মডেল ফার্মেসির দুঃখজনক বাস্তবতা
সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২৩:০১
মানসম্পন্ন ঔষধ সরবরাহ নিশ্চিত করিতে ২০১৭ সালে দেশে মডেল ফার্মেসি প্রবর্তনের সরকারি উদ্যোগটি প্রায় সর্বমহলে প্রশংসিত হইয়াছিল। কারণ বলা হইয়াছিল, এই সকল ফার্মেসিতে ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ, নিম্নমানের ঔষধ না রাখা এবং সঠিক তাপমাত্রায় তাহা সংরক্ষণ এবং প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্ট নিয়োগের শর্তসমূহের প্রতিপালন নিশ্চিত করা হইবে। কিন্তু বহু গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সমকাল যাহা জানাইয়াছে, তাহাতে বাস্তবতা অনেকাংশেই ভিন্ন রকম বলিয়া মনে হইতেছে। অন্য অনেক ফার্মেসির ন্যায় মডেল ফার্মেসিগুলিতেও ইদানীং মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রয় হইতেছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কল সেন্টারে গত তিন মাসে মেয়াদোত্তীর্ণ, বাড়তি মূল্য এবং নিম্নমানের ঔষধ-সংক্রান্ত ৫১৩টি অভিযোগ জমা হইয়াছে, যেইগুলির একটি বড় অংশ রাজধানীর বিভিন্ন মডেল ফার্মেসির বিরুদ্ধে। অধিদপ্তরের এক সহকারী পরিচালকও বলিয়াছেন, গত মাসে তিনি মডেল ফার্মেসিসহ রাজধানীর শতাধিক ফার্মেসিতে অভিযান চালাইয়াছেন। এমনও অভিজ্ঞতা আছে, একটি ফার্মেসিতে প্রবেশের পর ঔষধ রাখিবার বাক্সে হাত দেওয়ামাত্রই মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ পাইয়াছেন। কিন্তু ইহা লইয়া সংশ্লিষ্ট ফার্মেসির লোকদের কোনো মাথাব্যথা দেখা যায় নাই। বিষয়টি নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলিয়াছেন, মেয়াদ শেষ হইলে ঔষধের গুণগত মান নষ্ট হইয়া যায়, যাহা সেবনে রোগীর ভয়াবহ ক্ষতি হইতে পারে। এমনকি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াস্বরূপ মৃত্যু পর্যন্ত ঘটিতে পারে। এতৎসত্ত্বেও, কি মডেল কি সাধারণ ফার্মেসি– সর্বত্র প্রকাশ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রয় হওয়া প্রথমত নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তদারকির ঘাটতিই প্রমাণ করে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র নুরুল আলম বলিয়াছেন, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধের বিরুদ্ধে তাহারা কঠোর অবস্থানে আছেন এবং তাহাদের একটি টিম সর্বদাই বাজার তদারক করিতেছে। কিন্তু এত বড় রাজধানীতে হাজার হাজার ফার্মেসির তদারকি কেবল একটি টিমের পক্ষে কী করিয়া সম্ভব?
আমাদের প্রত্যাশা, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টির প্রতি সরকারের নীতিনির্ধারকরা নজর দিবেন। প্রয়োজনে জনবল ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করিয়া ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে উল্লিখিত দায়িত্ব পালনে বাধ্য করিতে হইবে।