স্লুইসগেট কেন গলার কাঁটা
প্রতীকী ছবি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০২:৫৯
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় ২০১৭-২০ সালে কচা ও পোনা নদীর সহিত সংযুক্ত খালসমূহে নির্মিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৩টি স্লুইসগেট ইতোমধ্যে কৃষকের ‘কণ্ঠকণ্টক’ তথা গলার কাঁটা হইয়া দাঁড়াইয়াছে বলিয়া বুধবার জানাইয়াছে সমকাল।
মূলত অপরিকল্পিত নির্মাণ এবং যথাযথ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বর্ষায় বন্যা, জলোচ্ছ্বাস এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রাপ্তির লক্ষ্যে নির্মিত এই সকল স্লুইসগেট কোনো কার্যকর ফল দিতেছে না। বরং সুফলের পরিবর্তে কুফলই মিলিতেছে অধিক। প্রথমত, উক্ত এলাকায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকটই এখন বাস্তবতা; দ্বিতীয়ত, প্রয়োজনীয় গাইডওয়াল না থাকায় কোথাও কোথাও ভাঙনের কারণে জমি চলিয়া গিয়াছে নদীতে; তৃতীয়ত, স্লুইসগেটের পকেট ছোট ও অপর্যাপ্ত হওয়ায় অনেক খাল ভরাট হইয়া গিয়াছে। নজরদারির অভাবে ঐ জমি চলিয়া গিয়াছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে।
জলাবদ্ধতা কিংবা পানি সংকটের কারণে চাষবাসের ক্ষতি হইলে শুধু কৃষক নহে, সংশ্লিষ্ট এলাকার সকলকেই দুর্ভোগ পোহাইতে হয়। জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায়ও ইহার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে, অনেক পুরাতন পদ্ধতি হইলেও, খালের পানিপ্রবাহের যথাযথ ব্যবস্থাপনায় স্লুইসগেটের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সাধারণত স্লুইসগেট নির্মাণ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় পাউবো যেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, যেথায় কোনো পর্যায়েই বিশেষত স্থানীয় জনসাধারণের কোনো অংশগ্রহণ থাকে না। উহাতে এহেন প্রকল্পের কার্যকারিতা অনেকাংশে হ্রাস পায়। উল্লেখ্য, এই মুহূর্তে স্লুইসগেটের যন্ত্রণা শুধু ভাণ্ডারিয়াবাসী নহে, দেশের আরও বহু এলাকার মানুষকে ভোগ করিতে হইতেছে। সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত সংবাদ প্রায়ই ছাপা হয়।
অতএব আমাদের প্রস্তাব, শুধু ভাণ্ডারিয়া নহে, অন্যত্রও যেই সকল স্লুইসগেট অচল; দ্রুত সেগুলি সংস্কার এবং স্থানীয় মানুষকে যুক্ত করিয়া যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা হউক। একই সঙ্গে বেদখল খালসমূহ উদ্ধার এবং সংশ্লিষ্ট সকল খালে পর্যাপ্ত পানিপ্রবাহের ব্যবস্থা করাও জরুরি। সর্বোপরি, যাহাদের অবহেলায় জনগণের কষ্টার্জিত অর্থে নির্মিত স্লুইসগেটসমূহ উপকারভোগীদের জন্য হিতে বিপরীত হইল, তাহাদের কঠোর জবাবদিহির আওতায় আনিতে হইবে।