অকালবৃষ্টিতে সবজিচাষিদের বিপদ
.
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২২:৫৭
ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’ বাংলাদেশের উপকূল হইতে সরিয়া ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে আগাইতেছে ঠিকই, কিন্তু রাখিয়া যাইতেছে শঙ্কার আভাস। বাংলাদেশের উপর মিগজাউমের প্রতাপ পড়িতে না পারিলেও বৃহস্পতিবার ভোর রাত হইতে টানা বৃষ্টি ঝরিয়াছে। শীতকালীন সবজি ও রবিশস্যের জন্য এই বৃষ্টির প্রভাব ক্ষতিকারক হইতে বাধ্য। প্রথমত, শীতকালীন সবজি এই সময়েই ক্ষেত হইতে উঠানো হয়। বিশেষ করিয়া আলুচাষিদের জন্য এই বৃষ্টি দুশ্চিন্তার কারণ হইয়া উঠিয়াছে। প্রবাদ বলে, ‘যদি বর্ষে আগনে, রাজা যায় মাগনে’। আধুনিক অর্থনীতি সাবেকি কালের মতো ভূমির খাজনার উপর দাঁড়াইয়া নাই। অতীতে অগ্রহায়ণ মাসের বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হইলে কৃষকেরা রাজাকে খাজনা দিতে পারিত না; ফলত রাজাকেও ঋণ করিতে হইত। আজকাল সেই অবস্থা না থাকিলেও, খাদ্যপণ্যের এই দুর্মূল্যের দিনে আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচসহ শীতকালীন অনেক সবজি ও শস্যের যদি ক্ষতি হয়, তাহা হইলে সরকারকে বিদেশ হইতে সেইসব আমদানি করিয়া বাজার স্থিতিশীল রাখিতে হইবে। ইতোমধ্যে ডলার রিজার্ভের যে দুরবস্থা, তাহাতে বিদেশ হইতে ঋণ ভিন্ন আমদানি চালাইয়া যাওয়ার উপায় নাই। ফলে প্রবাদকথিত আশঙ্কাই সত্য হইয়া উঠিতে পারে যে, ‘যদি বর্ষে আগনে, রাজা যায় মাগনে’।
ফলে বরাবরের মতো, বৃষ্টিপাত শেষ হইবামাত্র সরকারের কৃষি বিভাগকে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাপ করিয়া খাদ্য ও কৃষি উভয় মন্ত্রণালয়কেই অবহিত করিতে হইবে। স্থানীয় প্রশাসনের উচিত হইবে ফসলের ক্ষতি যথাসম্ভব কমাইয়া আনার পদক্ষেপ লওয়া। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পাশে দাঁড়াইবার দায়িত্বও কোনোভাবেই খাটো করিয়া দেখা যাইবে না। কেননা, কৃষক যদি পরের ফসল বুনিবার পুঁজিপাট্টা হারাইয়া ফেলে, তাহা হইলে পরের মৌসুমেও খাদ্য লইয়া দুশ্চিন্তা দ্বিগুণ হইবার আশঙ্কা।
দেশে নির্বাচন নিয়া ডামাডোলের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিদ্যমান। এই অবস্থায় সরকার প্রশাসন নির্বাচন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা লইয়া ব্যতিব্যস্ত থাকিবে। তদুপরি, এই সময়েও স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কৃষি ও খাদ্য বিভাগ তো বটেই, জেলা ও স্থানীয় প্রশাসনকে কৃষি পরিস্থিতি নিয়া রুটিনমাফিকের চাইতেও বেশি দায়িত্বশীল হইতে হইবে।