ঢাকা শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

সংরক্ষিত বনেও বালুখেকোর থাবা

সংরক্ষিত বনেও বালুখেকোর থাবা

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১১:১১ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১২:১১

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার লম্বাশিয়া পাহাড়ি এলাকায় বালুখেকোদের দৌরাত্ম্য লইয়া রবিবার সমকালে এক উদ্বেগজনক সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে। প্রতিবেদনমতে, চুনতি সংরক্ষিত বনের অংশ এ পাহাড়গুলি পাঁচ বৎসর পূর্বেও ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। কিন্তু নির্বিচারে বনের ছড়া হইতে বালু উত্তোলনের কারণে ঐ সৌন্দর্য বর্তমানে অনেকাংশেই লুপ্ত।

সমকাল প্রতিনিধির সরেজমিন পরিদর্শনেও প্রমাণ মিলিয়াছে, লম্বাশিয়া পাহাড়-সংলগ্ন প্রবহমান সাতগরিয়া ছড়ায় একসঙ্গে বহু স্থানে শ্যালোমেশিন স্থাপন করিয়া বালু উত্তোলন চলিতেছে। কোথাও কোথাও পাহাড়ের অংশও কাটিয়া ফেলা হইয়াছে। এই সকল অবৈধ কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ বনের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় পাহাড় ধসিয়া পড়ার চিহ্ন স্পষ্ট। স্থানীয় বাসিন্দাগণের মতে, পাঁচ বৎসর পূর্বে ঘন জঙ্গলে আকীর্ণ এলাকায় নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বিচরণ ছিল। চুনতি অভয়ারণ্য এশীয় হস্তীর প্রাকৃতিক প্রজননকেন্দ্র হওয়ায় এখানে বন্যহস্তীর দলও ছিল দৃশ্যমান। কিন্তু বর্তমানে তাহা সকলই নিছক গল্পে পরিণত হইয়াছে।

প্রসঙ্গত, গত ৬ আগস্ট সমকালে এতদ্‌বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তখন স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগ অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু পদক্ষেপটি ছিল নিতান্তই সাময়িক। ফলে পুনরায় শুরু হইয়াছে সেই সর্বনাশা কার্যক্রম। দেশের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটা এবং নদী-খাল-ছড়া হইতে অবৈধ বালু উত্তোলন দীর্ঘদিন যাবৎ একটি জাতীয় উদ্বেগের বিষয় হইয়া আছে। সচেতন মহলের বিক্ষোভ-প্রতিবাদ, এমনকি উচ্চ আদালতের নির্দেশও পরিবেশ-প্রতিবেশ বিধ্বংসী এই কর্মকাণ্ডকে নিবৃত্ত করিতে পারিতেছে না।

বালুখেকোরা আর্থিক তো বটেই, রাজনৈতিকভাবেও অনেক শক্তিশালী। সম্ভবত এ কারণেই প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উহাদের সমঝিয়া চলেন। উপরন্তু উভয় পক্ষের মধ্যে কোনো অশুভ আঁতাতও যে এমন দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির জন্য দায়ী নহে– উহা অকপটে বলা যায় না। তবে দেশটাকে বাসযোগ্য রাখিতে হইলে বালুখেকোদের থামাইতেই হইবে। তজ্জন্য পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ধারাবাহিকভাবে সক্রিয়তা এবং সচেতন মানুষদেরও সোচ্চার থাকিতে হইবে।

আরও পড়ুন

×