও পুলিশের মাঠপর্যায়ে বড় ধরনের রদবদল হইবে না। এমনকি গত ২২ নভেম্বর একজন নির্বাচন কমিশনার মাঠ প্রশাসনে রদবদল করিতে গিয়া বিশৃঙ্খলার দায় লইবার প্রশ্নও তুলিয়াছিলেন। আমরা মনে করি, প্রশ্নটি বদলির নহে, পরিস্থিতি বদলের। নিয়মরক্ষার জন্য বদলি করিবার পরিবর্তে যেইখানে প্রয়োজন সেইখানে বদলিসহ প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ লইতে হইবে নির্বাচন কমিশনকে। যেই কোনো মূল্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করিবার প্রশ্নে ইসির দোদুল্যমানতা নহে, আমরা সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত ও দৃঢ় পদক্ষেপই দেখিতে চাহি।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×